Image description

‘আইডিয়াল ম্যারেজ ব্যুরো’র প্রতিষ্ঠাতা মুফতি মামুনুর রশিদ কাসেমীকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রোববার (২৩ নভেম্বর) বিকাল ৩টার দিকে ঢাকার আটিবাজারে নিজ বাসা থেকে তাকে আটক করা হয়। কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি মনিরুল হক জানান, কাসেমীর স্ত্রী তামান্না হাতুনের পক্ষে তার মামি আন্না পারভীন বাদী হয়ে গত পরশু একটি মামলা করেন। সেই মামলার ভিত্তিতেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কাসেমী বর্তমানে কেরানীগঞ্জ থানায় পুলিশ হেফাজতে আছেন।

এদিকে কাসেমীর গ্রেফতারের পর ফেসবুকে একটি আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন তার স্ত্রী তামান্না হাতুন। সেখানে তিনি লিখেছেন, কাসেমির সাথে আমি দীর্ঘ দেড় বছর কাটিয়েছি স্বাভাবিকভাবে। তার মাঝেও মারামারি বকাবকি অনেক ঝামেলা হতো। শেষ ঝামেলা তিন তালাক হওয়ার পর সে যে নোংরামিগুলো করেছে, এগুলো আমি আর মেনে নিতে পারি। আমার জীবনে একটা আশা ছিল আমি কখনোই তালাকপ্রাপ্ত নারী হব না কারণ আমি আমার স্বামীর সাথে এরকম কোন ব্যবহার করব না; যাতে আমার স্বামী নেই আমাকে তালাক দেয়।

কিন্তু সে আমাকে সেই তালাকপ্রাপ্ত নারী বানিয়ে দিল। আমার নিজের কাছে খারাপ লাগে যে আমি কি এমন অপরাধ করলাম যে আমাকে তালাক দিল। আমার বাচ্চা নষ্ট করল। মারধর, বাসায় আটকে রাখা। আপনারা অনেক জায়গায় বলছেন দেড় মাস কীভাবে একটা মেয়েকে আটকিয়ে  রাখে। সে আমাকে প্রথমে এক সপ্তাহ আটকিয়ে রাখে; এরপর আমি পালিয়ে চলে আসি মামির বাসায়। কয়দিন পর জানতে পারলাম আমি গর্ভবতী তারপর তার সাথে যোগাযোগ করি। তখন সে বলে এটার একটা সমাধান আছে তুমি তোমার মায়ের কাছে আসো; এসে তোমার মায়ের কাছে কয়েকদিন বেড়াও তখন আমার মাও গর্ভবতী ছেলে অনেক অসুস্থ। তখন আমি আমার মায়ের কাছে যাই ওখানের গাইনি ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হই । তখন আমাকে সে আবার জোর করে তার বিল্ডিং এর চার তলায় আটকে রাখে । আমি অনেক চিল্লাচিল্লি করতাম আসে পাসে হুজুরের বউরাও জানে। সবাইকে বলতো আমার নাকি মাথায় সমস্যা। আমাকে আটকে রেখে অনেক মারে; যে দাগগুলো এখনো শরীরে ভাসে।

তিনি লেখেন, আমি কখনো কল্পনা করিনি আমাকে এই পর্যায় আসতে হবে। কিন্তু তার চরিত্র, আল্লাহর বিধানকে অপমান এবং ব্যবহার করার কারণে আমি সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি এবং অসহায় নারীদের কথা ভেবে। আপনার আমাকে প্রশ্ন করেন আপনার কি একটুও কষ্ট লাগছে না তাকে জেলে দেখে। অবশ্যই কষ্ট লাগছে; কিন্তু তার গুণাহের দিকগুলো ভাবলে ভালো লাগে। একটা সময় আমি এরকম ছিলাম যদি কেউ তার দিকে আঙুল উঠাইতো আমি শুধু পারতাম না তার আঙুল ভেঙে দিতে। কিন্তু এখন আমি তাকে পরিস্থিতি এনে ফালাইছি তার এই নোংরা চরিত্রের জন্য।

সে যদি আমার সাথে গোনাহে লিপ্ত হতে পারে; জোর করে রাখতে পারে একটা বাসায়। তুমি কি অন্য কোন মেয়ের সাথে ব্লক করেনি বা করবে না তার কি গ্যারান্টি দিতে পারেন আপনারা? আমি অনেক চেষ্টা করছি এগুলো আপষে শেষ সমাধান করার জন্য। কিন্তু আমাকে কেউ সাহায্য করেনি। আমি বড় বড় ওলামা-একরামের কাছে সাহায্য চেয়েছি কিন্তু তারা ওইটা সমাধান দেয়নি। না পেরে আমি এই সিদ্ধান্ত বেছে নিয়েছি। আমরা নাস্তিক এবং আলেমগণ যারা আমাদের ইসলামকে ব্যবহার করতেছে সবার বিরুদ্ধেই মুখ খুলব শুধু নাস্তিকদের বিরুদ্ধে মুখ করব তা নয়, আমাদের আইন আমাদের হিসাব সমান সমান। আল্লাহ আমাদেরকে তাই বলেছে। নিজেদের লোক অপরাধ করবে বলে তাকে ছেড়ে দিবে তা নয়। আলেম হোক বা কাফের শাস্তি সবার জন্য সমান। যারা ইসলামকে সম্মান করে এবং বড় আলেম মাওলানা তাদেরকে আমরা অবশ্যই সম্মান করি। কিন্তু যারা ইসলামকে ব্যবহার করে তাদের পরিণত আমরা মনে করব সামনে ইনশাল্লাহ।

তথ্যমতে, গ্রেফতারের পর ঘটনাটি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা চলছে। মামুনুর রশিদ কাসেমীর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।