Image description

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত করেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী রোববার কমিশনের আনুষ্ঠানিক সভায় কবে তফসিল ঘোষণা করবে তা নিয়ে বৈঠকে বসছে সংস্থাটি। তবে একাধিক সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ১১ই ডিসেম্বরকে লক্ষ্য রেখে তফসিলের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে ইসি। এ নিয়ে অনানুষ্ঠানিক একাধিক বৈঠকও হয়েছে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য কমিশনারদের মধ্যে।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৭ই ডিসেম্বর রোববার কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হবে। এদিন আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল রয়েছে। এ ছাড়া একই দিন গণভোট আয়োজন নিয়েও প্রস্তুতিমূলক আলোচনা হবে ওই সভায়। 

এদিকে সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার বিষয়ে আলোচনার জন্য প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিনের সাক্ষাৎ পেতে চিঠি দিয়েছে ইসি। আগামী ১০ বা ১১ই ডিসেম্বর এই সাক্ষাৎ পেতে বৃহস্পতিবার এই চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (ইটিআই) ইসি আয়োজিত এক কর্মশালায় ইসি সচিব আখতার আহমেদ এসব কথা সাংবাদিকদের বলেন। তিনি বলেন, তফ‌সিল ও গণভোট নিয়ে আলোচনা কর‌তে ১০ অথবা ১১ই ডিসেম্বর দুপুর ১২টায় নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎ চে‌য়ে চি‌ঠি পাঠা‌নো হ‌য়ে‌ছে।

অপরদিকে প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন ইসি’র চিঠির জবাবে আগামী ১০ই ডিসেম্বর এই সাক্ষাতের দিনক্ষণ ঠিক করেছেন। এ বিষয়ে তার সহকারী একান্ত সচিব মোহাম্মদ সাগর হোসেন মানবজমিনকে বলেন, ইসি’র চিঠির উত্তরে ১০ই ডিসেম্বর সাক্ষাতের জন্য সময় দেয়া হয়েছে। এদিন বেলা ১২টায় বঙ্গভবনে সিইসি আসবেন। 

তফসিল ঘিরে যত প্রস্তুতি 

জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার জন্য তফসিল ঘিরে নানা প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সাধারণ নির্বাচন ও গণভোট দু’টি ভোট একইদিনে কতোটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় করা যায় তা নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ চলছেই। কমিশনাররা এরই মধ্যে নানা চ্যালেঞ্জের কথা বললেও ভোটের আয়োজন নিয়ে কোনো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নেই। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে ইসি। সে হিসেবে আগামী সপ্তাহের শেষ দিকে অর্থাৎ ১১ই ডিসেম্বর তফসিল ঘোষণা করতে পারে সাংবিধানিক এই সংস্থাটি।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সম্ভাব্য সব তারিখ নিয়ে আলোচনা চলছে। ইতিমধ্যে মক ভোটিংয়ের মাধ্যমে ভোটার প্রবাহ ও ভোট গ্রহণের সময় বিশ্লেষণ করেছি। তাতে ভোটগ্রহণের সময় বাড়ানোর কথা ভাবা হচ্ছে। আর রোববার থেকে আগামী সপ্তাহের যেকোনো দিন তফসিল ঘোষণা করা হবে। কমিশন সূত্র জানিয়েছে, তফসিলে আগামী বছরের ৮ থেকে ১২ই ফেব্রুয়ারি- এই পাঁচদিনের মধ্যেই সংসদ ও গণভোটের দিন চূড়ান্ত হবে। তফসিল ঘোষণার পর মনোনয়নপত্র জমা, বাছাই, আপিল-নিষ্পত্তি, প্রার্থিতা প্রত্যাহার ও প্রতীক বরাদ্দ- সব মিলিয়ে প্রায় দুই মাসের সময়সীমা ধরে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। একইদিনে দুই ভোট হওয়ায় প্রতি রুমে গোপন কক্ষের সংখ্যা এক থেকে ২টি করা হবে। ভোটগ্রহণ দ্রুত করতে হলে প্রতি কক্ষে আরেকটি সিল দেয়ার বুথ যুক্ত করা হবে।

গত শনিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে আয়োজিত ইসি’র মক ভোটের মহড়ায় ভোটারদের লাইনে দেড় ঘণ্টার অপেক্ষা এবং একই কক্ষে দুই ধরনের ব্যালট দেয়ার কারণে সময় বেশি লাগার বাস্তবতা উঠে আসে। এ প্রসঙ্গে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি গণভোট একই দিনে আয়োজন করতে হবে- এটা সময় ব্যবস্থাপনার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। মানুষের কষ্ট বাড়ানো নয়, আমরা সময় কমিয়ে সুবিধা নিশ্চিত করতে চাই।

ভোটগ্রহণের সময় বাড়ানোর পরিকল্পনা
গত চার দশকে অনুষ্ঠিত সব নির্বাচনেই সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত মোট ৮ ঘণ্টা ধরে চলে ভোটগ্রহণ। কিন্তু এবার সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে হওয়ায় ভোটের সময় এক ঘণ্টা বাড়িয়ে ৯ ঘণ্টা করার পরিকল্পনা করছে ইসি। এ ক্ষেত্রে প্রস্তাব এসেছে- ভোট সকাল ৮টার বদলে শুরু হতে পারে সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে। আর শেষ হতে পারে বিকেল ৪টার বদলে সাড়ে ৪টায়। সম্প্রতি মক ভোটিংয়ের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, একই কেন্দ্রে দুই ব্যালট দেয়ার কারণে ভোটারপ্রতি সময় ও লাইনের দৈর্ঘ্য বেড়েছে। ফলে এই চাপ নিয়ন্ত্রণে গোপন কক্ষ বাড়ানো ও সময় বৃদ্ধি- উভয় দিকেই গুরুত্ব দিয়েছে কমিশন। 

এরইমধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ, আইনবিধি সংশোধন, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন, পর্যবেক্ষক নিবন্ধন, অধিকাংশ ছাপার কাজ শেষ করছে। অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপও শেষ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের সব বিভাগের প্রধানদের সঙ্গে দুই দফা বৈঠক শেষ করেছে। এখন বাজেট নিয়ে আলোচনা করছে সংস্থাটি। 

ভোটকেন্দ্র ও নির্বাচনী সামগ্রীর প্রস্তুতি
আগামী নির্বাচনকে ঘিরে ৪২ হাজার ৭৬১টি কেন্দ্র ও ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৯টি ভোটকক্ষ নির্ধারণ করেছে ইসি। এর মধ্যে নারী ভোটকক্ষ ১ লাখ ২৯ হাজারের বেশি। সেই সঙ্গে ইসি’র নির্বাচনী সামগ্রীর ছাপার কাজও প্রায় শেষ। ইসি’র সংশ্লিষ্ট শাখা জানিয়েছে, দুই ধরনের প্রায় ১৩ কোটি ভোটারের জন্য মোট ২৫ কোটি ৫৪ লাখ ব্যালট ছাপানো হবে। এ ছাড়া ৩৪ হাজার মনোনয়নপত্র, ৫ লাখের মতো ফরম, ১০ হাজার প্রতীকের পোস্টার, ২০ লাখ প্যাকেটের মধ্যে প্রস্তুত হয়েছে ১৭ লাখ, পোলিং এজেন্টদের জন্য ৩২ লাখ পরিচয়পত্র ছাপানোর কাজ চলছে।
এ বিষয়ে ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানান, সরকারি প্রেসে ব্যালট পেপার এবং আর্মি সিকিউরিটি প্রেসে প্রবাসী ভোটের ব্যালট ছাপা হচ্ছে। দ্রুততার সঙ্গে কাজ শেষ করতে সিনিয়র সচিবদের তদারকি নিশ্চিত করা হয়েছে। নিবন্ধিত ভোটারের বেশি ব্যালট ছাপা হবে না- এ নীতি এবার কঠোরভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে।