Image description

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট—এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ আয়োজনের তফসিল আজ বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) ঘোষণা করা হচ্ছে। সন্ধ্যা ৬টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটের সূচি জানাবেন।

গতকাল বুধবার (১০ ডিসেম্বর) বিকেলে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ। এর আগে বিকেল চারটার দিকে সিইসির ভাষণ রেকর্ড করে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। সেই সরকারের ১৬ মাসের মাথায় এবার জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করছে ইসি।

শুরুতে বিএনপিসহ কয়েকটি দল গত বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দাবি তুললেও পরবর্তীতে এ সময়সূচি বহুবার পরিবর্তিত হয়। ৬ জুন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা জানান, ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। পরে ১৩ জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট আয়োজনের বিষয়ে সমঝোতা হয়।

পরবর্তীকালে সরকার জানিয়ে দেয়, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। একই দিনের গণভোট আয়োজনের ঘোষণাও আসে ১৩ নভেম্বর।

তফসিল ঘোষণার আগে ঐতিহ্য অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সিইসি ও নির্বাচন কমিশনাররা। বুধবার দুপুরে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে আলোচনায় কমিশন ভোটার তালিকা, প্রবাসী ভোট, রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন, ভোট গণনার পদ্ধতি, একই দিনে নির্বাচন–গণভোট আয়োজনের প্রস্তুতিসহ নানা দিক তুলে ধরে।

বঙ্গভবন ফেরার পর ইসি সচিব জানান—রাষ্ট্রপতি প্রস্তুতি সন্তোষজনক মনে করেছেন।

২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ছিল ব্যাপক বিতর্কিত। পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হয় ২১ নভেম্বর। তাদের নেতৃত্বে এবারই প্রথম জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

দুটি বৃহৎ আয়োজন একই দিনে হওয়ায় সময় ব্যবস্থাপনাকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে কমিশন। এজন্য ভোট গ্রহণের সময় এক ঘণ্টা বাড়িয়ে সকাল সাড়ে সাতটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি কেন্দ্রগুলোতে গোপন কক্ষের সংখ্যা বাড়ানো হবে।

নির্বাচনী নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সরকার জানিয়ে দিয়েছে—তফসিল ঘোষণার পর থেকেই সশস্ত্র বাহিনীসহ সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখতে মাঠে থাকবে। এবার প্রায় ৯ লাখ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন—যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

এ ছাড়া দেড় লাখ পুলিশ সদস্য ইতিমধ্যে বিশেষ নির্বাচনী প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছেন।

৪ সেপ্টেম্বর ঘোষিত নতুন সীমানা অনুযায়ী বাগেরহাটে একটি আসন কমিয়ে তিনটি করা হয়েছিল। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রিট হলে হাইকোর্ট আগের মতো চারটি আসন পুনর্বহালের নির্দেশ দেয়। আপিল বিভাগের আদেশে গতকাল সেই রায় বহাল হয়।

ফলে বাগেরহাট-১ (৯৫), বাগেরহাট-২ (৯৬), বাগেরহাট-৩ (৯৭) ও বাগেরহাট-৪ (৯৮) আসন আগের মতোই থাকবে।

তবে ইসি জানিয়েছে—আদালতের রায়ের কপি এখনো হাতে না আসায় আপাতত ৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত সীমানা অনুযায়ীই তফসিল ঘোষণা করা হবে। রায়ের কপি পাওয়ার পর কমিশন প্রয়োজনীয় সংশোধন করবে।