Image description
♦ সআন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস আজ ♦ প্রতি চারজনের তিনজন স্বামীর সহিংসতার শিকার ♦ ১০ মাসে ধর্ষণ ৫২৫ যৌন হয়রানি ৮৬ পারিবারিক সহিংসতার শিকার ৫৭ নারী

দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। খোদ অন্তর্বর্তী সরকারের মহিলা ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ এ কথা স্বীকার করেছেন। গতকাল সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা কমেনি বরং বেড়েই চলেছে। বিভিন্ন সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে, দেশে গত ১০ মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন মোট ৫২৫ জন নারী। যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ৮৬ জন এবং পারিবারিক সহিংসতার শিকার হন ৫৭ জন নারী। এ সময়ে যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হন ২৫ জন নারী এবং এ কারণে ২০ জনকে হত্যা করা হয়। এ অবস্থার মধ্যে আজ পালিত হবে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস। সেই সঙ্গে আজ শুরু হচ্ছে ১৬ দিনের নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ। এবার এর প্রতিপাদ্য ‘নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা বন্ধে ঐক্যবদ্ধ হই, ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করি।’

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের যৌথভাবে করা এক জরিপে জানা যায়, দেশে প্রতি চারজন নারীর মধ্যে তিনজনই স্বামীর সহিংসতার শিকার। এর মধ্যে রয়েছে শারীরিক, যৌন ও মানসিক নির্যাতন, অর্থনৈতিক বঞ্চনা এবং নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণ। গত অক্টোবর মাসে প্রকাশিত ‘নারীর প্রতি সহিংসতা জরিপ-২০২৪’ শীর্ষক এই জরিপে উল্লেখ করা হয়, প্রতি চারজনের মধ্যে তিনজন নারী জীবনে একবার জীবনসঙ্গী বা স্বামীর দ্বারা সহিংসতার শিকার হন।

নারীর ওপর হওয়া সহিংসতার চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, একের পর এক ধর্ষণ, ধর্ষণ শেষে নির্মমভাবে হত্যা এবং যৌতুকসহ পারিবারিক কলহের জেরে হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে নারীরা। ছোটখাটো পারিবারিক ঝগড়ার কারণে স্বামীর হাতে প্রাণ হারাচ্ছে অনেকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সারা দেশে নারী নির্যাতন এখন এক ধরনের উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নারী নির্যাতনের ঘটনাগুলো প্রতিনিয়ত ফলোআপ করা উচিত। প্রতি জেলার ইউএনও, ডিসি এবং মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের বিভিন্ন শাখা তারা এগুলো নিয়ে কখনো ফলোআপে থাকে না। প্রশাসনের সব পর্যায় থেকে এ বিষয়ে যদি জবাবদিহি থাকত তাহলে নারী নির্যাতনের এখন যে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তা আর বাড়ত না।

বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট এলিনা খান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশে যে সরকারই থাকুক নারীর প্রতি যে সহিংসতা হচ্ছে তা ঠিকমতো নজরদারি করা হয় না। সব সরকারই নারী নির্যাতন দমানোর কথা বলে, এ-সংক্রান্ত আইন করে কিন্তু এ বিষয়টি ফলোআপের সময় তার বাস্তবায়ন আর করে না। মহিলা ও আইনবিষয়ক মন্ত্রণালয়গুলোর দায়িত্বে যারা আছেন এবং তাদের যে সভা হয় সেখানে তারা যদি পারিবারিক সহিংসতাসহ সব ধরনের নারী নির্যাতনের ঘটনাগুলো কোথায় বেশি হচ্ছে এবং তা কেন ঘটছে তা দেখেন এবং এগুলো নিরাময়ের জন্য ব্যবস্থা করেন তাহলে নারী নির্যাতনের ঘটনা কমে আসবে।

আইন অনুযায়ী দেশে যৌতুক দেওয়া ও নেওয়া অবৈধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এরপরও প্রকাশ্যেই যৌতুক নেওয়া ও দেওয়া প্রথা চালু আছে। বিয়ের সময় একবার যৌতুক নেওয়ার পর কয়েক বছর যেতেই আবারও যৌতুকের জন্য ভুক্তভোগী নারীর ওপর তার বর ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন নির্যাতন করছে। আর যৌতুক দিতে অস্বীকৃতি জানালেই নেমে আসছে অমানুষিক নির্যাতন। হাত-পায়ের রগ কেটে, শরীরে আগুন দিয়ে এবং মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে চালানো হচ্ছে বর্বরতা। আবার যৌতুকের কারণে ‘সাধারণ জখম’-এর শিকার নারীদের এখন থেকে মামলার আগে মধ্যস্থতায় যেতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন’ সংশোধন করে মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া বাধ্যতামূলক করে গত ১ জুলাই অধ্যাদেশ জারি করে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন এতে যৌতুকের আইনি প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অ্যাডভোকেট এলিনা খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যৌতুকের কারণে ‘সাধারণ জখম’-এর শিকার নারীদের এখন থেকে মামলার আগে মধ্যস্থতায় যেতে হবে এ প্রক্রিয়ার কারণে আইনজীবীরা লাভবান হবেন, কিন্তু যৌতুকের কারণে নির্যাতিত নারী ভুক্তভোগী হবেন। এতে যৌতুকের আইনি প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্ত হবে।