বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আরও প্রায় এক হাজার ২০০ জাল সনদধারী শনাক্ত করেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ)। এর মধ্যে ৪০০ জনের একটি তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছে ডিআইএ।
এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেহাত হওয়া ৭৯৩ একর জমি উদ্ধারে সুপারিশ প্রদান, ভুয়া নিয়োগ, অর্থ আত্মসাৎ এবং ভ্যাট ও আইটিসহ বিভিন্ন ধরনের আর্থিক অনিয়মের কারণে প্রায় ২৫৩ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরতের সুপারিশ করবে ডিআইএ।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে যাওয়া ডিআইএর প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মোট এক হাজার ১৭২ জন জাল সনদধারীকে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪০০ জনের সনদ ভুয়া। ৩০০ জনের শিক্ষকের সনদ অগ্রহণযোগ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ নেওয়া ২৫৩ কোটি টাকা ফেরত নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
ডিআইএর নথির তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি জাল সনদধারী শনাক্ত হয়েছে রাজশাহী বিভাগে। এ বিভাগের ৭৭৯ জন শিক্ষক-কর্মচারীর সনদ জাল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের ১২০ জন, ঢাকা বিভাগে ৭০ জন, খুলনা বিভাগে ১৭৯, চট্টগ্রাম বিভাগে ২৪ জনের সনদ জাল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ডিআইএ জানিয়েছে, এনটিআরসিএর শিক্ষক নিবন্ধন সনদ, জাতীয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, রয়েল, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ সনদ জাল করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিআইএ পরিচালক অধ্যাপক এম এম সহিদুল ইসলাম দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘জাল সনদধারীদের একটি তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। এদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারকে অনুরোধ করা হবে। শিগগিরই তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।’
ডিআইএর কড়া সতর্কতা, অভিযোগ জানালে পরিচয় গোপন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ) পরিদর্শনের নামে যে কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন থেকে সবাইকে কঠোরভাবে সতর্ক থাকতে বলেছে।
সংস্থাটির পরিচালক এম এম সহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারি অর্থ ছাড়া বিভিন্ন উৎস হতে আয় হয়। আমার এবং আয়-ব্যয়ের সঠিক হিসাব সংরক্ষণ করা প্রতিষ্ঠান প্রধান এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ও কনায়নকল্পে সরকার কর্তৃক গৃহীত কার্যক্রম সফল করার উদ্দেশ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অনিয়ম রোধসহ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের অপরিহার্যতা বিবেচনায় পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর হতে সরকারি/বেসরকারি স্কুল কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত পরিদর্শন ও নিরীক্ষা এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন প্রেরণ করা হয়।
প্রতিটি পরিদর্শন ও নিরীক্ষা/তদন্ত দলের কাজ এ অধিদপ্তর হতে ভার্চুয়াল সরাসরি মনিটরিং করা হয় এবং মনিটরিং কর্মকর্তার নাম, পদবি ও মোবাইল নম্বর আদেশে উল্লেখ করা হয়। পরিদর্শন ও নিরীক্ষা দলের দাখিলকৃত প্রতিবেদন কয়েকটি ধাপে যাচাইপূর্বক নির্ধারিত চেকলিস্ট অনুসারে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে তা চূড়ান্ত করা হয়। বিধায়, এ অধিদপ্তরের ওয়েব সাইটের নোটিশ বোর্ডে প্রকাশিত অফিস আদেশ ব্যতিত কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা না করা এবং পরিদর্শন ও নিরীক্ষা কাজের জন্য কোন ধরনের আর্থিক লেনদেন না করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক থাকার আহবান জানানো হলো।
এতে আরও বলা হয়, কোন প্রতিষ্ঠান প্রধান অথবা অন্য কোন ব্যক্তি পরিদর্শন ও নিরীক্ষার নামে যদি কোন প্রকার অর্থ সংগ্রহ করে। তাহলে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরকে লিখিতভাবে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হলো।