বিডিআর বিদ্রোহের নামে সংঘটিত বর্বর হত্যাযজ্ঞের বিষয় তদন্তের জন্য গঠিত জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের কাছে আমি যখন সাক্ষ্য দিতে গেছি তখন বিশেষ কিছু কথা বলার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে চাপ নিতে হয়েছে। যখন সেটা আমি কমপ্লাই না করি তখন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মাধ্যমে আমাদের কাছে হুমকি-ধামকি আসে।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মহাখালী রাওয়া ক্লাবে ‘বিডিআর তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশে শহীদ পরিবারের মতপ্রকাশ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিডিআর হত্যাকণ্ডে শহীদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল লুৎফর রহমানের মেয়ে ডা. ফাবলিহা বুশরা।
ফাবলিহা বুশরা বলেন, প্রতিবেদন অনুযায়ী অপরাধী হিসেবে যাদের নাম উঠে আসছে তা দেখার পরেই শুধু কমেন্ট করতে পারবো। এর আগে কোনো কমেন্ট করতে চাই না; প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকুক এটাই আমরা চাই। সবার নিরাপত্তা চাই।
তিনি বলেন, আমি যখন সাক্ষ্য দিতে গেছি তখন বিশেষ কিছু কথা বলার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে চাপ নিতে হয়েছে। যখন সেটা আমি কমপ্লাই না করি তখন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মাধ্যমে আমাদের কাছে হুমকি-ধামকি আসে, লাঞ্চনার শিকার হই, সেটা সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা টকশোর মাধ্যমে। এমন অগণিত প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। যদি এটা চলমান থাকে তবে আইনগত ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত রয়েছি।
তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে বুশরা বলেন, আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনের মাধ্যমে সত্য জানতে পারবো। যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত প্রতিবেদন যেন জনসম্মুখে প্রকাশিত হয়। কারণ বিডিআর হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে জানার অধিকার দেশের সব নাগরিকের রয়েছে।
সাবেক বিডিআরের (বর্তমান বিজিবি) মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকিন আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, শেখ হাসিনা ভারতের স্বার্থে ও নিজের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার স্বার্থে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ভারতবিরোধী কোনো সেনা-কর্মকর্তা হলে তার অবস্থা পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনার স্বীকার হতে হবে, এটাই মেসেজ ছিল এই হত্যাকাণ্ডের।
তিনি বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের বিচার হতেই হবে, আমরা ছাড়বো না। রিপোর্টে যাদের নাম এসেছে তাদের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করতে হবে সরকারকে। মির্জাফরদের বিচার করতে হবে না হলে আরও একটা পিলখানা হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে।
শহীদ সেনা পরিবারের সদস্যরা বলেন, পিলখানায় বিডিআর হত্যাকাণ্ডে জড়িত কেউ যেন বিচার থেকে রেহাই না পায়, সে বিষয়ে সরকারের কঠোর ভূমিকা রাখতে হবে। নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কা উল্লেখ করে শহীদ পরিবারগুলো নিরাপত্তা নিশ্চিতেরও দাবি জানিয়েছেন।
রোববার (৩০ নভেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে বিডিআর বিদ্রোহের নামে সংঘটিত বর্বর হত্যাযজ্ঞের বিষয় তদন্তের জন্য গঠিত জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেয়।
কমিশনের প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) আলম ফজলুর রহমান ও অন্য সদস্যরা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে এই প্রতিবেদন জমা দেন।
কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন, মেজর জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার (অব.), ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাইদুর রহমান বীর প্রতীক (অব.), মুন্সী আলাউদ্দিন আল আজাদ যুগ্মসচিব (অব.), ড. এম. আকবর আলী ডিআইজি (অব.), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. শরীফুল ইসলাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহনেওয়াজ খান চন্দন।