Image description
ডিসেম্বরকে টার্গেট করে প্রস্তুতি, তপশিলের আগে রাজনৈতিক দল, বিশিষ্ট জন, গণমাধ্যম ব্যক্তিদের সঙ্গে সংলাপ করবে কমিশন

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন নিয়ে ভাবছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এখন ইসির কাছে মূল ফোকাস জাতীয় নির্বাচন। চলতি বছরের ডিসেম্বরকে টার্গেট করে জোরেশোরে প্রস্তুতি শুরু করেছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। জাতীয় নির্বাচনের তপশিলের আগে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, সমাজের বিশিষ্টজন এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিদের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সম্প্রতি একাধিক নির্বাচন কমিশনারও জানিয়েছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে তারা অন্য নির্বাচনে মনোযোগী দিতে চায় না। সেক্ষেত্রে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত ঘটবে। তখন প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হবে না।

নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, আমাদের মূল ফোকাস জাতীয় নির্বাচনে। জাতীয় নির্বাচনের আগে একটা রি-অ্যাকশন টাইম দিতে হবে। এমন ইভেন্ট আসা ঠিক হবে না, যা জাতীয় নির্বাচনকে ব্যাহত করে। জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি থাকলে সব নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়ে যায়।

গত ৬ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. তোফায়েল আহমদে জানিয়েছিলেন, জাতীয় নির্বাচেনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন হয়ে যাওয়া উচিত। এরপর গত ৮ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি সরকার স্থানীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। গত ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কাছে নির্বাচন সংস্কার কমিশন জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সুপারিশ করেছিল।

বুধবার বরিশালে এক মতবিনিময় সভায় আরেক নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ জানিয়েছেন, সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন নিয়ে আমরা জাতির কাছে ওয়াদাবদ্ধ। আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভাবছে কমিশন। জাতির সামনে সবথেকে বড় ফোকাস সংসদ নির্বাচন।

ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে কোনোভাবেই স্থানীয় সরকারের নির্বাচন আয়োজনের পক্ষ নয় ইসি। এই বিষয়ে কমিশনারও ঐকমত্য হয়েছেন। কেননা স্থানীয় সরকারের নির্বাচন আয়োজন করতে গেলে প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত ঘটবে। যথাসময়ে নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে না ইসি। যে কোনো জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের আগে নির্বাচন কমিশনকে বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করতে হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা। সেই কার্যক্রম শুরু করেছে ইসি। গত ২০ জানুয়ারি থেকে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ কার্যক্রম আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে।

যাদের জন্ম ২০০৮ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে তাদের তথ্যসংগ্রহ করা হবে। তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ হলে ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু ছবি তুলে নিবন্ধন সম্পন্ন করার কাজ। ১১ এপ্রিল পর্যন্ত নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন বলেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে নিবন্ধন কার্যক্রম শেষ করা। ভোটার তালিকার হালনাগাদ সম্পন্ন করতে প্রায় জুন পর্যন্ত সময় লেগে যাবে ইসির। এছাড়া সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, পর্যবেক্ষক নিবন্ধন, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে আইন-বিধি সংশোধন, ভোটকেন্দ্র প্রস্তুতকরণ, নির্বাচনি কর্মকর্তার প্যানেল প্রস্তুত, নির্বাচনী রোড ম্যাপ ঘোষণা, নির্বাচনি মালামাল ক্রয়, বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করতেই আগস্ট মাস সময় লেগে যেতে পারে ইসির। এর পরই জাতীয় নির্বাচনের তপশিলের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে নির্বাচন কমিশন।

এদিকে, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের দাবিকে নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করার চক্রান্ত হিসেবে মনে করছেন। তারা বলছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে আয়োজনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) কর্তৃক সম্প্রতি পরিচালিত জরিপটি ছিল একপেশী। বিশেষ এজেন্ডা বাস্তবায়নের অংশবিশেষ।

এ বিষয়ে বিশিষ্ট সাংবাদিক ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, কোনোভাবেই সরকার প্রতিষ্ঠান এই ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কোনো জরিপ পরিচালনা করতে পারে না। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন আয়োজনের দাবি একটি দুরভিসন্ধিমূলক।

গত ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, যদি অল্প কিছু সংস্কার করে ভোটার তালিকা নির্ভুলভাবে তৈরি করার ভিত্তিতে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হয় তাহলে ২০২৫ সালের শেষের দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়তো সম্ভব হবে। আর যদি এর সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রত্যাশিত মাত্রার সংস্কার যোগ করি তাহলে আরো অন্তত ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে। মোটাদাগে বলা যায়, ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়।

প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। ফলে এর আগে কোনোভাবেই নির্বাচন কমিশন স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচন আয়োজনে আগ্রহী নয়। প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিও জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে আপত্তি জানিয়েছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পক্ষে নয় আমরা। আগামী জুলাই-আগস্টের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানান তিনি। তবে বিএনপির দ্রুত জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। অন্যদিকে, জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান জানান, জামায়াত ডিসেম্বর বা তার কিছু পরে নির্বাচনের পক্ষে।