Image description

পোস্টাল ব্যালটে ‘ইন-কান্ট্রি’ (দেশের ভেতরে) ভোট ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে প্রতিটি জেলায় কয়েদিদের ভোটার নিবন্ধনের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ জন্য প্রতিটি কারাগারে দুই সদস্যের একটি টিম নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কমিশন জানায়, এই টিমে থাকবেন কারাগারের একজন কর্মকর্তা এবং একজন কম্পিউটার অপারেটর, যিনি নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

ইসি সূত্র বলছে, কারাগারের সব কয়েদি বা হাজতি এই নিবন্ধনের আওতায় আসবেন না। কারণ, অনেকেই ৫৪ ধারায় বা ছোটখাটো অপরাধে স্বল্প সময়ের জন্য কারাগারে থাকেন এবং নির্বাচনের আগেই জামিনে মুক্ত হয়ে যান। তাই শুধু দীর্ঘমেয়াদি কয়েদি এবং দীর্ঘদিন ধরে বিচারাধীন হাজতিদের নিবন্ধন করা হবে।

কারা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে ৭৪টি কারাগারে (১৪টি কেন্দ্রীয় ও ৬০টি জেলা কারাগার) বন্দি ধারণক্ষমতা প্রায় ৪৬ হাজার। কিন্তু বর্তমানে বন্দির সংখ্যা ৭০ থেকে ৮০ হাজারের বেশি, যার প্রায় ৭৫ শতাংশই বিচারাধীন হাজতি। এর মধ্যে প্রায় ২১ হাজার সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি রয়েছেন।

ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘ইন-কান্ট্রি ভোটিংয়ের আওতায় চার ধরনের ভোটারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তারা হলেন—সরকারি কর্মকর্তা, নির্বাচনী কর্মকর্তা, নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মচারী-আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং কারাগারে থাকা কয়েদি ও হাজতিরা। আরপিওতে (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) অন্তর্ভুক্ত না থাকায় সাংবাদিকদের এবার এ তালিকায় রাখা যাচ্ছে না।’

তিনি আরও জানান, তফসিল ঘোষণার পরদিন থেকেই কর্মকর্তারা নিবন্ধন করতে পারবেন। একই সঙ্গে জেলের কয়েদি ও হাজতিরা যাতে নিবন্ধন করতে পারেন, সে জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

ইসি সূত্র জানায়, প্রবাসীদের পোস্টাল ভোট প্রথমে ঢাকায় আসবে এবং সেখান থেকে সংশ্লিষ্ট জেলায় পাঠানো হবে। তবে দেশের ভেতরের পোস্টাল ব্যালট সরাসরি সংশ্লিষ্ট জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠানো হবে।

 কারণে বাতিল হতে পারে পোস্টাল ব্যালট
নির্বাচন কমিশনার আবু ফজল মোহাম্মদ সানাউল্লাহ জানান, ছয়টি কারণে পোস্টাল ব্যালট বাতিল হতে পারে। সেগুলো হলো—সিল ছাড়া ব্যালট এলে, নির্দিষ্ট প্রতীকে সিল না থাকলে, একাধিক প্রতীকে সিল দিলে, ঘোষণাপত্রে (ডিক্লারেশন) স্বাক্ষর না থাকলে, ভোটের দিনের শেষ সময়ের মধ্যে ব্যালট না পৌঁছালে এবং প্রতীক বরাদ্দের পরে আদালতের রায়ে কোনো প্রার্থী প্রার্থিতা ফিরে পেলে।

তিনি বলেন, সময়মতো ব্যালট না আসা বলতে বোঝানো হয়েছে—ভোটের দিনের শেষ সময় পর্যন্ত ব্যালট পৌঁছাতে হবে।

ইসি সূত্র জানায়, পোস্টাল ব্যালট প্রক্রিয়ায় নিরাপত্তা নিশ্চিতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি ব্যালটের জন্য তিনটি হস্তান্তর নথি তৈরি হবে—একটি ডাক বিভাগে, একটি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে এবং একটি নির্বাচন কমিশনে থাকবে।

তারা জানান, খাম পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রথমে এর কিউআর কোড স্ক্যান করতে হবে। কিউআর কোড স্ক্যান করলেই ব্যালটের তথ্য ইসির পোর্টালে চলে আসবে — যা অনিয়ম শনাক্তে সহায়তা করবে। প্রতিটি ব্যালটে কোড নম্বর ও বারকোডও থাকবে।

নিবন্ধনে যুক্তরাষ্ট্রকে টপকে শীর্ষে সৌদি আরব
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটে অংশ নিতে গত ১৯ নভেম্বর থেকে সরকারি পোর্টালে নিবন্ধন শুরু করেছেন ১৫৪টি দেশের প্রবাসীরা।

ইসি জানায়, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপ ৬ লাখের বেশি ডাউনলোড হয়েছে। নিবন্ধন শুরুর ১৭তম দিন আজ শুক্রবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত মোট ভোটার নিবন্ধন দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৯৭২ জনে। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬৯ হাজার ২৯১ জন ও নারী ভোটার ১৮ হাজার ৬৮১ জন।

নিবন্ধনে বর্তমানে শীর্ষে রয়েছে সৌদি আরব। সেখান থেকে নিবন্ধন করেছেন ৩৫ হাজার ৪৫৬ জন। এরপর রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র (১৯ হাজার ১১০ জন), সিঙ্গাপুর (১০ হাজার ৮৫৪ জন), মালয়েশিয়া (১০ হাজার ২৫৯ জন) এবং যুক্তরাজ্য (৯ হাজার ৯৬৮ জন)।

জেলাভিত্তিক নিবন্ধনে শীর্ষে রয়েছে ঢাকা (২৫ হাজার ৯৭১ জন)। এরপর কুমিল্লা (১৮ হাজার ৭৯৭ জন), চট্টগ্রাম (১৪ হাজার ৯৭৭ জন), নোয়াখালী (১১ হাজার ৯১০ জন) এবং সিলেট (১১ হাজার ১৮২ জন)।

আসনভিত্তিক হিসেবে সবচেয়ে বেশি নিবন্ধন হয়েছে সিলেট-১ আসনে (৩ হাজার ৪৯৬ জন)। এরপর নোয়াখালী-১, ফেনী-৩, সিলেট-৬ ও নোয়াখালী-৩ আসনে বেশি নিবন্ধন হয়েছে।