আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হওয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কিছুটা শঙ্কা থাকলেও পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে কাজ করছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকায় নির্বাচনের মাঠে আলোচনায় রয়েছেন দলটির গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থীরা। প্রাথমিকভাবে ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করলেও তফসিল ঘোষণার পর চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করতে যাচ্ছে দলটি। দলটির একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, আগামী নির্বাচনে নারীদের জন্য কমপক্ষে ৩-৫টি আসন ছাড়তে যাচ্ছে দলটি। পাশাপাশি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের জন্যও আসন ছাড়ার পরিকল্পনা রয়েছে। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকা ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাদের জন্যও ছাড়া হচ্ছে আসন। বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকদের জন্যও থাকবে আসন। সব মিলিয়ে ইনক্লুসিভ চেতনায় ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করবে দলটি।
পাঁচটি দাবিতে গত এক মাসেরও অধিক সময় ৭টি দলকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এসব দলের সঙ্গে জোট না হলেও আসন সমঝোতায় যাবে দলটি। ধারণা করা হচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৩০টি আসনে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে জামায়াত। বাকি ৭০টি আসন বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের সহযোগিতা করবে দলটি। সব মিলিয়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৮০টি আসনে সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে সংসদে যেতে চায় জামায়াতে ইসলামী।
বর্তমানে ৩০০টি আসনেই প্রচার চালাচ্ছে জামায়াতের নেতাকর্মীরা। এর মধ্যে ২-৩টি আসনে প্রার্থিতা নিয়ে কিছুটা দ্বন্দ্ব থাকলেও বাকি আসনগুলোতে জয়ের জন্য সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। যেসব আসন দল ও ব্যক্তির জন্য ছেড়ে দেওয়া হবে সেসব আসনে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে-এমন প্রশ্নে জবাবে তৃনমূলের একাধিক নেতা জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা কেন্দ্রের নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। কেন্দ্র আমাদের প্রচার চলমান রাখতে বলেছে, আমরা প্রচার করছি। দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে ভোটারদের কাছে যাচ্ছি। কেন্দ্র যদি আসন সমঝোতায় অন্য কোনো দলের নেতার জন্য আমাদের প্রচার চালাতে বলে আমরা জামায়াতের প্রার্থীদের জন্য যেভাবে কাজ করছি একইভাবে তার জন্য কাজ করব।
জামায়াত চূড়ান্ত প্রার্থী কবে ঘোষণা করবে এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের জনকণ্ঠকে বলেন, নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করলে দ্বিতীয় সপ্তাহে চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করা হবে।
তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে ইনক্লুসিবভাবেই প্রার্থী ঘোষণা করবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সমাজের প্রতিটি সেক্টরের প্রতিনিধি- যেমন, বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধি, সাংবাদিক, আলেম, নারী ও তরুণদের সম্মিলিত উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাবে।
জামায়াতের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র থেকে জানা যায়, নির্বাচনে আসন সমঝোতায় চমক দেখাবে জামায়াতে ইসলামী। বর্তমানে জামায়াত যে ৭ দলকে নিয়ে মাঠের আন্দোলন করছে তার বাইরেও আরও কয়েকটি ছোট-বড় রাজনৈতিক দল যুক্ত হবে জামায়াতের সঙ্গে। যার জন্য ১০০র অধিক আসন ছাড় দিতে যাচ্ছে জামায়াত।
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী সময় সনাতন ধর্মের নেতা ও ধর্মাবলম্বীদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে জামায়াতে ইসলামী। একটি সূত্র থেকে জানা যায়, আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট। এই সংগঠনটি বাংলাদেশের ২৩টি হিন্দু ধর্মীয় সংগঠনের একটি মহাজোট, যার মধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা অন্তর্ভুক্ত। এর বাইরেও রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু ছাত্র মহাজোট, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু যুব মহাজোট, বাংলাদেশ হিন্দু মহিলা মহাজোট, বাংলাদেশ হিন্দু স্বেচ্ছাসেবক মহাজোট।
বাংলাদেশে ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল মনে করা হয় জামায়াতে ইসলামীকে। অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের বর্তমান নেতৃত্বের একটা অংশের সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব থাকলেও জানা গেছে নির্বাচনের আগে জামায়াতের হয়ে মাঠে প্রভাব বিস্তার করবে হেফাজতে ইসলাম। সুন্নিদের কয়েকটি সংগঠনের সঙ্গে জামায়াতের মতাদর্শগত পার্থক্য থাকলেও বড় একটি অংশ যুক্ত হতে যাচ্ছে জামায়াতের সঙ্গে। সরাসরি জামায়াতের ব্যানারে কাজ না করলেও স্বতন্ত্র ও অন্য ব্যানারে কাজ করবে এসব সংগঠন।
জামায়াতের বিশ্বস্ত একাধিক সূত্র জানায়, ফাঁসির আসামি স্বৈরাচার হাসিনার পতনের আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকা কয়েকজন ছাত্রনেতাকে গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছে জামায়াত। আলোচনায় রয়েছে গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক আবু সাদিক কায়েম, সিবগাতুল্লাহসহ বিভিন্ন ছাত্র সংসদের প্রতিনিধি। ধারণা করা হচ্ছে ৩-৫টি আসনে তরুণদের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচন করবে তারা।
একটি সূত্র থেকে জানা যায়, ত্রয়োদশ নির্বাচনে ইতিহাস গড়তে চায় জামায়াত। যার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত দলটির নেতাকর্মীরা। প্রতিটি আসনকেই গুরুত্বসহকারে দেখছে জামায়াত। গত ১৫ মাসে অভ্যন্তরীণ ৩টি জরিপ সম্পন্ন করেছে দলটি। তাদের জরিপের তথ্যমতে দলটির পক্ষে ব্যাপক জনসমর্থন বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানা যায়। দলীয় জরিপের বাইরেও স্বতন্ত্র, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংগঠনের মাধ্যমে জরিপ চালিয়েছে জামায়াত। প্রতিটি তথ্যেই জামায়াত চমক দেখাতে পরে বলে মনে করছেন তারা।