Image description

পেঁয়াজ উৎপাদনে এবার বাজিমাত করেছে বাংলাদেশ। নিজেদের উৎপাদিত পেঁয়াজে চাহিদা মিটিয়ে শেষ হচ্ছে মৌসুম। আমদানি হয়নি বললেই চলে। ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকও ঝুঁকছেন উৎপাদনে। অন্যদিকে, বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি করতে না পেরে দিশাহারা ভারতীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।

ভারতের গণমাধ্যমগুলো যখন পেঁয়াজের দাম না পাওয়ায় রাস্তায় ফেলে দেওয়া, বস্তায় পচা কিংবা কৃষকের কান্নার খবর দিচ্ছে, তখন বাংলাদেশের কৃষকের মুখে স্বস্তির হাসি। রপ্তানিতে বাংলাদেশের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল ভারত এবার পেঁয়াজ নিয়ে বিপাকে। আর দেশের মানুষ খুশি দেশের পেঁয়াজ খেতে পেরে।

বর্তমানে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে মানভেদে ৯৫ টাকা থেকে ১২০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। কৃষি বিভাগ বলছে, বৃষ্টির কারণে চলতি মৌসুমে বিলম্বিত হয়েছে পেঁয়াজ চাষ। তবে সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ১০ দিনের মধ্যেই বাজারে আসতে পারে দেশি নতুন পেঁয়াজ।

বাজারে দাম বেশি থাকলেও এবার এসব টাকা আমাদের কৃষকদের পকেটে যাচ্ছে। আবার আমদানি না করার কারণে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে সামনের বছরগুলোতে পেঁয়াজের দামও কমবে, কৃষক বাঁচবে, আমদানিও করতে হবে না।- বশর অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী আবুল বশর

এদিকে দাম কিছুটা বেশি হলেও ভোক্তারা চান দেশের কৃষক বাঁচুক। ভোক্তা ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, চলতি বছরের মতো চললে পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে দেশ, আমদানি করতে না হলে বাঁচবে বৈদেশিক মুদ্রা।

 

পেঁয়াজ নিয়ে ভারতের ‘কান্না’, দেশের কৃষকের ‘হাসি’

দেশে পেঁয়াজের চাষ ও উৎপাদন

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আবহাওয়ার কারণে বাংলাদেশে বছরের পুরো সময় ধরে পেঁয়াজের উৎপাদন হয়। পেঁয়াজের মৌসুম তিন ধাপে বিভক্ত। খরিফ-২, রবি এবং খরিফ-১ মৌসুমে তিন ভাগে বিভক্ত পেঁয়াজের উৎপাদন। এর মধ্যে খরিফ-২ এর ফলন ওঠে বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে। নতুন দেশি পেঁয়াজ হিসেবে বাজারে বিক্রি হয়। এসব পেঁয়াজ এক-দুই মাস সংরক্ষণ করা যায়। মুড়িকাটা নামে এসব পেঁয়াজ আগামী এক দুই সপ্তাহের মধ্যে বাজারে আসবে।

তবে আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয় রবি মৌসুমে। দেশের মোট উৎপাদনের ৬৫-৭০ শতাংশ উৎপাদন হয় এ মৌসুমে। বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসে এ পেঁয়াজের ফলন ওঠে। এসব পেঁয়াজের গুণগত মান ভালো। তিন থেকে পাঁচ মাস ধরে সংরক্ষণ করা যায়। জুন-জুলাই মাসে ফলন ওঠে খরিফ-১ মৌসুমের পেঁয়াজ। এ পেঁয়াজের উৎপাদন তুলনামূলকভাবে কম।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে পাঁচ লাখ ৩৫ হাজার ৫৯৯ একর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়। এতে উৎপাদন হয় ৩২ লাখ ২১ হাজার ৪৩১ মেট্রিক টন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আবাদ হয়েছিল পাঁচ লাখ ১৩ হাজার ৫২৭ একর জমিতে। এতে উৎপাদন হয়েছিল ২৯ লাখ ১৭ হাজার ৩৫৪ মেট্রিক টন। এর আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরে পাঁচ লাখ ২ হাজার ৯০৯ একর জমিতে আবাদ হয়। উৎপাদন হয় ২৫ লাখ ৪৬ হাজার ৯৯৪ মেট্রিক টন।

গত মৌসুমে ২শ মণ পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। প্রথম দিকে আড়াই হাজার টাকা হলেও শেষের দিকে মণপ্রতি চার হাজার টাকাও দাম পেয়েছি। এবার বাজার ভালো থাকায় দামও বেশি পেয়েছি। সামনে আরও বেশি আবাদ করবো বলে আশা করছি।- পাবনার কৃষক মো. সিদ্দিক আলী

ভারতীয় গণমাধ্যমে দেশটির ব্যবসায়ী-চাষিদের হতাশা

কয়েকদিন ধরে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো প্রচার করছে পেঁয়াজ রপ্তানি করতে না পেরে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও কৃষকরা হতাশ। রীতিমতো কাঁদছেন তারা। বাজারে বিক্রি করতে না পেরে রাস্তায় পেঁয়াজ ফেলে প্রতিবাদও করছেন। ভারতের কোনো কোনো বাজারে কেজি দুই রুপিতে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ইকোনমিক টাইমস এবং ইটিভি এমন তথ্য দিয়েছে।

পেঁয়াজ নিয়ে ভারতের ‘কান্না’, দেশের কৃষকের ‘হাসি’

গত শনিবার (২৯ নভেম্বর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইটিভি জানায়, এবারের শীত মৌসুমে পেঁয়াজের পাইকারি দাম রেকর্ড পরিমাণ কমে গেছে। রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা ও অতিরিক্ত সরবরাহের কারণে উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না ভারতের স্থানীয় কৃষক।

ভারতীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বাংলাদেশসহ প্রধান রপ্তানি গন্তব্যে পেঁয়াজ পাঠানো বন্ধ থাকায় পুরো বাজারে বিপর্যয় নেমে এসেছে। বাংলাদেশে রপ্তানি কার্যত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মাথায় হাত ভারতের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের। দিল্লির গাজীপুর পাইকারি বাজারে আনা পেঁয়াজ বস্তায় পচে যাচ্ছে। কিছু পেঁয়াজের দাম নেমেছে কেজিপ্রতি মাত্র দুই রুপিতে, তবুও মিলছে না ক্রেতা।

বিজ্ঞাপন

পণ্য রপ্তানি ও বৈদেশিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ লোকেশ গুপ্ত ইটিভিকে বলেন, ‘বাংলাদেশ আগে ভারতের মোট পেঁয়াজ রপ্তানির এক-তৃতীয়াংশ কিনতো। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশ নিজস্ব উৎপাদন রক্ষা ও কৃষকদের স্বার্থে ভারত থেকে আমদানি বন্ধ রেখেছে।’

এখন পেঁয়াজের বাজার ভালো। কৃষকরাও ভালো দাম পাচ্ছেন। এতে কৃষকরা নতুন উদ্যমে এবারও পেঁয়াজ লাগাচ্ছে (বুনছে)। দেশের চাহিদাও পুরোপুরি মেটানো সম্ভব হচ্ছে। তবে পেঁয়াজ আমদানি করা হলে আমাদের দেশি কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।- সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. শাহাদুজ্জামান

রপ্তানি বন্ধ থাকায় প্রতি কেজি পেঁয়াজ দুই থেকে সর্বোচ্চ ১৩ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান গাজীপুর পাইকারি বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী পারমানন্দ সাইনি।

ভারতীয় রপ্তানিকারক অজিত শাহ ইকোনমিক টাইমসকে বলেন, ‘ভারতের পেঁয়াজের গুণমান ভালো হওয়ায় আগে ভালো দাম পাওয়া যেত। কিন্তু রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার সময় আন্তর্জাতিক ক্রেতারা বিকল্প সরবরাহকারী খুঁজে নিয়েছেন। এখন মৌসুমে ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না।’

ইকোনমিক টাইমসের খবর অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারত বাংলাদেশে ৭ লাখ ২৪ হাজার টন পেঁয়াজ রপ্তানি করে, যা ভারতের মোট পেঁয়াজ রপ্তানির ৪২ শতাংশ। কিন্তু ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বাংলাদেশ মাত্র ১২ হাজার ৯০০ টন পেঁয়াজ আমদানি করেছে।

পেঁয়াজ নিয়ে ভারতের ‘কান্না’, দেশের কৃষকের ‘হাসি’

ভারত থেকে বাংলাদেশের পেঁয়াজ আমদানি

বাংলাদেশের সরকারি হিসাবে চাহিদার চেয়ে উৎপাদন অন্তত চার লাখ থেকে ছয় লাখ মেট্রিক টন বেশি। তারপরেও বিদেশ থেকে সাত-আট লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করে দেশের চাহিদা মেটাতে হয়। প্রতিবেশী এবং স্থলবন্দরের সুবিধা থাকায় ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি হয়। বিগত পাঁচ বছরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫ লাখ ৭১ হাজার টন, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫ লাখ ৫৩ হাজার টন, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬ লাখ ৬৫ হাজার টন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৭ লাখ ৪৩ হাজার টন এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ লাখ ২৪ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ভারত থেকে।

এবার কমেছে আমদানিনির্ভরতা

তবে চলতি (২০২৫-২৬) অর্থবছরে পেঁয়াজ তেমন আমদানি করতে হয়নি। এর মূলে রয়েছে, দেশে পেঁয়াজের ভালো ফলন। আবার বাজারেও ভালো দাম থাকায় চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন কৃষকরা। দেশের ফরিদপুর, রাজবাড়ী, পাবনা, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, মাগুরা, মেহেরপুর, রাজশাহী, রংপুর, মানিকগঞ্জ থেকে দেশি পেঁয়াজ আসছে খাতুনগঞ্জের আড়তে। বিগত সময় বছরের এই সময়ে খাতুনগঞ্জ-চাক্তাইয়ের আড়তগুলোতে ভারতীয় পেঁয়াজে ভরপুর থাকতো। কিন্তু এবার সেই চিত্র ভিন্ন। এবার ভারতীয় কোনো পেঁয়াজই খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে পাওয়া যায়নি।

পুরো বছর দেশে পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়নি। এটি আমাদের জন্য খুবই ইতিবাচক। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হয়েছে। গত কয়েকবছর যে ডলারের সংকট চলছিল, এর মধ্যে পেঁয়াজ আমদানি না হওয়ায় ডলারের সংকট দীর্ঘায়িত হয়নি।-কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এস এম সোহরাব উদ্দিন

গত কয়েকদিন খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইয়ের আড়তগুলোতে সরেজমিনে দেখা যায়, কোনো আড়তে ভারতীয় পেঁয়াজ নেই। তবে দেশি পেঁয়াজের দাম কিছুটা বাড়তি। আড়তদার ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছরের এই সময়ে পাইকারিতে ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি ছিল ১২০ টাকা।

খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইয়ের ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ আকার ও মানভেদে ৯৫ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খাতুনগঞ্জের হামিদ উল্লা মিয়া বাজারের ব্যবসায়ী আবু তৈয়ব জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাজারে এখন একশ টাকার নিচে কোনো পেঁয়াজ নেই। সর্বোচ্চ ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের প্রচুর সরবরাহ রয়েছে।’

মধ্যম চাক্তাইয়ের বশর অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী আবুল বশর জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবছর বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ নেই। মৌসুমের শেষ হলেও এখনো দেশি পেঁয়াজ রয়েছে। পাবনা, সিরাজগঞ্জ, রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া এলাকার কৃষকদের ঘরে এখনো পেঁয়াজ রয়েছে। এতে সারাদেশের মতো খাতুনগঞ্জ-চাক্তাইয়ে পেঁয়াজের সরবরাহ স্বাভাবিক। এখন সবচেয়ে ভালোমানের দেশি পেঁয়াজ ১১০-১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ গত বছর এই সময়ে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল কেজি ১২০ টাকায়।’

দাম বেশি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাজারে দাম বেশি থাকলেও এবার এসব টাকা আমাদের কৃষকদের পকেটে যাচ্ছে। আবার আমদানি না করার কারণে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে সামনের বছরগুলোতে পেঁয়াজের দামও কমবে, কৃষক বাঁচবে, আমদানিও করতে হবে না।’

ভালো দাম পেয়ে খুশি বাংলাদেশের কৃষকরা, সামনের দিনগুলোতে আরও বেশি আবাদের আশা কৃষকদের। দেশে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয় পাবনায়। পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রামাণিক জাগো নিউজকে বলেন, ‘পাবনায় এবছর ৫৩ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। এতে প্রায় ৯ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হবে।’

পাবনার বেড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুসরাত কবীর জাগো নিউজকে বলেন, ‘পুরো বেড়া উপজেলায় ১৯৮৮ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। চলতি খরিফ মৌসুমে বৃষ্টির কারণে চাষ বিলম্বিত হওয়ায় ফলনও একটু দেরিতে আসছে। আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে আসবে। মুড়িকাটা নতুন পেঁয়াজ হিসেবে বাজারে আসবে। তাই কৃষকরা ভালো দাম পাবে বলে আশা করছি।’

পাবনার বেড়া উপজেলার মাসুমদিয়া ইউনিয়নের দয়ালনগর গ্রামের কৃষক মো. সিদ্দিক আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘বর্তমানে আট বিঘার মতো মুড়িকাটা লাগিয়েছি। পেঁয়াজ বাজারে আসতে দুই মাস লাগতে পারে। তবে চর এলাকার দিকে লাগানো পেঁয়াজ সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে বাজারে আসবে।’

এ কৃষক বলেন, ‘গত মৌসুমে ২শ মণ পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। প্রথম দিকে আড়াই হাজার টাকা হলেও শেষের দিকে মণপ্রতি চার হাজার টাকাও দাম পেয়েছি। অনেক বছর ধরে পেঁয়াজ চাষ করে আসছি। কখনো কিছু লাভ হতো, কখনো লোকসানে পড়তে হতো। এবার বাজার ভালো থাকায় দামও বেশি পেয়েছি। সামনে আরও বেশি আবাদ করবো বলে আশা করছি।’

পেঁয়াজ উৎপাদনে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ জেলা সিরাজগঞ্জ। সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. শাহাদুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘পেঁয়াজ উৎপাদনের দিক থেকে সিরাজগঞ্জ সারাদেশের মধ্যে দ্বিতীয়। গত মৌসুমে ৪৮ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে সাড়ে ছয় থেকে সাত লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ।’

তিনি বলেন, ‘এখন পেঁয়াজের বাজার ভালো। কৃষকরাও ভালো দাম পাচ্ছেন। এতে কৃষকরা নতুন উদ্যমে এবারও পেঁয়াজ লাগাচ্ছে (বুনছে)। দেশের চাহিদাও পুরোপুরি মেটানো সম্ভব হচ্ছে। তবে পেঁয়াজ আমদানি করা হলে আমাদের দেশি কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

সিরাজগঞ্জের সালথা উপজেলায় উপজেলাকেন্দ্রিক দেশের সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজের আবাদ হয়। সালথা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুদর্শন শিকদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবার পুরো বছর পেঁয়াজের বাজার ভালো ছিল। গত বছর ভালো লাভ পাওয়ায় এবার অপেক্ষাকৃত ভালোমানের বীজ লাগাচ্ছেন কৃষক। এতে ফলন আগের চেয়ে ভালো হবে।’

সালথা উপজেলার বড় লক্ষণদিয়া এলাকার কৃষক মো. মুন্নু মাতব্বর। গত বছর পেঁয়াজ চাষ করে লাভবান হয়েছেন তিনি। এবার আরও বেশি জমিতে পেঁয়াজ চাষের কথা জানিয়ে বলেন, ‘গত বছর আমাদের স্থানীয় হিসেবে ১০ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছিলাম। ১১শ মণ (৪০ কেজি হিসেবে) পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। বাজারে মণপ্রতি সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা দাম পেয়েছি।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এস এম সোহরাব উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘পুরো বছর দেশে পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়নি। এটি আমাদের জন্য খুবই ইতিবাচক। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হয়েছে। গত কয়েকবছর যে ডলারের সংকট চলছিল, এর মধ্যে পেঁয়াজ আমদানি না হওয়ায় ডলারের সংকট দীর্ঘায়িত হয়নি। এটি দেশের অর্থনীতির জন্য একটি ইতিবাচক দিক। বর্তমানে কৃষকদের হাতে যতটুকু পেঁয়াজ মজুত রয়েছে, তাতে আশা করা হচ্ছে- এ বছর আর পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে না।’