Image description

একদিকে বাড়ছে ক্যান্সার রোগী, অন্যদিকে নড়বড়ে চিকিৎসা অবকাঠামো। এক কোটি ১১ লাখ মানুষের জন্য সিলেটে আছে মাত্র একটি রেডিওথেরাপি মেশিন, যা চার মাস অচল থাকার পর আবারও ঝুঁকিতে। জনবল সংকটসহ নানা সমস্যায় আটকে আছে ক্যান্সার চিকিৎসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ রেডিওথেরাপি।

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগে সরেজমিনে গিয়ে এবং চিকিৎসাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত থেরাপি দেওয়া হলেও বিপুলসংখ্যক রোগীর তুলনায় যন্ত্রপাতি ও জনবল খুবই সীমিত। ফলে সামগ্রিকভাবে ক্যান্সার চিকিৎসা ব্যবস্থা নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। এ জন্য দ্রুত নবনির্মিত ‘কম্প্রিহেনসিভ ক্যান্সার সেন্টার’ চালুর দাবি উঠেছে।

মাথা, গলা ও নারীদের ক্যান্সার বেশি : হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মাথা ও গলার ক্যান্সার—বিশেষ করে মুখগহ্বর, গলা, নাক ও থাইরয়েডে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি।

নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার ও জরায়ুমুখের ক্যান্সার বেশি দেখা যায়। মাথা ও গলার ক্যান্সারের রোগীদের টানা ৩৩ দিন থেরাপি দিতে হয়। ফলে দীর্ঘমেয়াদি শিডিউলের চাপ বাড়ে। ঢাকায় থেরাপির সময় না পাওয়া এবং অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে ভৈরব, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহের রোগীরাও সিলেটে আসে। এতে প্রতিদিনের রোগীর চাপ আরো বাড়ে।

এক মাসের আগে মিলছে না শিডিউল : একটি মেশিন দিয়ে এখন প্রতিদিন প্রায় ১৫০ রোগীকে রেডিওথেরাপি দেওয়া হচ্ছে। তার পরও নতুন রোগীদের থেরাপি পেতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে দীর্ঘ সময়। বছরের শুরুতে শিডিউল পেতে দু-তিন মাস লাগত। সম্প্রতি অনারারি ভিত্তিতে দুজন রেডিওথেরাপি টেকনোলজিস্ট (আরটিটি) যোগ দেওয়ায় কাজের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এখন বেশির ভাগ রোগী এক মাসের মধ্যে শিডিউল পাচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ২৩ অক্টোবর চিকিৎসা নিতে আসা মো. সাবা মিয়া ও জাহেরা বেগম ২৩ নভেম্বরের শিডিউল পেয়েছেন। ২৪ অক্টোবর আসা আব্দুল হাফিজ, সিরাজ মিয়া, নূর উদ্দিন ও শাকিলা বেগমও এক মাস পর ২৪ নভেম্বরের শিডিউল পেয়েছেন।

তীব্র জনবল সংকট : বিভাগটিতে একজন অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপক থাকার কথা থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে মাত্র একজন সহকারী অধ্যাপক পুরো বিভাগ দেখাশোনা করছেন। একইভাবে ছয়জন আরটিটি থাকার কথা থাকলেও দীর্ঘদিন ছিলেন মাত্র দুজন। সম্প্রতি অনারারি ভিত্তিতে আরো দুজন যোগ দিয়েছেন।

অতিরিক্ত চাপ, আবার মেশিন অচলের শঙ্কা : বিভাগটি জানায়, প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত টানা থেরাপি দেওয়া হয়। ২০১৮ সালে চালু হওয়া মেশিনটি এ বছরের জানুয়ারিতে বিকল হয়ে চার মাস বন্ধ ছিল। পরে মেরামত করা হলেও এটি আবার অচল হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়ে গেছে।

১০০ শয্যার ‘কম্প্রিহেনসিভ ক্যান্সার সেন্টার’ দ্রুত চালুর দাবি : ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১০০ শয্যার অত্যাধুনিক ‘কম্প্রিহেনসিভ ক্যান্সার সেন্টার’-এর নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। এখানে চারটি রেডিওথেরাপি মেশিন থাকলে প্রতিদিন অন্তত ৬০০ রোগী থেরাপি নিতে পারবেন। তবে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কাজের গতি শ্লথ হয়ে যায়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, এটি চালু হলে সিলেটসহ আশপাশের জেলাগুলোর রোগীরা ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে।

এ বিষয়ে রেডিওথেরাপি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. সরদার বনিউল আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জনবল সংকট আমাদের বড় সমস্যা। যেখানে তিনজন শিক্ষক থাকার কথা, সেখানে আমি একাই দায়িত্ব পালন করছি। তবু আমরা রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন অন্তত ১৫০ জন রোগী থেরাপি নিচ্ছেন। গত এক বছরে ৯৮০ জন রোগী রেডিওথেরাপি নিয়েছেন। মাথা-গলার রোগীদের ৩৩ দিন টানা থেরাপি নিতে হয়, তাই প্রতিদিন নতুন-পুরনো মিলে এই সংখ্যা হয়।’

শিডিউল পেতে দেরি হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সামর্থ্যের তুলনায় রোগী বেশি বলেই এমনটি হয়। আগে দু-তিন মাস অপেক্ষা করতে হতো, এখন সেটি এক মাসে নামিয়ে আনা গেছে।’ ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানে আগের সরকারের পতনের পর এসে দেখা যায়, শত শত রোগী অপেক্ষায় থাকেন। আমরা পরিস্থিতি বদলানোর উদ্যোগ নিয়েছি। এখন অনেকটা উন্নতি হয়েছে। গুরুতর রোগীদের আলাদা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘শূন্য পদ পূরণ এবং সেবার সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন কম্প্রিহেনসিভ ক্যান্সার সেন্টার দ্রুত চালুর চেষ্টা চলছে।’