যশোর জেলার সীমান্ত এলাকায় অবস্তিত শার্শা বেনাপোল থানা। এই অঞ্চলে মানুষের বসবাসও অত্যান্ত ঘনবসতি। প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ এক সময় নির্ভরশীল ছিল ভারত এর উপর। কারণ, ভারত থেকে বিভিন্ন চোরাচালানী পণ্য এনে জীবিকা নির্বাহ করত। সহজ উপায়ে অর্থ উপার্জনের জন্য এই অঞ্চলের মানুষ ছেলে মেয়েদের শিক্ষা দিক্ষার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহী ছিলেন না। শিক্ষার অভাবে তারা ভাবত এ ভাবে হয়ত দিন চলে যাবে? কিন্তু কালের পরিক্রমায় আস্তে আস্তে ভারত সীমান্ত কঠোর এবং কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ায় চোরাচালানি পণ্য প্রায় শুন্যের কোটায়। তবে ভারত এদেশে কৌশলে কিছু চোরাচালানীর মাধ্যেমে পাঠাচ্ছে মাদক দ্রব্য।
এছাড়া এই সীমান্ত দিয়ে দেশের সিংহ ভাগ মানুষ পাসপোর্টের মাধ্যে যাতায়াত করত ভারতে। এছাড়া দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভীড় ও এই সীমান্ত ঘেষে। এরই সুবাদে বেনাপোল চেকপোস্টে গড়ে উঠে সহস্রাধিক বিভিন্ন নামের এন্টারপ্রাইজ । এরা তাদের পরিচিত পাসপোর্ট যাত্রীদের নিজ ঘরে বসিয়ে আপ্যায়ন শেষে ইমিগ্রেশন এর আনুষ্টানিকতার জন্য সকল কাজ কর্মের সহযোগিতা করে জীবিকা নির্বাহ করত।
এ পথে যাত্রী কমে যাওয়ায় অলস সময় পার করছে বেনাপোল চেকপোস্টে দায়িত্বরত ইমিগ্রেশন পুলিশ, কাস্টমস, ও বিজিবি সদস্যরা।
বিগত আওয়ামী সরকার বিদায় হওয়ার পর থেকে ভারত এর ভিসা জটিলতায় পড়ে বাংলাদেশ। ভারত ট্যুরিস্ট ভিসা বন্ধ করে দেয়। তাদের হাসপাতাল এর ব্যবসা এবং অন্যান্য ব্যবসার জন্য কিছু মেডিকেল ভিসা ও স্বল্প পরিমান বিজিনেস ভিসা দেয়। এতে করে মাথায় হাত পড়ে যে সমস্থ এন্টারপ্রাইজ পাসপোর্ট যাত্রীদের উপর নির্ভরশীল ছিল। ক্রমে ক্রমে বেকারত্ব বাড়তে থাকে।
ভারতে যাতায়াতকারী পাসপোর্টযাত্রীদের উপর নির্ভরশীল ছিল দেশের বিভিন্ন জেলার পরিবহন। প্রতিদিন ভারত গমন যাত্রীরা বিভিন্ন জেলা থেকে আসত এবং ভারত ঘুরে আবার ফিরে যেত নিজ জেলায়। বর্তমানে যাত্রী না থাকায় পরিবহন সেক্টর এর বড় একটি অংশ বেকার হয়ে পড়েছে। বেকার হয়ে পরিবহন শ্রমিকরা কাজ না পেয়ে মানবতার জীবন যাপন করছে। এছাড়া এসব যাত্রীদের উপর নির্ভরশীল ছিল এখানকার ইজিবাইক, রিকশা ভ্যান চালকরা। তারা ও যাত্রী না হওয়ায় অত্যান্ত কষ্টে দিনাতিপাত করছে বলে জানায়।
এছাড়া ভারত এর নাগরিকরা এ পথে প্রতিদিন ব্যবসায়িক ভিসায় আসত বাংলাদেশে। তারা বিভিন্ন পণ্য এনে বাংলাদেশে বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করে চলে যেত। সম্প্রতি কাস্টমস এদের ল্যাগেজ সুবিধা না দেওযায় তাদের পণ্য ডিএম করায় তারাও বাংলাদেশে প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে। ওইসব ভারতীয় যাত্রীদের নিকট থেকে যে সব পণ্য ক্রয় করে এদেশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়িরা চলত তারাও বেকার হয়ে পড়েছে। এছাড়া শুধু এখানকার দোকানদাররা নয় এর সাথে জড়িত ছিল বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ক্রেতারা। তারা বেনাপোল থেকে শাড়ি, থ্রি-পিচ,কম্বল, কসমেটিক্স সহ নানা ধরনের খাদ্য পণ্য ক্রয় করে নিজ এলাকায় গিয়ে বিক্রি করত। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভীড় জমাত যশোর, খুলনা, নওয়াপাড়া, পাবনা, বরিশাল, বাগেরহাট মাগুরা, ঝিনাইদাহ কুষ্টিয়া সহ বিভিন্ন জেলার নারী পুরুষ। এরা নির্ভরশীল ছিল বেনাপোল স্থল বন্দর দিয়ে যাতায়াত কারী পাসপোর্ট যাত্রীদের উপর।
ভারতে যাতায়াতকারী পাসপোর্ট যাত্রীদের উপর নির্ভরশীল ছিল শার্শা বেনাপোল এর লক্ষাধিক মানুষ সহ এখানে গড়ে উঠা আবাসিক হোটেল, খাদ্য দ্রব্য হোটেল রেস্তোরা। জড়িত আছে এখানকার কুশি শ্রমিকরা। এ পথে কোন যাত্রী পার হলে ওই যাত্রীর কাছে যদি একটি কম্বল থাকে তার পিছনে পিছনে ছুটতে থাকে বেকার অসহায় স্বামী পরিত্যাক্তা অথবা নদী ভাঙন,বন্যয় প্লাবিত বাড়ি ঘর ধ্বংস হয়ে যাওয়া নারীরা।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন ওসি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ইমিগ্রেশন রেকর্ড অনুযায়ী পাসপোর্ট যাত্রী আসা যাওয়া অনেক কমে গেছে। এর কারণ ভারত ভিসা হ্রাস করায়।
বেনাপোল গাজিপুর রুটের ফাইভ স্টার এর ম্যানেজার আসাদুজ্জামান আশা বলেন, ভারত এর ভিসা জটিলতার কারনে পরিবহন খাত ধ্বংস হতে চলেছে। বেকার হয়ে পড়েছে শত শত পরিবহন শ্রমিক।