বেগম জিয়ার উন্তত চিকিতসার জন্য এবার কেন কাতার এয়ার এম্বুলেন্স পাঠাচ্ছে না। অথচ এরচেয়ে সুস্থ অবস্থায়ও কাতারের এম্বলেন্স বেগম জিয়ার জন্য এসেছিল। বিষয়টি সহজভাবে দেখা কোনো ভাবেই ঠিক হবে না। কারণ এটি একটি কূটতৈক খেলা। যে খেলায় ভারত ও তাদের এদেশিয় দোসররা জিতে গেছেন। কারণ ভারতীয় দোসররা তুরুস্কের বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তুলাতে পেরেছেন । বিষয়টি বিশ্লেষণের দাবী রাখে।
মনে থাকবার কথা শেখ হাসিনা সরকারের অব্যহত গুম , খুন নির্যাতনে এর্দোগান সরকারের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক তলাণীতে গিয়ে ঠেঁকেছিল । কিন্তু ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা সংকট দেশ দু’টিকে কাছে নিয়ে আসে। তীব্র প্রতিবাদে ফেঁটে পড়েন প্রেসিডেন্ট এর্দোগান। ত্রাণসমেত তাঁর সহধর্মীনি এমিন এর্দোগানকে টেকনাফে পাঠান । আন্তুর্জাতিক পর্যায়ে রোহিঙ্গাদের পক্ষে জনসমর্থন তৈরীতে জাতিসংঘে নেতৃত্বে প্রদান করেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান। এর পর যখন মিয়ানমার ২২ বার বাংলাদেশের আকাশ সীমা লংঘন করে । ঠিক তখনই তুরুস্কের অত্যাধুনিক ড্রোন (Bayraktar TB2 drones) দিয়ে বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়ায় তুরুস্ক। শক্তিশালী এয়ার ডিফেন্স সিসটেম নিয়ে এগিয়ে আসে দেশটি। আর এতেই বিচলিত হয়ে উঠে ভারত।
মিয়ানমারকে সামনে রেখে যতই বাংলাদেশ অগ্রসর হচ্ছিল , ততই ভারতের মাথা খারাপ হয়ে যায়। জুলাই বিপ্লবের পর পাকিস্তান , চীন , তুরুস্কের সাথে সম্পর্কের তীব্রতায় যখন ভারত প্রায় দিশে হারা। তখনই বিএনপির মধ্যকার ভারতপন্থী এক্টিভিস্টদের লেলিয়ে দেয় ভারত । গত সপ্তাহ থেকে একটি ন্যারেটিভ ডেভলপ হতে থাকে যে, বাংলাদেশে ইসলামপন্থীদের ক্ষমতায় আনতে ঢাকায় ততপর তুরুস্কের গোয়েন্দারা। সূত্র হিসেবে সাংবাদিক ওয়ালিউল্লাহ নোমান ও তরুস্ক ফেরত গ্রাজুয়েট , শিবিরের সাবেক দুই নেতাকে জামাতের মনোনয়ন। সূত্র হিসেবে আরো দেখানো হয় সম্পাদক মাহমুদুর রহমান -এর সাথে যেহেতু বিএনপির সাথে সম্পর্ক ভাল যাচ্ছে না, তাই তিনিই এটির সমন্বয় করছেন। রীতিমত বিএনপির কেন্দ্রে একধরণের ভয়ই ধরিয়ে দিয়েছেন ভারতপন্থী এক্টিভিস্টরা। এর সাথে ৮দলীয় ইসলামী জোটের সমাবেশ এভীতিতে শক্তি সঞ্চার করেছে। এর বিপরীতে বিএনপির কোনো ক্যাম্পেইনই চোখে পড়ছে না ।
মজার বিষয় হচ্ছে যে বা যারা এ ন্যারেটিভটি সামনে নিয়ে এসেছেন, তাদের কারোরই বিএনপির পরিবার কিংবা ছাত্রদলের ব্যাকগ্রাইন্ড নেই। কিন্তু তারা এখন বিএনপির আদর্শিক অবস্থান কি হবে তা নির্ধারণ করে দিচ্ছেন। ফলে গুজবের ডালপালা পত্র পল্লবে শোশভিত হচ্ছে , ভবিষ্যতে আরো হবে। কারণ বেগম জিয়া ও ভারপাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মাঠে অনুপুস্থিতিতে এধরণের গুজব, প্রপাগান্ডা নিয়ন্ত্রণ করবার অথরিটি এখন বিএনপিতে নেই বললে চলে। ফলাফল যা হবার তাই হচ্ছে- তুরুস্ক যেহেতু কাতারের সবচেয়ে পরম বন্ধু । সেহেতু তুরুস্কের প্রতি আঙ্গুল উঠানোকে কাতার ভালভাবে নেবে না এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার। সুতরাং কাতারের এম্বুলেন্স দেশ নেত্রীর জন্য আমরা আর পাচ্ছি না। অথচ তুরুস্ক ও কাতারের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে যুগান্তকারী ভূমিকার রেখেছিলে বেগম খালেদা জিয়া। দেশ দুটিতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কয়েক দফা সফর করেছিলেন তিনি। আপনারা জেনে থাকবেন কাতার যখন সৌদি আরব , আরব আমিরাত দ্বারা সর্বাত্মক অবরোধের মূখে পড়ে তখন তুরুস্ক তাঁর সেনাবাহিনী পাঁঠিয়ে কাতারের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করেছিল। সুতরাং বন্ধু রাষ্ট্র তুরুস্ককে চ্যালেঞ্জ , তাই বিএনপির মানবিক আবেদনেও সাড়া দিতে পারছি না। এই সাড়া না দেয়া , পাশে না থাকাটাই ভারত এবং বিএনপির মধ্যকার তাদের দোসরদের বিজয় নিশ্চিত হয়েছে।
এবার বেগম জিয়া অসুস্থ হবার সর্বপ্রথম এগিয়ে আসে চীন । তারা এয়ার এম্বুলেন্সসহ ডাক্তারদের একটি টীম এবং চীনে একটি হসপিটাল সম্পূর্ণ প্রস্তুত রাখে।বাংলাদেশে যে দু’জন এটি সমন্বয় করছিলেন তাদেরকে বললাম ভাই ম্যাডামকে নিয়ে যেতে এত দেরি কেন। জবাবে জানালেন ম্যাডামের ব্যাপারে মূল সিদ্ধান্ত নিবে তাঁর পরিবার । এটি জানার সাথে সাথে বেগম জিয়ার পরিবারকে বিএনপির নেতাদের মাধ্যমে ইনফ্লুয়েন্স করবার চেষ্টা করি। গত ৮ ই নভেম্বর আমি ফেইসবুকে একটি ইঙ্গিতপূর্ন পোস্ট দেই “এমূহুর্তে বেগম জিয়ার চিকিৎসার জন্য বেষ্ট অপসন সিঙ্গাপুর ও চীন। মাত্র পাঁচ ঘন্টায় এয়ার এম্বুলেন্সে পৌছা সম্ভব”। তার দু’দিন পর খবরটি গণমাধ্যমে চলে আসলে খোদ ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি চীনের সাথে প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন। টুইটারে এসে সব ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
আমার এতো দীর্ঘ রচনার উদ্দেশ্য হচ্ছে – কে কার পারপাস সার্ভ করছে খেয়াল রাখুন । ভাড়া করা নব্য বুদ্ধিজীবিদের উপর নির্ভরশীলতা কমান। না হয় দেশ ও দল সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
Mohammad Imran Hossain
Journalist, writer, and security analyst; Ph.D. from Robert Morris University, PA