দল মনোনীত প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ করে চট্টগ্রামের ১৪টি আসনের মধ্যে ১০টিতেই মনোনয়নপত্র নিয়েছেন হেভিওয়েট অন্য প্রার্থীরা। মনোনয়ন চেয়েও দলের ইতিবাচক সাড়া পাননি তারা কেউই। এর মধ্যে আছেন বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরী, এস এম ফজলুল হক, মো. আবুল হাশেম বক্কর, শাকিলা ফারজানা ও সামছুল আলম। শেষ পর্যন্ত তারা মাঠে থাকলে চট্টগ্রামে ভোটের হিসাবে আসবে নাটকীয় পরিবর্তন। কারণ, জেলার ১৬টি আসনের কোথাও দল মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি জামায়াতের মনোনয়নবঞ্চিত অন্য কোনো প্রভাবশালী প্রার্থী।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে পারবেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। সেই হিসাবে আর সময় আছে মাত্র চার দিন। কিন্তু চট্টগ্রামের ১৪টি আসনের মধ্যে দুটিতে এখনও কোনো প্রার্থীই চূড়ান্ত করতে পারেনি বিএনপি। এর একটি চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) ও চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা)।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) মাহবুবের রহমান বলেন, বিএনপি অনেক বড় দল। তাই মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যাও বেশি। তবে শেষ পর্যন্ত দলের সিদ্ধান্তই মেনে নিতে হবে সবাইকে।
মনোনয়ন নিয়ে বিভাজন
চট্টগ্রামের একাধিক সংসদীয় আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পরও মনোনয়নবঞ্চিতদের চ্যালেঞ্জে বিএনপিতে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এতে ভোটের মাঠে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো।
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে গত ৩ নভেম্বর বিএনপি উত্তর জেলা শাখার সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী সালাউদ্দিনকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়।
চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। তবে একই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এস এম ফজলুল হক এবং প্রয়াত বিএনপি নেতা সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে শাকিলা ফারজানা প্রকাশ্যে মাঠে রয়েছেন।
ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, বিএনপির অনুসারীরা আমার বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেছে। ভোটে এর জবাব দেবে মানুষ।
তবে মীর হেলাল বলেন, কারও বাড়িঘরে হামলার প্রয়োজন নেই। আমার প্রতি যে জনসমর্থন রয়েছে, তাতেই বড় ব্যবধানে বিজয়ী হবো। তাতে দ্বিমত পোষণ করে ফজলুল হক বলেন, ভালোবাসা দিয়েই ভোটারদের মন জয় করতে চাই।
চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি) আসনে নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানকে বিএনপির মহাসচিব দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করলেও একই আসন থেকে নগর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ সামছুল আলম মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আবু সুফিয়ান বলেন, বিএনপি অনেক বড় দল। এখানে মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা বেশি হওয়াটাই স্বাভাবিক।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই), চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি), চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ), চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান), চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া), চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা) এবং চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে দলীয় মনোনীত প্রার্থীর বাইরে একাধিক প্রভাবশালী নেতা মনোনয়ন নিয়েছেন।
দুই আসন নিয়ে এখনও সিদ্ধান্তহীনতা
চট্টগ্রামের দুটি সংসদীয় আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে এখনও সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে বিএনপি। চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা না হলেও নগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান এবং দলের আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপকমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু চৌধুরী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। ইসরাফিল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ছেলে। আমীর খসরু নিজে চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। তবে তিনি ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত টানা চারবার চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া আংশিক) আসনেও বিএনপির প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি। এ আসনে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মিজানুল হক চৌধুরী, আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দিন চৌধুরী এবং দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি শফিকুল ইসলাম মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।