ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা ও প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতিতে বদলে গেছে মানুষের জীবনযাত্রা। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও বাড়ছে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা। বাজার সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, দেশে বছরে প্রায় ৫০ লাখ মোবাইল ফোন বিক্রি হয়। সব মিলিয়ে মোবাইল ফোনের বার্ষিক বাজার এখন প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার।
দেশে মোবাইল ফোন উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি বাইরের দেশ থেকে স্মার্টফোন আমদানিও বাড়ছে। প্রযুক্তির পরিবর্তনের গত এক দশকে দেশ এগিয়েছে নতুন ডিজিটাল বাস্তবতার দিকে। বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, পুরো মোবাইল বিক্রির প্রায় ৭৫ শতাংশই অফিসিয়াল চ্যানেলের ফোন। বাকি এক-চতুর্থাংশ বা প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার বাজার দখলে রেখেছে আনঅফিসিয়াল মোবাইল ফোন।
বাংলাদেশের মোবাইল বাজারে স্মার্টফোনই এখন প্রধান চালিকা শক্তি। তবে বিক্রির সংখ্যায় ফিচার ফোনও পিছিয়ে নেই। চলতি অর্থবছরের প্রথম কোয়ার্টার (জুলাই–সেপ্টেম্বর ২০২৫) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, স্মার্টফোন ও ফিচার ফোন প্রায় সমপরিমাণ বিক্রি হয়েছে। যদিও টাকার অঙ্কে পুরো বাজারের প্রায় ৮০ শতাংশই স্মার্টফোন।
মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওনার্স অব বাংলাদেশের (এমআইওবি) সভাপতি জাকারিয়া শহীদ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস–কে বলেন, ‘স্মার্টফোনের বাজার কোয়ার্টারভিত্তিক ওঠানামা করে। সর্বশেষ কোয়ার্টারে আমরা দেখেছি, ফিচার ফোন ও স্মার্টফোনের বিক্রির হার ৫০/৫০। এ সময়ে দুই ধরনের মিলিয়ে ১২ লাখের বেশি মোবাইল সেট বিক্রি হয়েছে। টাকার হিসেবে অবশ্য স্মার্টফোনের বাজার অনেক বড়।’
আমদানির তথ্য বলছে, বিগত দুইবছরে দেশে কোনো ফিচার ফোন (২জি) আমদানি হয়নি। সর্বশেষ ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মাত্র ১৫ হাজার ফিচার ফোন আমদানি করা হয়েছে। অর্থাৎ দেশের ফিচার ফোনের চাহিদা মেটাচ্ছে দেশীয় কারখানায় উৎপাদিত ফিচার ফোন। তবে স্মার্টফোনের বাজারের চিত্র উল্টো।
জনপ্রিয়তা বাড়ছে কম-রেঞ্জ স্মার্টফোনের
ক্রেতারা মোবাইল ফোন কেনার সময়ে এর ব্যাটারির স্থায়িত্ব, রিফ্রেশ-রেট ও ক্যামেরা ফিচারকেও বিবেচনায় রাখেন। এক্ষেত্রে স্মার্টফোনের বাজারে ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকার ফোনসেটের সবচেয়ে বেশি চাহিদা। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, শিক্ষার্থী, দৈনন্দিন ব্যবহারকারী, শ্রমজীবী মানুষ তথা স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষ এই রেঞ্জের ফোনকে তাদের প্রয়োজন ও বাজেটের জন্য সেরা সমন্বয় মনে করছেন। এই দামের ফোনে গ্রাহকরা ক্যামেরা, রিফ্রেশ রেট ও ব্যাটারি পারফরম্যান্সকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।
উপজেলার পর্যায়ের এক খুচরা স্মার্টফোন সেলার সাব্বির আহমেদ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিভিন্ন ব্রান্ডের ১৫-২৫ হাজার টাকা দামের স্মার্টফোনগুলোর এখন চাহিদা অনেক বেশি। বিশেষ করে শিক্ষার্থী এবং শ্রমজীবী মানুষ এই দামে ভালো মোবাইল নিতে চান। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় অনলাইন থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতে কিংবা অনলাইনে কোর্স করতে অনেকে মোবাইল কিনতে চান। স্থানীয় পর্যায়ে তারা চান ২০ হাজারের কম দামের মোবাইল নিতে। সবমিলিয়ে আমাদের মোট মোবাইল বিক্রির প্রায় ৭০-৭৫ শতাংশই ১৫-২৫ হাজার টাকা দরের মোবাইল।
রংপুরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সুমাইয়া খাতুন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমার আম্মুর স্মার্টফোনটি হঠাৎ করেই নষ্ট হয়ে গেছে। তাৎক্ষণিকভাবে অনলাইনে বিভিন্ন মোবাইল দেখি। পরে ২০ হাজারের মধ্যে ভালো ব্যাটারি পারফরম্যান্স, ক্যামেরা ও প্রসেসর দিকে নজর রেখে একটি স্মার্টফোন পছন্দ করে কিনেছি। এই রেঞ্জে ভালো মানের স্মার্টফোন পাওয়ায় মোবাইল কেনা বেশ সহজ হয়েছে।
উৎপাদন বাড়লেও আমদানির নির্ভরতা কমছে না পুরোপুরি
বিদেশ থেকে আসা যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে স্থানীভাবে কম রেঞ্জের স্মার্টফোনগুলোর উৎপাদন হয়। এই উৎপাদন গত কয়েক বছরে ব্যাপকভাবে বেড়েছে। তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত .এক কোটির বেশি ফিচার ফোন উৎপাদন হয়েছে। া সময় ৬৭.৩৬ লাখ ৪জি মোবাইল এবং আড়াই লাখ ৫জি মোবাইল তৈরি করা হয়েছে। এর আগে ২০২৪ সালে এক কোটি ৮৭ লাখের বেশি ফিচার ফোন, ৮১ লাখ ৩৯ হাজার ৪জি এবং ৩ লাখ ৩০ হাজারের বেশি ৫জি উৎপাদন করা হয়েছে।
উৎপাদনের পাশাপাশি বেড়েছে আমদানিও। ২০২৫-এর শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৪জি ফোন আমদানি হয়েছে এক লাখ তিন হাজার ৬৯৮টি, আর ৫জি ফোন আমদানি হয়েছে দুই হাজার ১৪৪টি। ২০২৪ সালে আমদানি হয়েছে ৭৯ হাজার ৩৩০টি ৪জি মোবাইল এবং ছয় হাজার ২৫৩টি ৫জি মোবাইল। আর ২০২৩ সালের ২৪ হাজার ১৯টি ৪জি এবং ১৮ হাজার ৬৬৪টি ৫জি মোবাইল আমদানি করা হয়। ২০২৪ ২০২৫ সালে কোনো ফিচার ফোন আমদানির তথ্য পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমদানি করা হয়েছিল প্রায় ১৫ হাজারটি ফিচার ফোন, যদিও ২০২২ সালে প্রায় তিন লাখ ফিচার ফোন আমদানি করা হয়।
কোন ব্র্যান্ড এগিয়ে, কোনটি পিছিয়ে
তথ্য সরবরাহকারী জার্মান অনলাইন প্ল্যাটফর্ম স্ট্যাটিস্টার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের বাজারে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত মোবাইলের বাজারে শীর্ষে রয়েছে শাওমি। বাজারে ব্র্যান্ডটির শেয়ার ১৮ শতাংশের কিছু বেশি। মূলত কম দামে ভালো কনফিগারেশনের স্মার্টফোন বাজারে নিয়ে আসায় গ্রাহকদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে কোম্পানিটি। এই তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে স্যামসাং, বাজারে তাদের শেয়ার সাড়ে ১৭ শতাংশের বেশি। এছাড়া তৃতীয় অবস্থানে থাকা ভিভোর শেয়ার প্রায় ১২ শতাংশ এবং ১০ শতাংশের কিছু বেশি শেয়ার নিয়ে তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে রিয়েলমি। এছাড়া অপ্পো শেয়ার নয় শতাংশের কিছু বেশি, টেকনো ও ইনফিনিক্সের বাজার প্রায় ৪ শতাংশ। তাছাড়া অ্যাপলের শেয়ার রয়েছে প্রায় ৫ শতাংশ।
২০২৪ সালেও ১৮.৬৮ শতাংশ শেয়ার নিয়ে মোবাইলের বাজারে শীর্ষে ছিল শাওমি। এরপরে ছিল যথাক্রমে স্যামসাং (১৮.৩৫), ভিভো (১২.২২), রিয়েলমি (১০.৬৫), অপ্পো (৯.৩৪), টেকনো (৪.১৯), ইনফিনিক্স (৪.১৩)। আর অ্যাপেলের শেয়ার ছিল ৪.৫৭ শতাংশ। এর আগের বছর ২০২৩ সালে অবশ্য শীর্ষে ছিল স্যামসাং ফোনের বাজার (২১.০৫ শতাংশ), তালিকায় এরপরেই ছিল শাওমি (১৯.৭), ভিভো (১১.৮৯), রিয়েলমি (১০.৬০), অপ্পো (৯.২১), টেকনো (৩.১২)। ইনফিনিক্স (৩.০২) এবং অ্যাপেলের বাজার ৪.০৪ শতাংশ।
বাজার দখলের চেষ্টায় আছে অন্য ব্রান্ডগুলোও। এগুলোর মধ্যে, অনার, গুগল পিক্সেল, ওয়ালটন, সিম্ফনি অন্যতম। অনারের বাজেট ও মিড-রেঞ্জ মডেলগুলোর মধ্যে এক্স ৯ সি, এক্স ৬ সি—এ মডেলগুলো দেশের বাজারে সবথেকে বেশি জনপ্রিয়। মূলত, দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি লাইফ, উন্নত ক্যামেরা, বড় ডিসপ্লে এবং বাজেটের মধ্যে শক্তিশালী প্রসেসর ও র্যাম থাকার কারণে এ মডেলগুলো গত দুই বছরে সবথেকে বেশি বিক্রি হয়েছে।
ব্যবহারকারীদের মধ্যে এআই সংযোজিত মডেলের চাহিদা বাড়ছে জানিয়ে অনার বাংলাদেশের হেড অব বিজনেস আব্দুল্লাহ আল মামুন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, সাম্প্রতিক সময়ে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সংযোজিত মডেলগুলো পছন্দের শীর্ষে রয়েছে। ক্রেতারা মোবাইল ফোন কেনার সময়ে এর ব্যাটারির স্থায়িত্ব, রিফ্রেশ-রেট ও ক্যামেরা ফিচারকেও বিবেচনায় রাখেন। সে হিসেবেও অনারের মোবাইলের চাহিদা বেশি। দেশে ফাইভ-জি প্রযুক্তি চালুর পরে ব্যবহারকারীদের মধ্যে ফাইভ-জি সমর্থিত হ্যান্ডসেটের চাহিদাও বেড়েছে।
তিনি জানান, ২০ হাজার টাকা দামের মধ্যে থাকা ফোনগুলোই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। শিক্ষার্থী ও দৈনন্দিন ব্যবহারকারীদের বড় অংশ এই রেঞ্জের ফোন বেছে নেন। তবে মিড-রেঞ্জ সেগমেন্টে দাম ও ফিচারের ভারসাম্যের কারণে পেশাজীবীদের মধ্যে এর চাহিদা উল্লেখযোগ্য। ৫০ হাজার টাকার বেশি দামের প্রিমিয়াম ফোনের বিক্রি তুলনামূলক কম হলেও ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরিতে এগুলোর গুরুত্ব বেশি।
গত দুই বছরে অনারের বিক্রি আগের দুই বছরের তুলনায় স্পষ্টভাবে বেড়েছে জানিয়ে আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, খুচরা বিক্রেতা ও ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্কের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে অনার বাজেট ও মিড-রেঞ্জ ক্যাটাগরিতে ধীরে ধীরে নিজের অবস্থান শক্ত করেছে। নতুন ফিচারসমৃদ্ধ ডিভাইস বাজারে আনা, প্রতিযোগিতামূলক দাম বজায় রাখা এবং কয়েকটি মডেল স্থানীয়ভাবে অ্যাসেম্বল হওয়ায় ক্রেতাদের কাছে অনার দ্রুতই একটি নির্ভরযোগ্য ব্র্যান্ড হিসেবে জায়গা করে নিতে পেরেছে। ফলে আমাদের বিক্রিও বাড়ছে।
আনঅফিশিয়াল ফোনের বাজার: সতর্কতা ও চ্যালেঞ্জ
দেশের স্মার্টফোনের বাজারের এই মুহূর্তে বড় চ্যালেঞ্জ আনঅফিশিয়াল ফোন। অফিশিয়াল চ্যানেলের বাইরে বিভিন্ন দেশ থেকে লাগেজে করে আনা আনঅফিশিয়াল ফোন কম দামে বিক্রি হয়। ফলে গ্রাহকরা এসব মোবাইলের দিকে ঝুঁকছেন। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের মোবাইল ফোন বাজারের প্রায় ৬০ শতাংশই অবৈধভাবে আমদানি হওয়ায় বছরে সরকারের প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন সরকারের রাজস্ব কমে যাচ্ছে অন্যদিকে ডিজিটাল নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আনঅফিশিয়াল ফোন বিক্রি পুরো বাজারের এক-চতুর্থাংশের মতো, যা ব্যবসায়িক দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ হলেও সরকারের রাজস্ব ও নিয়ন্ত্রক চাহিদার জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে।
দেশের বাজারে অন্যতম চ্যালেঞ্জ আনঅফিশিয়াল ফোন উল্লেখ করে এমআইওবি সভাপতি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, স্মার্টফোনের বড় চ্যালেঞ্জ আনঅফিশিয়াল, তবে এর পাশাপাশি অন্য সমস্যাও আছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারের মোবাইলের দামও একটা সমস্যা। যদি গ্লোবালি দেখা হয়, মেমোরি ম্যানুফ্যাকচারিং অনেক বেশি, মেমোরি ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানিগুলো মেমোরি উৎপাদনে এআই-তে শিফট করছে। সব মিলিয়ে ফোন হ্যান্ডসেট ইন্ডাস্ট্রি একটা বড় ক্রাইসিসে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক সাপ্লাই চেইনও একটা বড় ইস্যু।
আব্দুল্লাহ আল মামুন অবশ্য মনে করেন সবচেয়ে বড় সমস্যা আমদানি নির্ভরতা। তার কথায়, বাংলাদেশের স্মার্টফোন বাজার এখন কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা আমদানি নির্ভরতা। কর ও শুল্ক কাঠামোতে সামান্য পরিবর্তন এলেই হ্যান্ডসেটের দাম বাড়ে, যা সরাসরি ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতায় প্রভাব ফেলে। স্থানীয় অ্যাসেম্বলিংয়ে প্রণোদনা থাকলেও পূর্ণাঙ্গ সাপ্লাই চেইন গড়ে না ওঠায় বাজার এখনো আমদানির ওপর নির্ভরশীল।
বাজারে নকল ও অননুমোদিত ডিভাইসের প্রবাহও বড় সংকট উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব পণ্য ‘অফিশিয়াল’ ডিভাইসের ওপর গ্রাহকের আস্থা কমিয়ে দেয় এবং ব্র্যান্ডগুলোর বিক্রিতে সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও মূল্যস্ফীতির কারণে অনেক গ্রাহক এখন সহজে নতুন ফোনে আপগ্রেড করছেন না। এর ফলে ব্র্যান্ডগুলো নতুন মডেল আনার ক্ষেত্রেও বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছে। এ ছাড়া আফটার-সেলস সার্ভিস নেটওয়ার্ক এখনো সব ব্র্যান্ডের জন্য সমান শক্তিশালী নয়। পর্যাপ্ত সার্ভিস সেন্টার বা খুচরা যন্ত্রাংশ না থাকলে গ্রাহকের মধ্যে ব্র্যান্ডের প্রতি আস্থা গড়ে উঠতে সময় লাগে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আইফোনের বাজার এখনো সম্পূর্ণভাবে অবৈধ আমদানির ওপর নির্ভরশীল। বিষয়টি নিয়ে নিরাপত্তারও শঙ্কা রয়েছে। া বিষয়ে সম্প্রতি স্মার্ট টেকনোলজিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অনার ব্র্যান্ডের স্থানীয় উৎপাদক জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আইন মেনে দেশে মোবাইল ব্যবসা করা এখন সহজ। এ খাতে নতুন বিনিয়োগ বাড়ছে, কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে। দেশে উৎপাদন বাড়লেও আইফোনের বাজার এখনো সম্পূর্ণভাবে অবৈধ আমদানির ওপর নির্ভরশীল, যা বৈধ বাজারের ওপর বড় চাপ সৃষ্টি করছে।’
তবে কিস্তিতে ফোন বিক্রিকে আশার আলো দেখছেন জাকারিয়া শহীদ। তিনি বলেন, কিস্তিতে ফোন কেনার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, সেটা সঠিকভাবে ব্যবহার করলে স্মার্টফোনের বাজার উন্নত হবে। আমাদের দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রেখে স্মার্টফোনগুলো যদি কোনো অপারেটর বান্ডেলিং করতে পারে সেক্ষেত্রে এই শিল্প সমৃদ্ধি হবে।
এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে আগামী ১৬ ডিসেম্বর চালু হচ্ছে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) পদ্ধতি। কার্যকরভাবে এটি বাস্তবায়নের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছেন ব্যবহারকারীরা। জাকারিয়া শহীদ বলেন, ‘এনইআইআরকে কেন্দ্র করে একটি মহল বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে এবং সাধারণ গ্রাহকের মধ্যে আতঙ্ক তৈরির চেষ্টা করছে। বাজারে অবৈধ মোবাইল ফোনের প্রবাহে দেশীয় শিল্প বিপর্যস্ত। উৎপাদন সরঞ্জামের দাম ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেলেও স্থানীয় কারখানাগুলো এখনো ফোনের দাম বাড়ায়নি।’
‘আমাদের একটা মানসিকতা আছে, কম আয়কর দিয়ে খরচ কমিয়ে দামী ফোন কেনা। কিন্তু যে ব্যক্তি আনঅফিসিয়াল ফোন কিনছেন, তিনি চাইলেই অফিশিয়াল ফোন কিনতে পারেন। এক্ষেত্রে মানসিকতার পরিবর্তন খুব জরুরি। আনঅফিশিয়াল ফোনের বাজার বন্ধ নয়, লিগালাইজ করা প্রয়োজন’, যোগ করেন জাকারিয়া।
স্মার্ট টেকনোলজিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও অনার ব্র্যান্ডের স্থানীয় উৎপাদক জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আইন মেনে দেশে মোবাইল ব্যবসা করা এখন সহজ। এ খাতে নতুন বিনিয়োগ বাড়ছে, কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে। দেশে উৎপাদন বাড়লেও আইফোনের বাজার এখনো সম্পূর্ণভাবে অবৈধ আমদানির ওপর নির্ভরশীল, যা বৈধ বাজারের ওপর বড় চাপ সৃষ্টি করছে।’
তবে এনইআইআর বাস্তবায়নকে কেন্দ্র করে দেশের মোবাইল বাজারে নতুন সিন্ডিকেট গঠনের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ তুলেছে মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশ। সংগঠনের দাবি, দেশের মোট ব্যবসায়ীর ৬০–৭০ শতাংশকে কার্যত প্রক্রিয়ার বাইরে রেখে মাত্র ৩০ শতাংশ প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর স্বার্থরক্ষায় সিন্ডিকেট তৈরি করতে চাইছে একটি চক্র।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) সংবাদ সম্মেলন করে তারা বলছেন, আমারা এনইআইআর পুরোপুরি বাতিল চাই না। এক বছর নিয়ে সিস্টেমটি পুনর্গঠন এবং বাস্তবায়নের আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করা হোক।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা ও চট্টগ্রাম বিজনেস ফোরামের সভাপতি আরিফুর রহমান বলেন, ব্যাগেজ রুলস অনুযায়ী বৈধভাবে আনা মোবাইল সেট বাজারে বিক্রির সুযোগ সীমিত হলে লাখো ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এনইআইআর সিস্টেম চালুর ফলে সম্ভাব্য ৫৭ শতাংশ পর্যন্ত কর বৃদ্ধি মোবাইলের দাম কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেবে। এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন দিনমজুর, রিকশাচালক, দর্জি, নিম্ন–মধ্যবিত্ত পরিবার ও শিক্ষার্থীরা।
নতুন প্রজন্মের গ্রাহকরা দ্রুতই এআই–সাপোর্টেড স্মার্টফোনের দিকে ঝুঁকছেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যুক্ত এসব ডিভাইস ব্যবহারকারীর দৈনন্দিন কাজ, যোগাযোগ ও সামগ্রিক অভিজ্ঞতাকে আরও ‘স্মার্ট’ করে তুলছে। একইসঙ্গে বাজারে ৫জি–সাপোর্টেড ফোনের চাহিদাও দ্রুত বাড়ছে। বিশেষ করে মধ্যম–মূল্যের সেগমেন্টে ৫জি যুক্ত মডেলগুলোর প্রতি আগ্রহ বেশি। দ্রুত নেটওয়ার্ক, উচ্চ ডাউনলোড স্পিড এবং একাধিক অনলাইন কাজ নির্বিঘ্নে করার সুবিধার কারণে গ্রাহকরা এই ধরনের ডিভাইস বেছে নিচ্ছেন।
তবে সম্ভাবনা যতই বড় হোক, মোবাইল বাজারে কিছু কাঠামোগত বাধা রয়ে গেছে, যা দূর করতে না পারলে পুরো শিল্পের অগ্রগতি শ্লথ হয়ে যেতে পারে। এজন্য কর–শুল্ক নীতি এমনভাবে প্রণয়ন করা প্রয়োজন, যা স্থানীয় উৎপাদন ও ম্যানুফ্যাকচারিংকে উৎসাহ দেবে এবং আনঅফিশিয়াল আমদানি কমিয়ে আনবে।
এ ছাড়া ব্র্যান্ডগুলোর সার্ভিস সেন্টার ও খুচরা যন্ত্রাংশ–নেটওয়ার্ক দেশজুড়ে আরও শক্তিশালী করা জরুরি, যাতে গ্রাহক সহজে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের সুবিধা পান। তাতে ব্র্যান্ডের প্রতি আস্থা বাড়বে। পাশাপাশি স্থানীয় দক্ষতা উন্নত করতে প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম চালু করা প্রয়োজন, যাতে উন্নত প্রযুক্তিতে নতুন মডেল তৈরির সক্ষমতা বাড়ে।
বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রযুক্তি প্রবাহ বাড়াতে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ও স্থানীয় কারখানার অংশীদারিত্ব আরও শক্তিশালী করা দরকার। বিশেষত চিপসেট, ডিসপ্লে এবং ব্যাটারি–পার্টস উৎপাদনে বিনিয়োগ বাড়াতে পারলে দেশের মোবাইল বাজার আরও দ্রুত উন্নত হবে।