Image description

২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪-এ জাতীয় সংসদের নির্বাচন নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক। বিশেষ করে ২০১৮ সালের ভোটকে নিশিরাতের ভোট বলা হয়। পছন্দের প্রার্থীকে জেতাতে ভোটের আগের রাতেই সব ব্যালটে সিল মেরে বাক্সে ভরে রাখা হয়েছিল। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তা করেছিলেন সে সময়ের রিটার্নিং কর্মকর্তা থেকে শুরু করে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা প্রত্যেকেই। ভোটের দায়িত্বে থাকা ওই সব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরই মধ্যে শেখ হাসিনার নিশিরাতের নির্বাচন নিয়ে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে সে সময় দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের বাইরেও ৬৪ জেলায় ভোটের তদারকির দায়িত্বে থাকা সচিবদের কী হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ২০১৮ সালের ভোটে প্রথমবারের মতো তদারকির ৬৪ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ওই সময়ের সচিব ও সাবেক সচিবদের। যারা সাবেক ছিলেন তারাও কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠানে চুক্তিতে দায়িত্ব পালন করছিলেন। জানা গেছে, নিশি রাতের ভোটের সহযোগী, সহকারী সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কপাল পুড়তে যাচ্ছে। জেলায় একজন রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব থাকলেও প্রত্যেক কেন্দ্রের দায়িত্ব ছিল প্রিসাইডিং কর্মকর্তার। একজন রিটার্নিং কর্মকর্তার অধীনে শত শত প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ছিলেন। যারা প্রত্যেকেই দায়িত্বে অবহেলার মহোৎসব করেছেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ওই সময়ে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে সরানো হয়েছে। আরও কঠোর শাস্তিও আসতে যাচ্ছে। নিশি ভোটের রিটার্নিং কর্মকর্তা বা কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তার বাইরেও তদারকির দায়িত্বে থাকা সেই সচিবদের কী হবে, তা নিয়েও নানা প্রশ্ন ঘুরছে। এর পরও একবার করোনার নিয়ন্ত্রণ এবং আইনশৃঙ্খলার জন্য ৬৪ জেলায় সচিবদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ভোটের জন্য ওই একবারই দায়িত্ব পেয়েছিলেন সচিবরা। অতি উৎসাহী হয়ে কর্মকর্তারা আগের রাতেই ভোটের কাজ সম্পন্ন করেছিলেন।

সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ভোটের অনাস্থা হয়েছে এটা ঠিক, তবে সেই ভোটে কার কতটুকু অনিয়ম সম্পৃক্ততা ছিল এটা তদন্তে উঠে আসুক আগে। যারা প্রকৃতপক্ষে অপরাধী তাদের বিচার হওয়া উচিত। একাদশ নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র ছিল ৪০ হাজার ৫১টি। ৪০ হাজার ১৮৩ জন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তারা প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সহকারী প্রিসাইডিং, পোলিং কর্মকর্তা, নিরাপত্তা বাহিনীসহ সাত লাখের বেশি সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী নির্বাচনের দায়িত্বে ছিলেন। সেই সময় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ২০১৮ সালের জুলাই থেকে গোয়েন্দা সংস্থা এবং পুলিশের মাধ্যমে ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী যাচাইবাছাই করা হয়। অতীতের কোনো নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভোটের পার্থক্য ১৫ শতাংশের বেশি না হলেও একাদশে তা ছিল ৬৪ শতাংশ!

বাংলাদেশ পরিসংখ্যা ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, জনসংখ্যার সাড়ে ৩ শতাংশ অর্থাৎ ৫৮ লাখ বাংলাদেশি বিদেশ থাকেন। কিন্তু একাদশ নির্বাচনে ১০৩টি আসনের ২১৩ ভোট কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়ে। ১ হাজার ২০৫ কেন্দ্রে ভোট পড়ে ৯৬ থেকে ৯৯ শতাংশ। ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ ভোট পড়ে ৬ হাজার? ৪৮৪টি কেন্দ্রে। অর্থাৎ ৭ হাজার ৯০২ কেন্দ্রে ৯০ শতাংশের বেশি ভোট পড়ে, যা মোট ভোট কেন্দ্রের প্রায় ২০ শতাংশ। সাধারণত ৭৫ শতাংশের বেশি ভোটার উপস্থিতিকে অস্বাভাবিক মনে করা হয়। ৫৮৬ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের নৌকা শতভাগ ভোট পায়। ধানের শীষ ১ হাজার ২৮৫ কেন্দ্রে একটি ভোটও পায়নি।