Image description

লালমনিরহাটে থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা (ডিবি)পুলিশের পৃথক দুই দফা তল্লাশিতে ছেড়ে দেওয়া কুরিয়ার সার্ভিসের কাভার্ড ভ্যান থেকে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় পণ্য জব্দ করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

গতকাল বুধবার রাতে লালমনিরহাট শহরের স্টেশন রোড এলাকা থেকে জব্দ করা এসব পণ্যের মধ্যে ভারতীয়জিরা ও চাদর আছে বলে জানিয়েছে বিজিবি।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে লালমনিরহাট ১৫ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মেহেদী ইমাম এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এজেআর কুরিয়ার সার্ভিসের একটি কাভার্ড ভ্যান আটক করা হয়।

তল্লাশি চালিয়ে গাড়িটি থেকে ২ হাজার ৫১১ কেজি ভারতীয় জিরা ও ১৮০টি চাদর উদ্ধার করা হয়। 

ভারত থেকে আনা এসব পণ্য চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িতদের পরিচয় শনাক্তে তদন্ত চলছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানিয়েছে বিজিবি।

এর আগে, মঙ্গলবার রাতে কুড়িগ্রাম থেকে আসা এজেআর কুরিয়ার সার্ভিসের ওই কাভার্ড ভ্যানটি রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়কের লালমনিরহাটের বড়বাড়ী এলাকায় আটক করে লালমনিরহাট সদর থানা পুলিশ। 

এএসআই আক্তার হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল গাড়িটি তল্লাশি করে। তবে, গাড়িটি থানায় না নিয়ে শহরের আলোরূপা মোড় এলাকায় রাখা হয়। 

বুধবার রাত ৯টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশ অভিযান চালিয়ে গাড়িটি আবার আটক করে তল্লাশি চালায়। প্রায় দেড় ঘণ্টা তল্লাশির পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে গাড়িটি ছেড়ে দেওয়া হয়। 

এর কিছুক্ষণ পর শহরের স্টেশন রোড এলাকা থেকে বিজিবি গাড়িটি আটক করে এবং পরে সেখান থেকে ভারতীয় পণ্য উদ্ধার করে।

কুড়িগ্রামের একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই গাড়িতে ভারতীয় জিরা ও শাল চাদরের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ ভারতীয় কসমেটিকস সামগ্রী ছিল। তবে বিজিবির তল্লাশিতে শুধু জিরা ও শাল চাদরই পাওয়া গেছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী মারুফ হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ওই গাড়িতে আমার প্রায় এক লাখ টাকার কসমেটিকস সামগ্রী ছিল। আমার মতো আরও ৮–১০ জন ব্যবসায়ীর পণ্য ছিল। গাড়িটি আটক হওয়ার পর আমি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। তবে বড় ব্যবসায়ীরা যোগাযোগ করেছিলেন।'

মসলা ব্যবসায়ী তানভির হোসেন বলেন, 'আটক গাড়িতে আমার ভারতীয় জিরা ছিল। এগুলো আমি বিভিন্ন আমদানিকারকের কাছ থেকে কিনে বৈধভাবে ঢাকায় পাঠাচ্ছিলাম। তবে গাড়িতে থাকা কসমেটিকস কিংবা শাল চাদরের বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।'

এজেআর কুরিয়ার সার্ভিসের কুড়িগ্রাম জেলা শাখার ম্যানেজার উজ্জ্বলের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে লালমনিরহাট জেলা শাখার ম্যানেজার আব্দুর রাজ্জাক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের গাড়ি পুলিশ তল্লাশি করে ছেড়ে দিলেও পরে বিজিবি আটক করেছে। গাড়ি থেকে ভারতীয় পণ্য উদ্ধার করা হয়েছে। গাড়িটি ছাড়ানোর বিষয়ে আমরা বিজিবি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছি।'

লালমনিরহাট সদর থানার এএসআই আক্তার হোসেন বলেন, 'গাড়িটি আটকের পর থানায় এনে তল্লাশি করেছি। তবে তল্লাশি করে কোনো অবৈধ পণ্য পাইনি। ওসি স্যারের নির্দেশে প্রায় তিন ঘণ্টা পর গাড়িটি ছেড়ে দেওয়া হয়। গাড়িতে ভারতীয় জিরা, শাল চাদর কিংবা কসমেটিকস দেখিনি।'

তবে লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল মতিন বলেন, 'গাড়িটি থানায় আনা হয়নি। থানার বাইরে তল্লাশি করে অবৈধ কোনো পণ্য পাওয়া যায়নি—এমন তথ্য জানানো হলে গাড়িটি ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।'

ডিবি পুলিশের ওসি সাদ আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গাড়িটি আটক করে তল্লাশি চালানো হয়। তবে তল্লাশিতে কোনো অবৈধ পণ্য পাওয়া যায়নি। সে কারণেই গাড়িটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।'

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, 'বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'