সিলেটে নির্বাচনী সমঝোতা নিয়ে মুখ খুলছেন না কেউ-ই। অবশ্য কাগজে-কলমে এখনো সমঝোতা বা জোটের কোনো কিছুই দৃশ্যমান নয়। তবে, অন্দর মহলে নানা হিসাব চলছে। আর এই হিসাব দিন দিন আরও জটিল হচ্ছে। বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন কোনো জোট হলে সেখানে অংশ নেবে উপমহাদেশের প্রাচীন দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। এটি প্রায় পরিষ্কার। কারণ তারা জামায়াতের সঙ্গে জোটে যেতে চায় না। তবে, জমিয়ত এবার বিএনপি’র কাছে চায় বেশি আসন। সিলেটে অন্তত দু’টি আসন চায় তারা। যদি এটি না হয় তাহলে তারা একটিতে সমঝোতা ও অন্যটিতে লড়াইয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলের কেন্দ্রীয় এক নেতা মানবজমিনকে জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত বিএনপি’র তরফ থেকে চারটি আসনে গ্রিন সিগন্যাল পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে সিলেট-৫ আসনে জমিয়ত সভাপতি ওবায়দুল্লাহ ফারুকের বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত। সিলেট-৪ আসন নিয়ে কথাবার্তা চলছে। জমিয়ত এই আসনটি চায়। এ আসনে তাদের প্রার্থী কেন্দ্রীয় আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট মোহাম্মদ আলী। এ ছাড়া, সিলেট-৬ আসনের প্রার্থী ফখরুল ইসলামের দিকেও তাদের নজর রয়েছে। সিলেট-৪ আসনে বিএনপি’র প্রার্থী সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এ আসনে বিএনপি’র পক্ষ থেকে ছাড় দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে। আর সিলেট-৫ আসনে জমিয়ত প্রধান ভোটের মাঠে পেতে পারেন বিএনপি’র মাঠে থাকা প্রার্থী মামুনুর রশীদ চাকসু মামুনকে।
ইতিমধ্যে মামুন নির্বাচন করার কথা জানিয়ে দিয়েছেন। জামায়াতের সঙ্গে আট দলের যে আন্দোলনের জোট চলছে, সেই জোটেই নির্বাচনের সমঝোতা হতে পারে বলে জানিয়েছেন জামায়াত ও খেলাফত সহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা। এক্ষেত্রে সিলেটের ছয়টি আসনে হতে পারে ভোটের সমঝোতা। তবে, সেই সমঝোতার বিষয়টি এখনো পরিষ্কার নয়। জামায়াতকে নিয়ে কিছুটা বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দ্বন্দ্বে আছেন অন্য দলের নেতারা। আন্দোলনের সমঝোতা নির্বাচন পর্যন্ত না-ও যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেক নেতা। যদি সমঝোতায় যায়, তাহলে সিলেটে জামায়াতের কাছে চারটি আসন চাইবে শরিকরা। এর মধ্যে শেষ পর্যন্ত তিনটি আসন না পেলে সমঝোতা কঠিন হয়ে পড়তে পারে। সিলেট-১ আসনে জামায়াতের প্রার্থী মাওলানা হাবিবুর রহমান রয়েছেন সমঝোতার ভোটে সুসংহত অবস্থানে। এই আসনে শরিকদের মধ্যে শক্তিশালী কোনো প্রার্থী নেই। সিলেট-২ আসনটি চাইবে খেলাফত মজলিস। এ আসনে তাদের প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মো. মুনতাসির আলী। তিনি সিলেটের পরিচিত মুখ। ছাত্র রাজনীতির কারণে গোটা দেশেই রয়েছে তার পরিচিতি। মুনতাসির আলী অনেক আগে থেকেই এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসছেন।
জামায়াত প্রার্থী অধ্যাপক আব্দুল হান্নানের চেয়ে তার অবস্থান ভালো রয়েছে বলে ভোটাররা জানিয়েছেন। সিলেট-৩ আসনে জামায়াত প্রার্থী মাওলানা লোকমান আহমদ অনেকটা এগিয়ে রয়েছেন। এ আসনে খেলাফত মজলিসের প্রার্থী দলের জেলার সাধারণ সম্পাদক মো. দিলওয়ার হোসেন। দলের অবস্থান সুসংহত থাকায় তার ভোট রয়েছে। তবে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার কারণে লোকমানের অবস্থান ভালো। সিলেট-৪ আসনে নানা মেরূকরণ। জামায়াতের প্রার্থী দলের জেলার সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন। জৈন্তাপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান। ৫ই আগস্ট থেকে তিনি মাঠে। খেলাফত মজলিসের এ আসনে প্রার্থী তুখোড় ওয়াজি মুফতি আলী হাসান ওসামা। বাড়ি সিলেট নগরে। এ আসনে ওসমাকে নিয়ে বাজি ধরতে চায় খেলাফত মজলিস। তবে, এ আসনে জয়নালের ভোট ব্যাংক দিন দিন বাড়ছে বলে জানিয়েছেন ভোটাররা। শেষ পর্যন্ত আসন ভাগাভাগিতে ছাড় দিতে হলে খেলাফত মজলিস এ আসন ছাড় দিতে পারে বলে দলটির কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন। তবে, সিলেট-৫ আসন তারা ছাড় দেবে না। এ আসনে তাদের প্রার্থী মাওলানা আবুল হাসান ভোটের মাঠে ‘ফ্যাক্টর’ হয়ে বসে আছেন।
এ আসনে জামায়াত প্রার্থী মাওলানা আনোয়ার হোসেন বয়োবৃদ্ধ হওয়ার কারণে প্রচারণায় কিছুটা পিছিয়ে। তবে, জামায়াতের নেতাকর্মীরা তার জন্য মাঠে সরব রয়েছেন। খেলাফত প্রার্থী মাওলানা আবুল হাসান পরিচিত ওয়াজি। এক নামেই চেনেন সবাই। বাড়ি জকিগঞ্জ হওয়ার কারণে এগিয়ে রয়েছেন। ফলে এ আসনটি খেলাফত মজলিস ছাড় দিতে চাইবে না। এ আসনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুফতি রেজাউল করীম আবরার। প্রথমদিকে তিনি সরব থাকলেও বর্তমানে নীরব রয়েছেন। সিলেট-৬ আসনে জামায়াতে প্রার্থী সেলিম উদ্দিন। কর্মীরা জানিয়েছেন, সিলেটের একটি আসনে যদি জামায়াত জয় চায় সেটি হবে সিলেট-৬ আসন। এ আসনে তাদের প্রার্থী কেন্দ্রীয় নেতা সেলিম উদ্দিন। তাকে এ আসনটি ছাড় দিয়ে মাওলানা হাবিবুর রহমান সিলেট-১ আসনে প্রার্থী হয়েছেন। এ আসনকে জামায়াত চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। সেলিম উদ্দিনও আসনের দু’টি উপজেলার ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এ আসনে সমঝোতার হিসেবে অন্য কারও শক্তিশালী প্রার্থী নেই। তবে, ভোটের মাঠে জমিয়ত প্রার্থী মাওলানা ফখরুল ইসলাম ঠিক থাকলে আসনটিতে জামায়াতের জন্য জয় পাওয়া কষ্টকর হবে। মাওলানা ফখরুলও তলে তলে অনেক বেশি এগিয়ে গেছেন। অনেকেই তাকে ভোটের ফ্যাক্টর হিসেবে মনে করছেন।