Image description

রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম–দুর্নীতি ও ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে প্রায় ৪০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান (বরখাস্ত) ও তাঁর স্ত্রী নুসরাত জাহানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। তাঁদের নিজ ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট ১২টি ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৩৪২ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে।

দুদক অনুসন্ধানে জানায়, জিয়াউল আহসান অ্যান্টিগা অ্যান্ড বারবুডার নাগরিকত্ব নিয়ে বিপুল অর্থ অবৈধভাবে বিনিয়োগ করেছেন। তিনি দুবাই, মালয়েশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল টাকা পাচার করেছেন। এ ছাড়া তাঁর দেশে–বিদেশে বিপুল সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।

 

রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক আক্তার হোসেন সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, জিয়াউল আহসান ২২ কোটি ২৭ লাখ ৭৮ হাজার ১৪২ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। তাঁর নিজ নামে আটটি ব্যাংক হিসাবে ১২০ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে।

আক্তার হোসেন বলেন, স্বামীর সঙ্গে যোগসাজশ করে নুসরাত জাহান ১৮ কোটি ৫৯ লাখ ৩১ হাজার ৩৫৮ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। তাঁর নিজ নামের চারটি ব্যাংক হিসাবে ২২২ কোটি ৫০ লাখ টাকা অস্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে।

দুদক সূত্র জানায়, জিয়াউল আহসানের স্বার্থসংশ্লিষ্ট স্পেস ইনোভেশন লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানের একটি ব্যাংক হিসাবে ২৭ কোটি ১০ লাখ টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া এআই ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ও এআই ল্যান্ডস্কেপ লিমিডেট নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে ২৫ কোটি টাকা অস্বাভাবিক লেনদেন করা হয়েছে।

দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, জিয়াউল আহসানের ঢাকায় একটি আটতলা বাড়িসহ পাঁচটি বাড়ি, একটি বাগানবাড়ি, তিনটি ফ্ল্যাট ও ৩ হাজার ৩৩ দশমিক ৫১ শতাংশ জমি রয়েছে। এ ছাড়া তাঁর দুটি জিপ গাড়ি, শেয়ারবাজারে পাঁচ কোটি টাকা বিনিয়োগ, এক কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ও সীমা লঙ্ঘন করে ৫৫ হাজার মার্কিন ডলার ব্যাংক হিসাবে জমা করার তথ্য রয়েছে। তাঁর স্ত্রীর নামে ১৬৪ দশমিক ৯১ শতাংশের প্লট, ৫০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের তথ্য পাওয়া গেছে। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে তাঁরা এসব সম্পদের মালিক হয়েছেন।

দুদক সূত্র জানায়, জিয়াউল আহসান ও নুসরাত জাহানের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সাজগোজ লিমিটেডের তিনজন পরিচালক তাঁদের মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ১৬ ব্যাংকের ৮২টি হিসাবে গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৯১ কোটি ২৭ লাখ টাকা জমা ও ৩৯০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন। নুসরাত জাহানের ব্যাংক হিসাব থেকে জলসিঁড়ি আবাসন প্রকল্পের ব্যাংক হিসাবে ৯১ লাখ ৭২ হাজার ৯১৫ টাকা ও আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের ব্যাংক হিসাবে ৩৭ লাখ ৮৪ হাজার ৮৪৫ টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে।

২০১৭ সালে জিয়াউল আহসান অ্যান্টিগা অ্যান্ড বারবুডার নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন বলে জানিয়েছে দুদক।  ওই দেশের নাগরিকত্ব নেওয়ার সময় জিয়াউল আহসান ও তাঁর পরিবার দুই লাখ মার্কিন ডলার মালয়েশিয়ার দুটি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে পরিশোধ করেন। এ ছাড়া জিয়াউল আহসান অ্যান্টিগা অ্যান্ড বারবুডার পাঁচ বছর মেয়াদি বন্ডে প্রায় ১৩ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার অবৈধভাবে বিনিয়োগ করেছেন।

দুদক অনুসন্ধানকালে আরও জানতে পারে, জিয়াউল আহসান দুবাইয়ের ফাস্ট আবুধাবি ব্যাংক নামের একটি ব্যাংকের হিসাবে ২০ কোটি টাকা ও আরেকটি ব্যাংক হিসাবে ৭৫ কোটি টাকা পাচার করেছেন। এ ছাড়া মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংক হিসাবে ৭৫ কোটি টাকা ও যুক্তরাষ্ট্রের একটি ব্যাংক হিসাবে বিপুল টাকা পাচারের তথ্য পাওয়া গেছে।

গত ১৬ আগস্ট সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানকে গভীর রাতে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে নিউমার্কেট থানার একটি হত্যা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এখন তিনি কারাগারে আছেন।