নেত্রকোনায় সাড়ে তিন কোটি টাকায় নির্মিত একটি সেতু ব্যবহারের অনুপযোগী অবস্থায় পড়ে আছে বছরের পর বছর। দুই দফা মেয়াদ বাড়িয়েও হয়নি অ্যাপ্রোচ সড়ক। ফলে সেতুটি এখন যেন দাঁড়িয়ে থাকা একটি অবকাঠামো। পথচারী ও স্থানীয়দের অভিযোগ, বর্ষা ও শুকনো মৌসুমে ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করতে হয়। এদিকে বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান এলজিইডির ঊর্ধ্বতনের ভাষ্য, ব্রিজ করার সময় স্থানীয় লোকজন অ্যাপ্রোচ সড়কের জায়গা দেওয়ার কথা থাকলেও পরবর্তী সময়ে না দেওয়ায় প্রকল্প অনুযায়ী ব্রিজের অবকাঠামোই করা হয়েছে।
নেত্রকোনা সদর উপজেলার কালিয়ারা গাবরাগাতি ইউনিয়নের কালিয়ারা গাবরাগাতি ইউপি অফিস হতে কুমারপুর ফেরিঘাট সড়ক। এ সড়কেই দাঁড়িয়ে আছে কোটি টাকার এই সেতু। ২০২১ সালে এলজিইডির বাস্তবায়নে ৩ কোটি ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার টাকায় নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কাজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কিশোরগঞ্জের এম এস মির্জা কনস্ট্রাকশন-মানুন কনস্ট্রাকশন জেভি। ঘটা করে ২০২১ সালের ২৩ অক্টোবর ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন সাবেক এমপি আশরাফ আলী খান খসরু। ২০২২ সালের ১০ আগস্টের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দুই দফায় সময় বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত নেওয়া হয়।
তবু হয়নি অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ। ফলে সেতুটি হয়ে উঠেছে ব্যবহার অযোগ্য। একদিকে গ্রামীণ সড়ক, অন্যদিকে ফাঁকা জায়গার ওপরে দাঁড়িয়ে থাকা সেতুর নিচ দিয়ে এখন ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষকে। বর্ষায় দুর্ঘটনার আশঙ্কার পাশাপাশি শুকনো মৌসুমেও ভোগান্তি পোহাতে হয়।
স্থানীয়দের কেউ বলছেন, নকশাবহির্ভূত কাজ হয়েছে। আবার কেউ বলছেন, ঈদগাহ মাঠ রক্ষায় জায়গা না দেওয়ার কারণে অ্যাপ্রোচ সড়ক আটকে গেছে। ভূমি মালিক বদলের পর দেখা দিয়েছে জায়গা অধিগ্রহণের জটিলতাও।
এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, ৪০ মিটার দৈর্ঘ্যের এই পিসি গার্ডার সেতুর কাজের প্রথম মেয়াদ শেষে দ্বিতীয় দফার সময় বাড়ানো হয় ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরে আবার বাড়ানো হয় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। কাজ শেষ হলেও সড়ক না থাকায় ব্যবহার অনুপযোগী এই ব্রিজ যেন অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়হীনতার এক প্রতিচ্ছবি।
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘এটি এমআরআইডিপি প্রকল্পের কাজ ছিল। প্রকল্প অনুযায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্পের অ্যাপ্রোচ সড়কের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের বরাদ্দ ছিল না। স্থানীয়রা প্রথমে জায়গা দেওয়ার আশ্বাস দিলেও পরে দেয়নি। আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’