ঝিনাইদহ-৪ আসনে বিএনপি জোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাওয়া গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বিএনপিতে যোগ দেওয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে ওই আসনের বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে। তারা বলছেন, আদর্শ বিবর্জিত হয়ে নিজস্ব স্বার্থসিদ্ধিই তাঁর মূল লক্ষ্য। আর গণঅধিকার পরিষদের জেলার নেতাকর্মীরা বলছেন, তাঁর (রাশেদ খান) বিএনপিতে যোগদান একটি কৌশল। ভোটের পর হয়তো আবার গণঅধিকারেই তিনি ফিরে আসবেন।
জানা যায়, বুধবার দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে ঝিনাইদহ-৪ আসনে (কালীগঞ্জ উপজেলা ও সদরের চার ইউনিয়ন) জোটের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন। দলীয় প্রার্থী বাদ দিয়ে অন্য দলের একজনকে প্রার্থী করায় এরপর থেকে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মী ও মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।
এরপর থেকেই বিক্ষোভ শুরু হয়। এই আসনের তাঁর প্রার্থিতা বাতিল করে স্থানীয় বিএনপির কোনো একজনকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য বিক্ষোভ, প্রতিবাদ সমাবেশ করতে থাকেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। এর জেরে শুক্রবারও ওই আসনের দুইজন মনোনয়ন প্রত্যাশী ও তাদের সমর্থকরা কাফনের কাপড় পরে তাঁর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য একজোট হয়ে বিক্ষোভ ও গণপদত্যাগের ঘোষণা দেন। এমন অবস্থায় শনিবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের দলীয় কার্যালয়ে দলের মহাসচিবের হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে বিএনপিতে যোগ দেন রাশেদ খান।
এ বিষয়ে জানতে বিকেল তিনটার দিকে রাশেদ খানের মোবাইলে ফোন দেওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে এখন আর কোনো মন্তব্য করতে চাই না। এলাকায় ফিরে কথা বলবো। আর যা বলার তা ঢাকাতে বলেছি সাংবাদিকদের।’
এ বিষয়ে গণঅধিকার পরিষদের ঝিনাইদহ জেলার সাধারণ সম্পাদক ইকবাল জাহিদ রাজন বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্তেই রাশেদ খান বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। তিনি আবার যথা সময়ে অবশ্যই গণঅধিকারে ফিরবেন। নির্বাচনী কৌশল হওয়ার কারণে তিনি বিএনপিতে যোগ দিলেও আমরা তাঁর পক্ষে নির্বাচনে কাজ করবো। রাশেদ খান আবার ব্যাক করবেন বা কি করবেন এটাও দলীয় সিদ্ধান্তে হবে।’
গণঅধিকার পরিষদের ঝিনাইদহ জেলা সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ৫ আগস্টের পর উপদেষ্টা পরিষদের দায়িত্ব ছিল নুরুল হক নূর ও রাশেদ খান এবং গণঅধিকার পরিষদের নতুন প্রজন্ম রাজনীতিতে যে প্রেক্ষাপট রচনা করেছিল সেই ত্যাগী নেতাদের সংসদে নেতৃত্বের বিষয় সহজতর করা। কিন্তু তাঁরা এটা অন্যান্য বড় যে দল সেই দলগুলোর দ্বারা পক্ষপাত হয়ে এই পথটাকে কঠিন করেছে। আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) জারি করে আজকের এ কৌশল করেছে কুচক্রী মহল আমি বলবো। আরপিও’র ফাঁদে পড়ে রাশেদকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে, রাষ্ট্র বাধ্য করেছে। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এখন বিএনপিতে যুক্ত হয়ে সংসদে তাঁর বিপ্লবী চেতনা, শহীদদের বক্তব্য তুলে ধরবেন।’
গণঅধিকার ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দিয়ে দলকে অভিভাবক শূন্য করলেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘রাশেদ খান দেশের জন্য ওই জায়গায় গেছেন। রাশেদ খান এই মূহূর্তে বিএনপি আমরা গণঅধিকারে। আমরা সাবেক সাধারণ সম্পাদককে সহযোগিতা করছি না, আমরা সহযোগিতা করছি বিএনপির সাথে সমঝোতার দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে।’
রাশেদ খানের বিএনপিতে যোগদানের বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হামিদুল ইসলাম হামিদ ফোনে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করবো না। দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে মিটিং ডেকেছি। মিটিং শেষেই বাকি কথা হবে।’
রাশেদ খান গণঅধিকার ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দিয়ে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবেন- বিষয়টি কীভাবে দেখছেন প্রশ্ন করা হলে ঝিনাইদহ-৪ আসনের বিএনপির দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ও কেন্দ্রীয় সেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ বলেন, গণঅধিকার থেকে নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারবেন না। এ জন্য আদর্শ বিবর্জিত হয়ে স্বার্থসিদ্ধির জন্য তিনি বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন।