Image description
 

মৌসুমের শুরুতে বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলার মাঠে আগাম আলু উঠতে শুরু করলেও কৃষকদের মুখে হাসি নেই। গত বছরের তুলনায় উৎপাদন খরচ বাড়লেও বাজারে আলুর দামে বড় ধরনের ধস নেমেছে। শ্রম ও বড় অংকের বিনিয়োগের বিপরীতে প্রত্যাশিত দাম না মেলায় লোকসানের শঙ্কায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন উত্তরবঙ্গের এই জনপদের আলু চাষিরা।

বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে বগুড়ার শিবগঞ্জ ও গাবতলীসহ বিভিন্ন উপজেলার মাঠে গিয়ে দেখা যায়, কাকডাকা ভোর থেকে আলু তোলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। মাঠেই চলছে বাছাই ও বস্তায় ভরার কাজ। তবে এই কর্মব্যস্ততার মাঝেও কৃষকদের কণ্ঠে ছিল হতাশা। কৃষকরা জানান, গত বছর আগাম আলু প্রতি মণ ২ হাজার থেকে ২,৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। অথচ চলতি বছর বাজারে নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা মণ দরে, যা কেজিপ্রতি মাত্র ১৫ থেকে ২০ টাকা।

চাষিদের অভিযোগ, চলতি মৌসুমে সার, বীজ, কীটনাশক, সেচ ও শ্রমিকের মজুরিসহ সবকিছুর দাম উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। শিবগঞ্জ উপজেলার কৃষক মো. অহেদুল ইসলাম বলেন, "গত বছর ভালো দাম পেয়েছিলাম বলে এবারও আশায় বুক বেঁধেছিলাম। কিন্তু এবার সবকিছুর দাম বাড়লেও আলুর দাম নেই। এই দামে আলু বিক্রি করলে পরিবার নিয়ে টিকে থাকাই কঠিন হবে।" পাইকার ও কৃষি বিভাগের মতে, বাজারে পুরনো আলুর বিপুল মজুদই এই দরপতনের প্রধান কারণ।

গাবতলীর পাইকার মো. আলেক মিয়া জানান, গত বছরের আলু এখনো বাজারে থাকায় এবং সারা বছর আলুর দাম কম থাকায় নতুন আলুর প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ কম। চাষের লক্ষ্যমাত্রা: গত বছর ৬০,৪৩৫ হেক্টর জমিতে চাষ হলেও এবার লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৫৫,৭৫০ হেক্টর করা হয়েছে। আগাম আলু প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম আলু চাষ হয়েছে। ফলন: হেক্টর প্রতি গড় উৎপাদন প্রায় ১৭ মেট্রিক টন।

বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান জানান, তারা কৃষকদের আলু চাষ কমিয়ে সরিষা বা অন্য লাভজনক ফসলে ঝুঁকতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে বাজারে পুরনো আলুর চাপ কমলে এবং সরকারি পর্যায়ে রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়া হলে কৃষকরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি। এদিকে সাধারণ কৃষকদের দাবি, সরকারি বাজার ব্যবস্থাপনা জোরদার করা, আধুনিক সংরক্ষণ সুবিধা বৃদ্ধি এবং দ্রুত আলু রপ্তানির ব্যবস্থা করা না হলে আগামীতে আলু চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন তারা।