চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া-সাতকানিয়া আংশিক) আসনটি দক্ষিণ চট্টগ্রামের কক্সবাজার জেলার সীমান্তবর্তী আসন। লোহাগাড়ার ৯ ইউনিয়ন, সাতকানিয়া উপজেলার ১১ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে আসনটি গঠিত। এ আসনটির প্রধান সমস্যা সন্ত্রাস, কিশোর গ্যাং, মাদক ও চাঁদাবাজি। কক্সবাজার জেলার কাছাকাছি হওয়াতে হাত বাড়ালেই মিলছে মরণঘাতি মাদক ইয়াবা। আগামীতে এ আসন থেকে যে দলের প্রার্থী জিতে আসবেন তার কাছে এলাকাবাসীর প্রধান চাওয়া সন্ত্রাস ও মাদক নির্মূল করা।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য এ আসনে ইতোমধ্যে জামায়াতে ইসলামী একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে। অপরদিকে বিএনপি কোনো প্রার্থী দেয়নি। জামায়াতের প্রার্থী নগর জামায়াতের সাবেক আমির ও সাবেক এমপি শাহাজাহান চৌধুরী নির্বাচনি প্রচার শুরু করেছেন গত ফেব্রুয়ারি থেকে। দলটি মাঠ গুছিয়ে এনেছে। বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইছেন চারজন।
তারা হলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও সাতকানিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান ওরফে মুজিব চেয়ারম্যান, সাবেক প্রচার সম্পাদক ও লোহাগাড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক লায়ন নাজমুল মোস্তফা আমিন ও সাতকানিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক জামাল হোসেন। এ আসনটি বিএনপি জোটের কাউকে ছেড়ে দেওয়ার জন্যই ফাঁকা রেখেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যে কারণে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা এলাকায় খুব একটা জোরালো প্রচার চালাচ্ছেন না।
এক সময় এ আসনটি জামায়াতে ইসলামীর ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু ২০১৪ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগের এক তরফা নির্বাচনে কার্যত বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী এলাকাছাড়া ছিলেন। আর ২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানের পর উল্টোচিত্র সৃষ্টি হয়েছে। এখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এলাকাছাড়া।
অংশগ্রহনমূলক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা আসনটিতে কখনও বিজয়ী হতে পারেননি। তাই আগামীতে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলে এ আসনটি বিএনপি অথবা জামায়াতের কব্জায় যেতে পারে বলে ধারণা করছেন ভোটাররা।
লোহাগাড়ার বাসিন্দা শোয়াইবুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার প্রধান সমস্যা কিশোর গ্যাং, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা। যে প্রার্থী এসব সমস্যার সমাধানে সুনির্দিষ্ট আশ্বাস দিতে পারবেন তাকেই মানুষ জনপ্রতিনিধি হিসাবে নির্বাচিত করবে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় এখনো ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট রয়েছে। এসব সংস্কারও জরুরি।
১৯৭৩ সালের পর ২০১৪ সালে প্রথমবার এ আসনে জয় পায় আওয়ামী লীগ। চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে এ আসনটিই আওয়ামী লীগের জন্য সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের ছিল সবসময়। বিশেষ করে নব্বইয়ের পটপরিবর্তনের পর যত জাতীয় নির্বাচন হয়েছে, বেশিরভাগ সময়েই এ আসনে জয়লাভ করেছে জামায়াত।
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা নিষ্ক্রিয় কিংবা এলাকাছাড়া। পাশাপাশি এলডিপি ও জাতীয় পার্টির কোনো নেতাকর্মী তেমন সক্রিয় নেই। তবে কিছু কিছু এলাকায় এলডিপি নেতাকর্মীর ব্যানার ও পোস্টার চোখে পড়ে। নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপিও সক্রিয় রয়েছে।
জামায়াতের একক প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, ‘সন্ত্রাস, কিশোর গ্যাং ও মাদক নির্মূল করাই হবে আগামীর সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় আমার প্রথম কাজ। মানুষ যদি আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন তবে আমি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেই কাজটিই করব।’
এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে গুমের শিকার হয়েছি। দলীয় কর্মসূচি পালনে সবসময় ছিলাম। দল আমাকে মনোনয়ন দেবে বলে আশা করছি। আর মনোনয়ন পেলে অবশ্যই এলাকাবাসীর চাওয়াকে অগ্রাধিকার দিয়েই কাজ করব।’
সাতকানিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ‘এ আসনে আমাকে বিএনপি মনোনয়ন দেবে সে বিষয়ে শতভাগ আশাবাদি। কারণ দলের দুঃসময়ে আমিই মাঠে ছিলাম। দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়েছে। নির্বাচিত হলে সন্ত্রাস মাদক নির্মূলে কাজ করব।’