Image description

আসছে ১২ই ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সারা দেশে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রধান থেকে শুরু করে তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে।  তবে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত না হওয়ায় জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতৃত্বধীন সমমনা ৮ দলের শীর্ষ নেতাদের প্রার্থিতা নিয়ে আছে নানা জল্পনা ও কৌতূহল।

আসন্ন নির্বাচনে ওয়ান বক্স পলিসিতে ঐক্যবদ্ধ এই ৮ দলের প্রধান কে কোন আসনে প্রার্থী হচ্ছেন এ নিয়ে আছে আলোচনা।

এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান কোথায় নির্বাচন করছেন, ইসলামী আন্দোলনের আমীর মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীম, (চরমোনাই পীর) বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মামুনুল হক, খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ কোন আসনে প্রার্থী হচ্ছেন, তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কারা  এ নিয়ে  বেশ কৌতূহল আছে সাধারণ মানুষের মনে।

সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক দফা বৈঠকের পর ৮ দলের লিয়াজোঁ কমিটি তাদের আসন সমঝোতার বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত করেছেন। এখন অপেক্ষা শীর্ষ নেতাদের অনুমোদন। ১/২ দিনের মধ্যে শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে ৮ দলের এক আসনে একক প্রার্থী তালিকা অনুমোদিত হবে। এরপর পরিষ্কার হবে দলীয় প্রধানদের নির্বাচনী আসনও।

এ ব্যাপারে ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন বলেন, লিয়াজোঁ কমিটির আলোচনায় সন্তোষজনক অগ্রগতি হয়েছে। আসন সমঝোতার বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত। শীর্ষ নেতাদের অনুমোদন পেলেই তা প্রকাশ করা হবে। তবে ৮ দলের লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, আসন সমঝোতার আলোচনা চলমান। শীর্ষ নেতাদের অনুমোদনক্রমে এ সপ্তাহের মধ্যে ৮ দলের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। 

৫ই আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের উদ্যোগে এক কাতারে আসে সমমনা আট দল। এই ৮ দলের নেতৃত্বে থাকা জামায়াতে ইসলামী আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণাসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছে। এ নির্বাচনে ঢাকা-১৫ আসন (মিরপুর) থেকে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিয়েছেন জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান। এর আগে ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও তিনি ঢাকা-১৫ আসনে ঐক্যফ্রন্ট থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন। জামায়াতে ইসলামীর আমীর শফিকুর রহমানের সঙ্গে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বিএনপি’র শফিকুল ইসলাম খান মিল্টন। শফিকুল মিল্টন ঢাকা মহানগরের যুবদল নেতা, যিনি বিএনপি’র সহযোগী এ সংগঠনের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন।

ইসলামী আন্দোলনের আমীর ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম এবারও নির্বাচনে অংশ নেবেন না। তবে তার ভাই দলটির সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বরিশাল-৫ (সদর) আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এর আগে ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি ওই আসন থেকে অংশ নেন। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে যে ৮টি ইসলামী দল জোটবদ্ধ হচ্ছে, তার মধ্যে চরমোনাই পীরের দল অন্যতম বড় দল। এ আসনে জামায়াত তাদের প্রার্থী মনোনয়ন দেবে না। এছাড়া সর্বশেষ মুফতি ফয়জুল করীম বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য মুফতি ফয়জুল করীম এলাকায় প্রচার চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন দলটির সহকারী মহাসচিব মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা মামুনুল হক এখনো  কোনো আসনে নির্বাচন করার বিষয়ে ঘোষণা দেননি। তবে দলের পক্ষ থেকে তাকে দু’টি আসনে প্রার্থী করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে দলটির মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ বলেন, আমাদের দলের পক্ষ থেকে মাওলানা মামুনুল হককে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে দু’টি আসনে প্রার্থী করতে চাই। বিষয়টি শিগগিরই চূড়ান্ত হবে বলে তিনি জানান। 

খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ নির্বাচন করবেন হবিগঞ্জ-২ আসন থেকে। এরই মধ্যে তিনি নির্বাচনী প্রচারসহ গণসংযোগ শুরু করেছেন। ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল কাদেরের নির্বাচনে অংশ নেয়ার সম্ভাবনা খুব কম। তবে দলটির নির্বাহী দায়িত্বশীল হিসেবে মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী দু’টি আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ এবং কুমিল্লা-২ আসনে নির্বাচন করতে আগ্রহী। এজন্য প্রাথমিক তৎপরতা চলছে বলে জানা যায়। খেলাফত আন্দোলনের আমীর মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী বটগাছ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবেন ঢাকা-২ আসন থেকে। এজন্য এলাকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ এবং ওলামায়ে কেরামের সঙ্গে বৈঠকসহ বিভিন্ন তৎপরতা শুরু করেছেন। বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আমীর সরওয়ার কামাল আজিজী নির্বাচনে অংশ নেবেন না। তবে দলটির মহাসচিব মুসা বিন ইজহার চট্টগ্রাম-১৬ আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। জাগপা’র সভাপতি ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান পঞ্চগড়-২ আসন থেকে নির্বাচন করবেন। তাসমিয়া শফিউল আলম প্রধানের মেয়ে। আর জাগপা’র মুখপাত্র রাশেদ প্রধান পঞ্চগড়-১ আসন থেকে নির্বাচন করবেন। সম্প্রতি সমমনা ৮ দলের সভা-সমাবেশে তার সরব উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়েছে।