Image description
 

পেঁয়াজের দাম কমাতে আমদানির সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। শেষ পর্যন্ত আমদানির অনুমোদন না হলেও এর ঘোষণার প্রভাবে বাজারে সামান্য কমেছে পেঁয়াজের দাম। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১০০-১১০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ১১০-১২০ টাকা। তবে ভালো মানের বাছাই করা পেঁয়াজ কিনতে এখনো ১২০ টাকা লাগছে।

গতকাল রাজধানীর পাইকারি বাজারগুলোতে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮৫-১০০ টাকা কেজি করে। গত সপ্তাহে তা ছিল ৯২-১০৮ টাকা।

চলতি মাসের শুরুতে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। এক সপ্তাহে কেজিতে ৪০-৪৫ টাকা বেড়ে তা ১২৫ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন ৯ নভেম্বর পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত জানান। তবে তিনি তখন এ-ও বলেন, পরবর্তী এক সপ্তাহ বাজার দেখে দাম না কমলে আমদানির অনুমোদন দেওয়া হবে। আমদানির জন্য ২ হাজারের বেশি আবেদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান উপদেষ্টা। তবে ১০ দিনেও দাম বিশেষ না কমলেও এখন পর্যন্ত আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়নি।

বিক্রেতারা বলছেন, নতুন মৌসুমের মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসতে আরও ১০ দিনের বেশি লাগবে। এর মধ্যে বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি হবে না। দেশীয় মজুত দিয়ে চাহিদা পূরণ হবে। তবে নতুন পেঁয়াজ না আসা পর্যন্ত দামও খুব বেশি কমবে না।

রাজধানীর শ্যামবাজারের পেঁয়াজের আড়ত মেসার্স মাতৃ ভান্ডারের আড়ত মালিক শহিদুল ইসলাম বলেন, আমদানির ভয়ে অনেক ব্যাপারী মজুত পেঁয়াজ দ্রুত ছেড়ে দিচ্ছিলেন। তাই দাম কিছুটা কমে আসে। তবে এখন আবার এক জায়গায় থেমে গেছে। কারণ, সরকার হুঁশিয়ারি দিলেও পরে আর আমদানির অনুমোদন দেয়নি।

পেঁয়াজের সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা কমেছে রসুনের দামও। খুচরায় আমদানির (চীনা) রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৬০-২০০ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৮০-২২০ টাকা করে।

গতকাল রাজধানীর মালিবাগ, সেগুনবাগিচা, শান্তিনগর, মানিকনগরসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগির দাম গত সপ্তাহের তুলনায় ৫-১০ টাকা কমে ১৬০-১৮০ টাকায় নেমেছে। এ ছাড়া ডিমের দাম ডজনে ৫-১০ টাকা কমে ১৩৫-১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সেগুনবাগিচা বাজারের ডিম ব্যবসায়ী নূর ই আলম বলেন, এখন আবহাওয়া ভালো থাকায় ফার্মের মুরগি ও ডিমের উৎপাদন ভালো। এতে সরবরাহ বেড়ে দাম কিছুটা কমেছে। শীত খুব বেশি না পড়লে এই দাম দীর্ঘদিন থাকবে বলে আশা করা যায়।

আমন মৌসুম শুরু হলেও গত এক সপ্তাহ চালের দাম না কমে একই জায়গায় রয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাধারণত আমন মৌসুম শুরু হলে চালের দাম প্রতি সপ্তাহেই কিছু কিছু করে কমে। কিন্তু এবার মৌসুম শুরুর আগে কিছুটা কমেছিল। তবে গত এক সপ্তাহ দাম স্থির রয়েছে।

রাজধানীর বাজারগুলো ঘুরে দেখা যায়, খুচরায় ভালো মানের আটাশ চালের বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬২ টাকা কেজি দরে। এ ছাড়া মাঝারি মানের আটাশ চালের দাম ৫৬-৬০ টাকা। কাটারি নাজির জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৪-৭৬ টাকা কেজি। মিনিকেট বা জিরাশাইল বিক্রি হচ্ছে ৭৮-৭০ টাকায়।

রাজধানীর মুগদা বাজারের মেসার্স মরিয়ম স্টোরের চাল ব্যবসায়ী মো. ইউনুস বলেন, ‘গত সপ্তাহে চালের মূল্য ১-২ টাকা কমেছিল। এ সপ্তাহে আগের মতোই রয়েছে। নতুন চাল না আসা পর্যন্ত মনে হচ্ছে কমবে না।’

এদিকে দুই থেকে তিন সপ্তাহ সবজির দাম কমার পর আবার বাড়ছে। শীত মৌসুমের সবজির সরবরাহ শুরু হলেও গত এক সপ্তাহে বেশ কিছু সবজির দাম কেজিপ্রতি ১০-২০ টাকা বেড়েছে। বাজারে মুলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪০-৫০ টাকা। শিম, করলা, ঢ্যাঁড়স, বেগুন, গাজর, পটোল, শসা, শালগমসহ অধিকাংশ সবজি বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা কেজি, যা এক সপ্তাহ আগে ৬০-৮০ টাকা ছিল। গত সপ্তাহ পর্যন্ত কোথাও কোথাও শিম ৪০ টাকা কেজিতেও পাওয়া গিয়েছিল।

শীতের অন্যতম জনপ্রিয় সবজি ফুলকপি ও বাঁধাকপির দামও কিছুটা বেড়ে ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি। বিক্রেতারা বলছেন, ফুলকপির দাম বেড়েছে আকার বাড়ার কারণে। এত দিন যে ফুলকপি বাজারে পাওয়া যেত এখনকারগুলো তার চেয়ে আকারে বড়।

কাঁচা মরিচের দাম আগের মতোই রয়েছে, ১৬০-১৭০ টাকা কেজি। আলু ২৫ টাকা কেজিতেই স্থির এখনো।

মানিকনগর বাজারের সবজি বিক্রেতা আনোয়ার বলেন, ‘সবজির দাম হঠাৎ আবার বাড়ছে। কিন্তু কেন, তা বোঝা যাচ্ছে না। সাধারণত এই সময়ে দাম বাড়ার কথা না।’