টানা ৮ দিন ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। গতকাল সকাল থেকে তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হয়। দুপুরে তার মাত্রা কিছুটা বাড়ে। এরই মধ্যে তার চিকিৎসায় যুক্ত হন বিদেশ থেকে আসা একটি চিকিৎসক দল। তারা বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং সব তথ্য পর্যালোচনা করেন। বৈঠক করে এভারকেয়ার হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে।
পরে সন্ধ্যা ৬টার দিকে চিকিৎসক দলের জরুরি সিদ্ধান্তে খালেদা জিয়ার ডায়ালাইসিস শুরু করা হয়। ডায়ালাইসিস চলাকালে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেফ্রোলজি বিশেষজ্ঞরা হাসপাতালে অবস্থান করে প্রতিটি ধাপ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। বিদেশি চিকিৎসক দলের সঙ্গে সমন্বিত চিকিৎসা চলায় নতুন আশা দেখা দিয়েছে। চিকিৎসক দলও পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ার আশা করছেন। এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনে দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এক এক্স বার্তায় তিনি তার চিকিৎসার সম্ভাব্য সব রকম সহযোগিতায় ভারত প্রস্তুত বলে জানান।
বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছি। ডায়ালাইসিস চলছে। প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে চিকিৎসক দল পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবে।
অবস্থার অবনতি হওয়ায় গত রোববার রাত থেকে ৮ থেকে ১০ লিটার করে অক্সিজেন সাপোর্ট দেয়া হচ্ছে খালেদা জিয়াকে।
গতকাল দুপুরে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খানের একটি বক্তব্যে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দেয়। এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, খালেদা জিয়া খুবই ক্রিটিক্যাল কন্ডিশনে আছেন। তার এই বক্তব্য প্রকাশের পর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ে। খালেদা জিয়াকে ভেন্টিলেশনে নেয়া হয়েছে এমন খবরও আসতে থাকে। যদিও পরে দলের পক্ষ থেকে এমন খবরে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। প্রশ্ন দেখা দেয় দলের একজন দায়িত্বশীল নেতা কেন অনুমতি ছাড়া এমন বক্তব্য প্রচার করতে গেলেন।
ওদিকে খালেদা জিয়ার অবস্থার স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানান- দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে তার চিকিৎসা চলছে বলেও জানান- বিএনপি মহাসচিব।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের দু’জন সদস্য জানিয়েছেন, চীন এবং আরও দুই-তিনটি দেশ থেকে আসা কয়েকজন চিকিৎসক খালেদা জিয়াকে ফলোআপ করেন। তারা মেডিকেল বোর্ডের বৈঠকে অংশ নেন। সেখানে যুক্ত হন দেশি-বিদেশি অন্তত দেড় ডজন চিকিৎসক। যুক্তরাষ্ট্র থেকে জন হপকিন্স হসপিটালের চিকিৎসক, লন্ডন থেকে লন্ডন ক্লিনিকের চিকিৎসকও অংশ নেন বৈঠকে। এ ছাড়া লন্ডন থেকে খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান ও পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমানও অংশ নেন। ঘণ্টা দুয়েক চলে বোর্ডের বৈঠক। সেখান থেকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হয় বলে জানান তারা। সূত্রটি জানায়, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখন পর্যন্ত ভালো বলার মতো হয়নি। তাকে মেডিকেল বোর্ড নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখছেন। তার অবস্থা হালকা অবনতি হয়েছে। আইসিইউতে নেয়া হয়নি। তবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এই আইসিইউ সাধারণ আইসিইউর মতো নয়। এখানে সব ধরনের সাপোর্ট রয়েছে। তবে মেডিকেল বোর্ড এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি এমন সাপোর্ট দেয়ার।
বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল বলেন, এভারকেয়ার হাসপাতালের ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে আগের মতোই ম্যাডামের চিকিসা চলছে। দয়া করে যে যাই বলুক, এ ব্যাপারে কারও কথায় কেউ বিভ্রান্ত হবেন না। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সার্বক্ষণিক ম্যাডামের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত আছেন। তাদের থেকে যতটুকু জানতে পেরেছি, তার চিকিৎসা চলছে, এটাই আপগ্রেড। আপনারা সবাই দোয়া করুন, আল্লাহ যেন তাকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেন সুস্থভাবে।
বিদেশ থেকে এসেছেন একদল চিকিৎসক: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সহায়তা দিতে পাঁচ সদস্যের একটি বিদেশি মেডিকেল টিম এভারকেয়ার হাসপাতালে এসেছেন। এ টিমের অধিকাংশ চিকিৎসক চীনের নাগরিক বলে জানা গেছে। সোমবার বেলা ২টা ৫০ মিনিটে হাসপাতালের প্রধান ভবনে প্রবেশ করেন। খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন তাদেরকে অভ্যর্থনা জানান।
গত ২৩শে নভেম্বর রাত থেকে বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়া ভর্তি আছেন। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার ফুসফুসে ইনফেকশন ধরা পড়ায় তার অবস্থা সংকটময় বলে বিএনপি’র তরফ থেকে জানানো হয়। এরপর বৃহস্পতিবার থেকে খালেদা জিয়াকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নিয়ে চিকিৎসকরা নিবিড়ভাবে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সমন্বয়ে একটি মেডিকেল বোর্ডের অধীনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে। এই বোর্ডে তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমান, যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাজ্যে লন্ডন ক্লিনিকের চিকিৎসকরাও রয়েছেন। ৮০ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন থেকে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসের পাশাপাশি কিডনি, লিভার, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন।