Image description
রাজধানীতে গণঅভ্যুত্থানের নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের মানববন্ধন

গণঅভ্যুত্থানে নিহত ব্যক্তিদের স্বজনরা ৯ দফা দাবি জানিয়েছেন।  রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে এক মানববন্ধনে এই দাবি জানানো হয়। শহিদ পরিবারের সদস্যদের পক্ষে তাদের ৯ দফা দাবি তুলে ধরেন আন্দোলনে ঢাকায় নিহত-আহতদের তালিকা তৈরির কাজে ঢাকা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত থাকা তামিম খান।

দাবিগুলো হচ্ছে—হত্যার সঙ্গে জড়িত সবার দ্রুত বিচার করা, পয়লা ফেব্রুয়ারি থেকে শহিদ পরিবারের জন্য মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করা; অভু্যুত্থানে নিহত ব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও তাদের স্মরণে দিবস ঘোষণা, শহিদ পরিবারের জন্য কর্মসংস্থান ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করা, শহিদ পরিবারের সদস্যদের সঞ্চয়পত্রের বদলে এককালীন নগদ অর্থ দেওয়া; শহিদদের সমাধিস্থল সংরক্ষণ ও স্মৃতিফলক নির্মাণ, বিনা মূল্যে চিকিত্সা ও শিক্ষায় শহিদ পরিবারের জন্য নির্দিষ্ট কার্ড প্রদান, শহিদ ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারের জন্য উপদেষ্টা নিয়োগ এবং শহিদ পরিবারের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা।

তামিম খান বলেন, দেশের পরিস্থিতি পালটাল, সরকার বদলাল, কিন্তু যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজকের এই দেশ, তারাই সবচেয়ে বড় বৈষম্যের শিকার। শহিদ পরিবারের সদস্যরা না পাচ্ছেন ঠিকমতো সুযোগ-সুবিধা, না তাদের আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। আহতরা সুচিকিত্সা পাচ্ছেন না। তাদের যে অনুদান দেওয়ার কথা, সেটাও পাচ্ছেন না।

মানববন্ধনে আন্দোলনে নিহত ব্যক্তিদের অর্ধশতাধিক স্বজন উপস্থিত ছিলেন। নিহত ব্যক্তিদের ছোট সন্তানরাও মানববন্ধনে ছিল। এ সময় জানানো হয়, ঢাকা জেলায় এখন পর্যন্ত ৩১৪ জন শহিদ হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দা ৯৪ জন। আহত হয়েছেন ২৯ হাজার। কিন্তু ভেরিফায়েড (যাচাই-বাছাই) তালিকায় সেই সংখ্যা খুব কম। মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে নিহত মাসুদ রানার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস মানববন্ধনে অভিযোগ করেন, এখন সরকার, সমন্বয়ক, উপদেষ্টা কেউই শহিদ পরিবারের স্বজনদের কোনো খোঁজ নিচ্ছেন না। অথচ নিহতদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়েই তারা পদ পেয়েছেন, গদি পেয়েছেন, উপদেষ্টা হয়েছেন। আর আন্দোলনে যারা নিহত হলেন, যাদের রক্তের বিনিময়ে এ সরকার গঠিত হলো, সেই নিহতের স্বজনরা পেলেন রাস্তা। তার অভিযোগ, এখন তাদের রাস্তায় রাস্তায় নিহত ব্যক্তিদের অধিকারের জন্য ঘুরতে হচ্ছে।

আন্দোলনের সময় ১৯ জুলাই রামপুরায় নিহত রাসেল মিয়ার স্ত্রী শারমিন আক্তার বলেন, ‘জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনে গেলে আমাদের সঙ্গে এমনভাবে কথা বলা হয় যেন আমরা দান-ভিক্ষার জন্য গেছি। আমরা কেন ভিক্ষা নেব?’

যাত্রাবাড়ীর পকেট গেট এলাকায় ১৮ জুলাইয়ে নিহত সাকিব হাসানের বাবা মর্তুজা আলম বলেন, আমার সন্তানসহ আন্দোলনে আরো যাদের হত্যা করা হয়েছে, সবার হত্যার বিচার চাই। এ সরকার দ্রুত সব হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করুক। আর শহিদদের প্রাপ্য সম্মান ও স্বীকৃতির দাবি জানাচ্ছি। মোহাম্মদপুরে নিহত ইমনের মা বলেন, ‘যে স্বৈরাচার সরকার আমার মতো মা-বাবার বুক খালি করেছে, তার যেন ফাঁসি হয়। যাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, যে রাজকীয় ব্যবস্থায় তারা আছেন, টিভিতে খবরে তাদের চেহারা দেখলে আর ভালো থাকতে পারি না।

মানববন্ধনে অন্য শহিদ পরিবারের সদস্যরা জানান, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে শুধু সরকার পরিবর্তন, আমলা পরিবর্তন হয়েছে। আর কোনো কিছুরই কোনো পরিবর্তন হয়নি। কোনো সিস্টেমের পরিবর্তন হয়নি।

এদিকে মানববন্ধন করার জায়গা নির্দিষ্ট করা নিয়ে মতভেদে স্বজনরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে কর্মসূচি পালন করেন। একদল প্রেস ক্লাবের মূল ফটকসংলগ্ন (মূল সড়কের দিকে যেটি বন্ধ থাকে) মেট্রো স্টেশনের নিচে মানববন্ধন করে। অপর দলটি প্রেস ক্লাবের পশ্চিম পাশের ফটকসংলগ্ন (পুলিশ বক্স-সংলগ্ন) স্থানে মানববন্ধন করে।