Image description

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের লক্ষ্যে বড় দলগুলোর সঙ্গে জোটবদ্ধ হচ্ছে ছোট রাজনৈতিক দলগুলো। সংসদ সদস্য হতে কোন কোন রাজনীতিক নিজ দল থেকে পদত্যাগ বা দল বিলুপ্ত করে বড় দলে যোগও দিয়েছেন। দেশের অন্যতম বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ইতোমধ্যে ৮টি আসনে সমমনা ও শরিকদের সঙ্গে সমঝোতা করেছে। সর্বশেষ শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) নিজ দল থেকে পদত্যাগ করে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফেরার আগে গেল সপ্তাহে আসন সমঝোতা নিয়ে গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সেখানে দলটির সভাপতি নুরুল হক নুর ও সধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁনকে দুইটি আসনে ছাড় দিতে সম্মত হয় বিএনপি। বৈঠকে বিষয়টি মেনে নিলেও পরবর্তীতে নেতাকর্মীদের চাপের মুখে পড়েন গণঅধিকার পরিষদের শীর্ষ নেতৃত্ব। পরে জেলা ও বিভাগীয় নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন না করার ঘোষণা দেয় গণঅধিকার পরিষদ। কিন্তু একদিন পরেই সেই সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসে দলটি। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) দল থেকে পদত্যাগ করে বিএনপিতে যোগ দেন রাশেদ খাঁন।

গণঅধিকার পরিষদের এই নেতাকে ঝিনাইদহ-৪ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী করেছে বিএনপি। যদিও রাশেদ এতদিন ঝিনাইদহ-২ আসনে নির্বাচনের জন্য গণসংযোগ চালিয়েছেন। শেষ মুহূর্তে এসে তাকে ঝিনাইদহ-৪ আসনে মনোনয়ন দেয়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। এই আসনের বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা ও বিএনপি কর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, প্রথমত, যাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তিনি বিএনপির কেউ না। আমরা এই আসনে বিগত আওয়ামী সরকারের সময়ে অনেক অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়েছি। কঠিন মুহূর্তে দলের হাল ধরেছেন স্থানীয় নেতারা। কিন্তু এখন নির্বাচনের সময় অন্য দলের নেতাকর্মীদের এনে বসিয়ে দিলে সেটা আমাদের পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব না। দ্বিতীয়ত, তিনি এই আসনের বাসিন্দাই না, সেই হিসেবে উনি আমাদের ভালোমন্দ কীভাবে বুঝবেন?

জনগণের দাবি আমি নির্বাচন করি। তাদের চাওয়াকে সম্মান দিতেই আমি নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জনগণের অভিমত, যে নেতা এমপি হওয়ার জন্য নিজের দল, নীতি আদর্শ বিসর্জন দিয়ে অন্য দলে যোগ দিতে পারেন; তিনি মানুষের জন্য কী করবেন? দেখা যাবে নির্বাচনে জিতলে উনি শহরে বা ঢাকায় চলে যাবেন, জনগণের সেবা করবেন কীভাবে? -সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক।

ঝিনাইদহ-৪ আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন ছাত্রদলের সাবেক নেতা ও বর্তমান স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ। তিনি দীর্ঘদিনযাবত বিএনপিকে সংগঠিত করতে কাজ করে যাচ্ছেন। বিগত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী শাসনের সময় একাধিকবার জেলজুলুম, নির্যাতন সহ্য করে স্থানীয় নেতাকর্মীদের ধরে করেছেন। তাকে মনোনয়ন না দিয়ে গণঅধিকার পরিষদের রাশেদ খাঁনকে দলের প্রার্থী করার বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। তাদের বক্তব্য, নিজের দলের যোগ্য এবং ত্যাগী প্রার্থীকে ধানের শীষ না দিয়ে 'ভাড়াটে' প্রার্থীকে মেনে নেবে না এলাকাবাসী।

ইতোমধ্যে দল মনোনয়ন না দিলেও নির্বাচনে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন সাইফুল ইসলাম ফিরোজ। তিনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, জনগণ ক্ষুব্ধ, নেতাকর্মীরা হতাশ। আমরা জনগণের জন্য রাজনীতি করি। জনগণের দাবি আমি নির্বাচন করি। তাদের চাওয়াকে সম্মান দিতেই আমি নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি বলেন, জনগণের অভিমত, যে নেতা এমপি হওয়ার জন্য নিজের দল, নীতি আদর্শ বিসর্জন দিয়ে অন্য দলে যোগ দিতে পারেন; তিনি মানুষের জন্য কী করবেন? দেখা যাবে নির্বাচনে জিতলে উনি শহরে বা ঢাকায় চলে যাবেন, জনগণের সেবা করবেন কীভাবে?

 

স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র এই নেতার বিপরীতে লড়ে ঝিনাইদহ-৪ আসনে ধানের শীষকে জিতিয়ে আনাই হবে রাশেদ খাঁনের বড় চ্যালেঞ্জ।

 

একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের পটুয়াখালী-৩ আসনেও। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক ছাত্রদলনেতা হাসান মামুন ছিলেন ধানের শীষের দাবিদার। কিন্তু জোট সমঝোতার জন্য ছাড় দেয়া হয়েছে নুরকে। সে হিসেবে বিএনপি কারো মনোনয়ন না দিলেও নির্বাচনে লড়তে পারেন মামুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি এই আসনে নির্বাচন করলে, তার বিপরীতে জিতে আসা নুরের জন্য খুব একটা সহজ হবে না।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন জিতে সংসদে বিএনপির পক্ষে ঝড় তোলেন দলটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। পাশপাশি মিডিয়াতেও বিভিন্ন সময়ে দলের পক্ষে কথা বলে জনপ্রিয়তা পান এই নেত্রী। সে হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে ধানের শীষের প্রত্যাশী ছিলেন বিএনপির এই নেত্রী। তাকে বাদ দিয়ে শরিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের জন্য ছেড়ে দিয়েছে বিএনপি। এই আসনে লড়বেন দলটির সহসভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব।

এমন সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানা। ইতোমধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য তার পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার বিষয়টি আগেই বিএনপির হাইকমান্ডকে জানান হয়েছিল বলে সম্প্রতি জানিয়েছেন ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। তাই এই আসন রুমিন ফারহানাকে হারিয়ে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম সহসভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিবের জয়ের পথটা বেশ কঠিন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।