Image description
 

সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য দূর করা এবং সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে গত জুলাই মাসে জাতীয় পে কমিশন গঠন করে সরকার। ছয় মাসের মধ্যে সুপারিশ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রেখে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলেও এখনো নবম পে স্কেল সংক্রান্ত কমিশনের চূড়ান্ত সুপারিশ জমা পড়েনি। এতে নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

 

প্রাথমিকভাবে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এই সরকারের মেয়াদেই নবম পে স্কেল কার্যকরের ইঙ্গিত দিলেও গত ৯ নভেম্বর তিনি জানান, সরকারি কর্মচারীদের নতুন পে স্কেল নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেবে পরবর্তী সরকার। এতে কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। পরে কর্মচারী নেতারা ৩০ নভেম্বরের মধ্যে কমিশনের সুপারিশ জমা দেওয়ার দাবি জানালেও তা পূরণ হয়নি।

কমিশন সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, অনলাইনে জমা দেওয়া মতামত ও সরকারি কর্মচারীদের প্রস্তাব বিশ্লেষণ করে গত ১৭ ডিসেম্বর সচিবালয়ে জাতীয় পে কমিশনের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে কমিশনের খসড়া সুপারিশ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং কিছু বিষয়ে সংশোধন আনা হয়। সুপারিশ চূড়ান্ত করার আগে আরও অন্তত তিনটি বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে কমিশনের সুপারিশ আগামী জানুয়ারির প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে জমা দেওয়া হতে পারে।

 

এদিকে নির্বাচন কমিশন আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ২০২৬ সালের ২২ জানুয়ারি থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হবে। ফলে জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে সুপারিশ জমা হলেও তা যাচাই-বাছাই করে নতুন পে স্কেল কার্যকর করার মতো পর্যাপ্ত সময় বর্তমান সরকারের হাতে থাকবে না। এ অবস্থায় এই সরকারের মেয়াদে নবম পে স্কেল বাস্তবায়নের সম্ভাবনা কম বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, পে স্কেল ঘোষণা করা সহজ কোনো বিষয় নয় এবং এর সঙ্গে বহু দিক জড়িত। স্বল্প সময়ের মধ্যে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। তবে বর্তমান সরকারের সময়ে নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর হবে কি না—সে বিষয়ে তিনি স্পষ্ট কিছু বলেননি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব নিলেও দ্রুত নতুন পে স্কেল বাস্তবায়ন সহজ হবে না। কারণ বর্তমান ও পরবর্তী উভয় সরকারকেই আর্থিক সংকট ও বাজেট ঘাটতির চাপ মোকাবিলা করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী বলেন, আর্থিক সক্ষমতার সীমাবদ্ধতার কারণে অন্তর্বর্তী সরকার নতুন পে স্কেল বাস্তবায়নের ঝুঁকি নিতে চাইছে না। নির্বাচিত সরকার এলেও প্রথমে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করাই বড় চ্যালেঞ্জ হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আইনুল ইসলাম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যয় ও ঋণের সুদের চাপ বিবেচনায় নিলে নতুন পে স্কেল কার্যকর করা কঠিন হয়ে পড়েছে। পরবর্তী সরকারের জন্যও বিষয়টি সহজ হবে না।

এদিকে সাম্প্রতিক আন্দোলন দমন ও সরকারি নানা সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপটে পে স্কেলের দাবিতে আন্দোলনরত কর্মচারী নেতারা আপাতত আলোচনা ও সংলাপের মাধ্যমে দাবি আদায়ের পথ বেছে নিয়েছেন। বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি জিয়াউল হক বলেন, সব দাবি আন্দোলনের মাধ্যমেই আদায় করতে হয় না; পে স্কেল নিয়ে আলোচনার মাধ্যমেই তারা অগ্রসর হতে চান।

বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদের সভাপতি ওয়ারেছ আলী জানান, চাকরির বিধিমালা ও শৃঙ্খলা মেনেই ভবিষ্যৎ কর্মসূচি দেওয়া হবে এবং বিধিবহির্ভূত কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে না।

সব মিলিয়ে, সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে নবম পে স্কেল নিয়ে প্রত্যাশা থাকলেও বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা দিন দিন বাড়ছে।

 

সূত্র: দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস