কুমিল্লার মেঘনায় পূর্ব শত্রুতার জেরে চাচা-ভাতিজার মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। এ সময় উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হন।
স্থানীয়রা আহতদেরকে উদ্ধার করে মেঘনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) বিকাল ৫টার দিকে উপজেলার মুগার চর গ্রামের শান্তি মিয়া ও চান বাদশার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন- শান্তি মিয়া (৫৫), মোর্শেদা বেগম (৫৫), জান্নাত (৮), রিণা আক্তার (২৫), বাছিনুর বেগম (৬০), ইমান আলী (৭০), জাহাঙ্গীর (৪৫), খুকি আক্তার (২২), মামুন মিয়া (২৮), রফিকুল ইসলাম (৫৫) ও জহির উদ্দিন (৩৫)। এদের মধ্যে ৩ জন গুরতর আহত হয়েছে। বাকীরা সবাই চিকিৎসা নিয়ে চলে যান।
স্থানীয়দের ধারণা, পুলিশের গ্রেফতার এড়াতে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন তারা।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, শান্তি মিয়া ও চান বাদশা সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা। তাদের মধ্যে আগে থেকেই মামলা মোকদ্দমা চলে আসছে এবং সেগুলো বিচারাধীন।
তারই জেরে বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) বিকালে শান্তি মিয়া ও চান বাদশা মধ্যে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে উভয়ের সমর্থকরা এসে এলোপাতাড়ি রামদা, ছুড়ি ও লাঠিসোঁটা নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এবং উভয় পক্ষের ৫টি বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। এ সময় উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে।
এ বিষয়ে মেঘনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাক্তার সাবরিনা বলেন, মারামারির ঘটনায় আহত হয়ে ১১ জন রোগী চিকিৎসা নিতে এসে ছিল। তারা সবাই চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছে।
কী ধরনের ইনজুরি হয়েছে জানতে চাইলে ডাক্তার সাবরিনা বলেন, আমি তখন ছিলাম না। রাত ৮টার সময় আমি দায়িত্ব নিয়েছি।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত ৫টি ঘরের মধ্যে শান্তি মিয়ার দুটি, চান বাদশার দুটি ও ইমান আলীর একটি ঘর ভাঙচুর করে। এর মধ্যে শান্তি মিয়ার ঘর ভাঙচুরসহ লুটপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী আহত খোরশেদা বেগম জানান, তার ছেলে শাহপরানকে মঙ্গলবার রাতে তুলে নিয়ে গিয়ে বেঁধে রেখে মারধর করা হয়। পরে মাচা চুরির ঘটনার বিষয়টি স্বীকার করানোর জন্য বিভিন্ন জনের নাম বলতে চাপ দেওয়া হয়। আজ এ ঘটনা স্থানীয়দের জানালে প্রতিপক্ষ ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের বাড়িঘরে হামলা চালায়। এতে টিনের বেড়া, দরজা, জানালা, ফ্রিজ, থাই গ্লাসসহ আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়।
অন্যদিকে প্রতিপক্ষ জহির দাবি করেন, শাহপরান বিভিন্ন সময় মাচা, চুলা, জুতা—এ ধরনের জিনিসপত্র চুরি করে। এ নিয়ে কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
মেঘনা থানার ওসি আবদুল জলিল বলেন, আমি কুমিল্লায় ছিলাম, খবর পেয়ে এস আই মশিউরকে ঘটনা স্থলে পাঠিয়েছি। তবে খবর নিয়ে জানতে পেলাম শান্তি মিয়া ও চান বাদশা উভয়েই সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা। তাদের মধ্যে পূর্ব থেকেই মামলা মোকদ্দমা চলে আসছে, তারই জেরে আজকের ঘটনা। লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা সঠিক তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেবো। বিস্তারিত এস আই মশিউর বলতে পারবেন। তবে মুগার চর গ্রামে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।
এস আই মশিউর রহমান বলেন, খবর পেয়ে ওসি স্যারের নির্দেশে ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই পক্ষের কোনো পুরুষ লোক পাইনি। স্থনীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, শান্তি মিয়া ও চান বাদশা তারা সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা, তাদের মধ্যে পূর্ব থেকেই মামলা মোকদ্দমা চলে আসছে। তারই জেরে আজকে উভয়ের মধ্যে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে তাদের সমর্থকরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এবং উভয় পক্ষের বাড়িঘরে হামলা ভাঙচুর করে। এ সময় নারী-শিশুসহ অন্তত ১০/১৫ জন আহত হয়েছে এবং ৫টি ঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে তিন জন গুরুতর আহত হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।