Image description
 

সারা দেশের বাজারে একদিনে কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অপরদিকে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, আমদানির অনুমতি না দেওয়ায় সিন্ডিকেট করে একটি চক্র কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে। তবে এটা সাময়িক। নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসছে, কৃষকের হাতের পুরোনো পেঁয়াজ ছেড়ে দিলে দুয়েক দিনের মধ্যেই বাজার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

 

আমদানিকারকরা বলছেন, বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। কৃষকের স্বার্থের কথা বলে তারা আমদানির অনুমতি দিচ্ছেন না। এতে সাধারণ ভোক্তাদের ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। আমদানির অনুমতি দিলে দাম ৪০-৫০ টাকায় নেমে আসবে।

 

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াবাজার, কেরানীগঞ্জের বৌবাজার, হাতিরপুল বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কয়েকদিন আগেও যে পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৯৫ থেকে ১১০ টাকায় পাওয়া যেত, গতকাল তা ১৩০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়। এমনকি পাইকারি বাজারেই ভালো মানের পেঁয়াজের পাল্লা (পাঁচ কেজি) এখন ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গতকাল বিকালে কারওয়ান বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী আবদুল কাদের আমার দেশকে বলেন, তিন-চারদিন ধরেই সরবরাহ কমে যাওয়ায় পেঁয়াজের দাম কিছুটা বাড়তির দিকে ছিল। তবে দুদিনের ব্যবধানে পাইকারি বাজারেই ৩০ টাকার মতো বেড়েছে । পাইকারি বাজারে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত কয়েক দফা দাম বেড়ে ৭০০ টাকা পাল্লা বিক্রি হয়েছে। এরপরও আড়তে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই। দাম আরো বেড়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

মাহফুজুর রহমান নামে অপর ব্যবসায়ী বলেন, পাইকারি বাজারেই পেঁয়াজের দাম হু হু করে বাড়ছে। আড়তদাররা বলছেন, সরবরাহ নেই তাই দাম চড়া। এ অবস্থা বজায় থাকলে চলতি সপ্তাহেই ২০০ টাকায় পৌঁছতে পারে পেঁয়াজের দাম।

গতকাল বিকালে রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি মার্কেট কারওয়ান বাজার ও শ্যামবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরবরাহ সংকটে দাম বাড়ছে। তাদের কাছেও পর্যাপ্ত পেঁয়াজ নেই।

কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন, কী বিক্রি করব? বড় ব্যবসায়ীদের কাছেই তো পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি এই বাজারের বিভিন্ন দোকানের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, দেখুন এখানেই তো পেঁয়াজ নেই। বিল্লাল হোসেন ও শহিদুল ইসলাম নামে দুই পাইকারি ব্যবসায়ী একই ধরনের কথা বলেন।

গতকাল বিকালে হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক আমার দেশকে বলেন, বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। কৃষকের স্বার্থের কথা বলে তারা আমদানির অনুমতি দিচ্ছেন না। এটা খুবই দুঃখজনক। সিন্ডিকেটচক্রের সঙ্গে তাদের গোপন আঁতাত আছে। এ কারণে সাধারণ ভোক্তাদের ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় পেঁয়াজ কিনে খেতে হচ্ছে। আমদানির অনুমতি দিলে একদিনের মধ্যে দাম ৪০ থেকে ৫০ টাকায় নেমে আসবে।

তবে আমদানিকারকদের এ ধরনের অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের অতিরিক্ত পরিচালক (মনিটরিং ও বাস্তবায়ন) ড. জামাল উদ্দীন আমার দেশকে বলেন, সাহস থাকলে তারা এটা প্রমাণ করুক। প্রকৃতপক্ষে বাজারে সরবরাহের কোনো ঘাটতি নেই। আমদানির অনুমতি দিতে সরকারকে বাধ্য করতেই সিন্ডিকেটচক্র কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে। এখনো মার্কেট প্রসেস এবং কৃষকের হাতে এক লাখ টনেরও বেশি পুরোনো পেঁয়াজ আছে।

তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, পেঁয়াজের দাম ১৫০ টাকা অতিক্রম করলে আমদানির সিদ্ধান্ত আগে থেকেই হয়ে আছে। ফলে সীমিত আকারে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হতে পারে।

 

সপ্তাহের বাজারদর

এদিকে, সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ বাড়লেও দাম কমছে না। অর্ধেকে নেমেছে কাঁচামরিচের দাম। স্থিতিশীল আছে ডিম, মুরগিসহ অন্য পণ্যের দর। তবে সরকারকে না জানিয়েই ভোজ্যতেলের দাম লিটারে আট টাকা বাড়িয়েছেন মিল মালিকরা। এ কারণে বাড়তি দামেই ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে।

এখনো অধিকাংশ সবজির কেজি ৫০ টাকার বেশি। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ১০০ টাকায়। বরবটি ও বেগুনের কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা। ঢ্যাঁড়শ ও পটোলের দাম কিছুটা বেড়ে গতকাল বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৭০ টাকায়। গত সপ্তাহের তুলনায় ফুল ও বাঁধাকপির দাম কিছুটা কমে প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়। কাঁচামরিচের দাম আরো কমে গতকাল প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৮০ টাকায়।

নতুন আলুর দাম কিছুটা কমে প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হলেও পুরোনো আলুর দাম বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ২৭ টাকায়। করলার দাম বেড়ে ১২০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। টমেটো এখনো বাড়তি দামেই ১০০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সবজি ব্যবসায়ী শাহানা বলেন, সরবরাহ বেড়ে দাম কিছুটা কমলেও গত বছরের এই সময়ের তুলনায় এখনো সবজির দাম বাড়তি। তবে আগামী সপ্তাহে শীতের সবজির সরবরাহ আরো বেড়ে দাম কমতে পারে।

কারওয়ান বাজারের মুদি ব্যবসায়ী ইমাম উদ্দিন বাবলু বলেন, ভোজ্যতেলের দাম বাড়লেও সরবরাহে কোনো সংকট নেই। এছাড়া ছোট দানার মসুর ডালের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সপ্তাহের ব্যবধানে ডিম ও মুরগির বাজার নিম্নমুখী। দাম কমে ফার্মের প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকায়। তবে পাড়া-মহল্লার দোকানে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মুরগির দামও কিছুটা কমে প্রতি কেজি ব্রয়লার ১৫০ থেকে ১৬০ এবং সোনালি জাতের মুরগির কেজি ২৪০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মাছ-মাংসসহ অন্য নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে।