Image description
নবম শ্রেণি পড়ুয়া পূর্বাশা রায়কে নিয়ে দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে এসেছিলেন তাঁর মা জোসনা রানী রায়। আজ সোমবার (১ ডিসেম্বর) তাদের বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। সকাল ৯টা চল্লিশ মিনিটে বিদ্যালয়ের সামনে হাজির হয়ে দেখেন, প্রধান ফটকে (মেইন গেট) শিক্ষকদের কর্মবিরতির ব্যানার ঝুলছে। তাঁর মতো অনেকেই বিদ্যালয়ের গেট বন্ধ ও ব্যানার দেখে সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

 

অভিভাবক জোসনা রানী রায় বলেন, ‘আজ (সোমবার) ‘তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি’ বিষয়ক পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। এখানে (বিদ্যালয়ে) এসে শুনলাম পরীক্ষা হবে না। রাতে নাকি (স্কুল থেকে) মোবাইলে মেসেজ দিয়েছে, আমরা পাইনি।’

 

দেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা চার দফা দাবিতে একযোগে লাগাতার কর্মবিরতি ঘোষণা করেছেন। আজ সোমবার থেকে বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক সমিতির (বাসমাশিস) ব্যানারে দিনাজপুর জিলা স্কুল ও সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা এই কর্মবিরতি পালন করছেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে সংগঠন থেকে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা।

 

এর আগে ২৪ নভেম্বর থেকে এসব বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়। কর্মবিরতির কারণে বন্ধ হয়ে গেছে চলমান বার্ষিক পরীক্ষা। হঠাৎ করে পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণায় অভিভাবকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

 

দিনাজপুর জিলা স্কুলে নেই বার্ষিক পরীক্ষার চাঞ্চল্য। স্টিম ছবিদিনাজপুর জিলা স্কুলে নেই বার্ষিক পরীক্ষার চাঞ্চল্য। স্টিম ছবি

 

দিনাজপুর জিলা স্কুলের এক শিক্ষার্থীর বাবা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ছেলে জিলা স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র। আজ জীববিজ্ঞান বিষয়ে পরীক্ষা ছিল। হঠাৎ করে শুনি পরীক্ষা বন্ধ। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়াটা শিক্ষকদের উচিত হয়নি বলে মনে করি।’

 

বাসমাশিস ঘোষিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চার দফা দাবির মধ্যে রয়েছে— ‘সহকারী শিক্ষক’ পদটিকে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারভুক্ত করে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক গেজেট প্রকাশ করা; বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখায় কর্মরত শিক্ষকদের বিভিন্ন শূন্য পদে নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন দ্রুত কার্যকর করা; সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে বকেয়া টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের মঞ্জুরি আদেশ ৩ কর্মদিবসের মধ্যে প্রদান করা এবং ২০১৫ সালের পূর্বের মতো সহকারী শিক্ষকদের ২ থেকে ৩টি ইনক্রিমেন্টসহ অগ্রিম বর্ধিত বেতন সুবিধা বহাল করা।

 

আন্দোলন বিষয়ে দিনাজপুর জিলা স্কুলের সহকারী শিক্ষক মমতাজউদ্দিন বলেন, ‘২৬ বছর ধরে চাকরি করছি। একটাও টাইম স্কেল পাইনি। শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল না করলে শিক্ষকদের দোষ হয়, কিন্তু আমাদের কথা কেউ ভাবে না। দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছি। মামলা হয়েছে, রায়ও আমাদের পক্ষে। কিন্তু দীর্ঘ দিনেও রায় কার্যকর হয়নি।’ শিক্ষকরা কর্মবিরতির মতো সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

 

দাবি-দাওয়ার বিষয়ে জিলা স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক সাইফুদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকে এ ধরনের কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের সাময়িক অসুবিধায় পড়তে হয়েছে। কিন্তু এ ছাড়া আর কোনো উপায় আমরা খুঁজে পাইনি। আগের রাতেই শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের মোবাইলে মেসেজ দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপরও সরকারকে বেঁধে দেওয়া সময়ে দাবি পূরণ না হলে শিক্ষকদের সংগঠন থেকে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।’