Image description
 

অন্তর্বর্তী সরকারের ভেতরে একটি অদৃশ্য ক্ষমতার বলয় বা “প্যারালাল গভর্নমেন্ট” সক্রিয় রয়েছে বলে গুরুতর অভিযোগ করেছেন প্রবাসী অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের। তার অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছেন সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের এক প্রভাবশালী উপদেষ্টা, যাকে তিনি “সাদা চুলের উপদেষ্টা” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

মঙ্গলবার ‘পালস টু পলিটিক্স’ ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জুলকারনাইন সায়ের বলেন, এই সাদা চুলের উপদেষ্টা ও আরও একজন প্রভাবশালী উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনায় অঘোষিত প্রভাব বিস্তার করা হচ্ছে।

সায়ের বলেন, আমরা সবাই বলছি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কাজ করছেন না। হতে পারে তিনি ব্যর্থ হচ্ছেন। কিন্তু তার ওপরে যেভাবে খোদা বক্সকে সামনে আনা হয়েছে, সেটি বড় প্রশ্ন তৈরি করছে।
 

তার মতে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ঊর্ধ্বে আর কারও অবস্থান থাকার কথা নয়।

অথচ বাস্তবে খোদা বক্স নামের একজন ব্যক্তিকে সামনে এনে কার্যত স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ওপর একটি অতিরিক্ত স্তর তৈরি করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। খোদা বক্সকে কেন আনা হচ্ছে, তার দায়িত্ব কী—এসব বিষয়ে কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই, বলেন সায়ের।

তিনি দাবি করেন, সরকারের ভেতরে যে নতুন হায়ারার্কি বা স্তরবিন্যাস তৈরি হয়েছে, সেটি মূলত এই অদৃশ্য ক্ষমতার বলয়ের অংশ। যেসব ব্যক্তির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মহলে অবাধ প্রবেশাধিকার রয়েছে, তারাই নেপথ্যে থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব রাখছেন।

সাক্ষাৎকারে জুলকারনাইন সায়ের অবৈধ সীমান্ত পারাপার ও আন্তর্জাতিক যাতায়াতের একটি সংগঠিত নেটওয়ার্কের কথাও তুলে ধরেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের দিকে একজন ইউটিউবারকে বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ভারতের সীমান্ত দিয়ে পার করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তিনি থাইল্যান্ড হয়ে ফ্রান্সে পৌঁছান।

এই পুরো প্রক্রিয়ায় ভ্রমণ নথি ও পাসপোর্ট ব্যবস্থাপনায় গুরুতর অনিয়ম হয়েছে দাবি করে সায়ের বলেন, সরকারের ভেতরে থাকা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহায়তা ছাড়া এমন কার্যক্রম সম্ভব নয়।

তিনি আরও দাবি করেন, এই নেটওয়ার্কের লক্ষ্য দেশের রাষ্ট্রীয় চরিত্রে মৌলিক পরিবর্তন আনা। তাঁর মতে, সাম্প্রতিক কিছু নিরাপত্তা ভাবনা, নীতিগত সিদ্ধান্ত এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ধরন বাংলাদেশকে একটি চরমপন্থী আদর্শিক পথে ঠেলে দেওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে তিনি একটি বিতর্কিত বক্তব্যের কথাও উল্লেখ করেন। জুলকারনাইন সায়েরের দাবি অনুযায়ী, ‘সাদা চুলের উপদেষ্টা’ একসময় নেত্র নিউজের এডিটর ইন চিফ তাসনিম খলিলকে বলেছিলেন—বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ একমাত্র পথ হতে পারে ‘তালেবানাইজেশন’। সে সময় এই বক্তব্য অনেকের কাছেই অবিশ্বাস্য মনে হলেও সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ সেই আশঙ্কাকে নতুন করে সামনে এনেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

আঞ্চলিক ভূরাজনীতির প্রসঙ্গ টেনে জুলকারনাইন সায়ের বলেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে একতরফা রাজনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার ফলে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের সঙ্গে ওই দেশের একটি বড় দূরত্ব তৈরি হয়েছে।