Image description

পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার অধ্যাদেশ জারিকে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি মাইলফলক পদক্ষেপ বলে জানিয়েছেন সিনিয়র আইনজীবী শিশির মনির। সোমবার (১ ডিসেম্বর) এ প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।

 

শিশির মনির বলেন, ‘গতকাল পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার অধ্যাদেশ জারি হয়েছে। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে মাইলফলক পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে আমাদের নিম্ন আদালত প্রশাসনিক কর্তৃত্ব থেকে মুক্তি পেল।’

তিনি বলেন, ‘উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ নামে যেটি আইনমন্ত্রণালয়ের অধীনে ছিল, সেটি এখন সম্পূর্ণ প্রধান বিচারপতির অধীনে সচিবালয় কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হবে। অর্থাৎ অধস্তন বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি, ছুটি ও শৃঙ্খলা সবকিছু এখন উচ্চ আদালতের মাধ্যমে হবে। এটি অর্জন করতে গিয়ে বাংলাদেশ দীর্ঘ সময় অতিক্রম করতে হয়েছে। মাজদার হোসেন মামলা থেকে শুরু করে সবশেষ মামলা আমরা করেছিলাম সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদকে চ্যালেঞ্জ করে। এ মামলার রায়ের প্রেক্ষিতে গতকাল অধ্যাদেশ জারি হলো। এতে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।’

শিশির মনির আরও বলেন, ‘স্বাধীনভাবে যদি বিচার বিভাগ কাজ করতে পারে তাহলে বাংলাদেশের গণতন্ত্র সুসংহত হবে। ব্যক্তি হিসেবে কী পেলাম, না পেলাম তার চেয়ে বেশি আমার বাংলাদেশে স্বাধীন বিচার বিভাগ মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। আমরা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারব, গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে পারব। বিচার বিভাগ আলাদা করার মাধ্যমে রাষ্ট্রের তিনটি কাঠামোর মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা পাবে।’

তিনি আশা করেন, বিচারকরা স্বাধীনতা অজর্ন করার পর বিচারিক শৃঙ্খলা মেনে চলবেন। স্বাধীন সার্বভৌম হিসেবে কাজ করবেন। ন্যয় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন।

 

প্রসঙ্গত, বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে নির্বাহী বিভাগ থেকে পুরোপুরি পৃথক হলো বিচার বিভাগ। রোববার (৩০ নভেম্বর) আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এ অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে।

এর আগে গত ২০ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ- ২০২৫ এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়।

বৈঠক শেষে ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘অধ্যাদেশ জারির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের গত ২০-৩০ বছরের আকাঙ্ক্ষাপূরণ হবে। আজকে আমরা মাসদার হোসেনের মামলার রায় পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা পরিপূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠার শেষ ধাপ সম্পন্ন করলাম।’

১৯৯৫ সালে বিসিএস বিচার অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মাসদার হোসেন ও তার সহকর্মীরা বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের প্রভাব থেকে মুক্ত করার দাবিতে এ মামলা করেন। ১৯৯৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত রায় দেয়। সেই রায়ের ২৬ বছর পর বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয় করার পদক্ষেপে সরকারের অনুমোদন মিলল।