‘‘গত বছরের ১৮ জুলাই ডিসি কোর্টের সামনের মোড়ে আমরা যখন ৩০০-৪০০ জন একত্রিত হই, তখন ডিবি পুলিশ, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের হামলার শিকার হই। এ সময় আমার কপালের ঠিক মাঝখানে শর্টগানের গুলি লাগে। যখন আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন আমার মুখ থেকে একটি কথাই বের হচ্ছিল, ‘ভাই আমার লাশ যেন বিজয় মিছিলে যায়, লাশ যেন দাফন না করা হয়’’। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই কথাটি ব্যাপকভাবে
ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে ট্রাইব্যুনাল-২ এ সাক্ষ্য দিয়েছেন রইসুল হক নামের এক সাক্ষী।
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে কুষ্টিয়ায় ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে প্রথম দিনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে।
সোমবার ট্রাইব্যুনাল-২ এর সদস্য অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্য হলেন-জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
এদিন রইসুল হক ট্রাইব্যুনালকে বলেন, ‘‘আমি ঘটনার সময় কুষ্টিয়ায় কালি শংকরপুর এলাকায় একটি মেসে ছিলাম। ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’, ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ বলে গালি দেয়। ঐদিন রাত ১১ থেকে ১২ টার মধ্যে আমরা কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের আশপাশে মিছিল করি। ১৬ জুলাই আবু সাঈদ শহীদ হন। ঐদিন আমরা কুষ্টিয়া শাপলা চত্বর থেকে মজমপুর এর দিকে কয়েক হাজার ছাত্রজনতা মিলে মিছিল বের করি। মিছিলের সময় আমরা পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের বাধার সম্মুখীন হই। এরমধ্য দিয়েও আমরা মিছিল সম্পন্ন করি।’
তিনি বলেন, ‘‘পরবর্তীতে ১৮ জুলাই ২০২৪ সালে ডিসি কোর্টের সামনে মোড়ে আমরা যখন ৩০০-৪০০ জন একত্রিত হই তখন ডিবি পুলিশ, ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের হামলার শিকার হই। তারপর আমরা বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাই। পরবর্তীতে যখন আমরা একত্রিত হয়ে আন্দোলন শুরু করি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আমাদের উপর টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। তখন আমার কপালের ঠিক মাঝখানে শর্টগানের গুলি লাগে। যখন আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় তখন আমার মুখ থেকে একটি কথাই বের হচ্ছিল, ‘ভাই আমার লাশ যেন বিজয় মিছিলে যায়, লাশ যেন দাফন না করা হয়’’।
রইসুল হক বলেন, ‘গত বছরের ৫ আগস্টের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছি জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু শেখ হাসিনাকে ফোন কলের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের দমনের জন্য বিভিন্ন পরামর্শ দেন, প্রয়োজনে আন্দোলনকারীদের গুলি করা, বোম্বিং করা, যেকোনো মূল্যে আন্দোলন দমন করার পরামর্শ ও উসকানি দেন। হামলার প্রত্যক্ষ নির্দেশদাতা ও উসকানিদাতা হিসাবে হাসানুল হক ইনু এর সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।’