রাজধানীর বেশিরভাগ সরকারি হাসপাতালের টয়েলেট ব্যবহার অনুপযোগী। অপরিষ্কার আর দুর্গন্ধতো আছেই, এমনকি পানির ব্যবস্থাও নেই কোনো কোনো টয়েলেটে। নিতান্তই বাধ্য হয়ে এসব টয়েলেট ব্যবহার করছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।
২০২৪ সালে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআর,বি) এক গবেষণায় উঠে আসে সরকারি হাসপাতালের টয়লেটগুলোর ভয়াবহ চিত্র। দেখা যায়, ঢাকার সরকারি হাসপাতালের ব্যবহার উপযোগী ৬৮ শতাংশ টয়লেটের ৬৭ শতাংশই অপরিচ্ছন্ন।
ঢাকার অন্তত ১০টি সরকারি হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, কোনোটির দরজা নেই। কোনোটির দরজা থাকলেও কপাট উধাও। টয়লেট নাকি পরিত্যক্ত স্থান, তা দেখে বোঝার উপায় নেই।
বেশিরভাগ টয়লেটে নেই ফ্লাসের ব্যবস্থা। ফ্লোর এবং দেয়ালে মল-মূত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। কোথাও জমে আছে ময়লা পানি, কোনোটার আবার ঠিক নেই পানির কলটাও৷ হাত ধোঁয়ার জায়গায় দৌড়ে বেড়াচ্ছে তেলাপোকা। টয়লেটের মেঝে, কলের হাতল, লাইটের সুইচ এমনকি দরজায় জমে আছে ময়লার স্তূপ।
এমন পরিস্থিতিতেও উপায় না পেয়ে একপ্রকার বাধ্য হয়ে এসব টয়লেটই প্রতিদিন ব্যবহার করছেন হাজার হাজার রোগী ও তাদের স্বজনরা। তাদের অভিযোগ, এসব টয়লেট ব্যবহারে রোগীরা নতুন রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। রোগীর স্বজনরাও থাকেন স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে।
তবে নিজেদের হাসপাতালের টয়লেটের বেহাল দশার কথা নিজেরাই জানে না অনেক কর্তৃপক্ষ। কেউ বলছে লোকবল সংকটের কথা আবার কেউবা দোষ চাপিয়েছেন ব্যবহারকারীদের ওপর।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী বলেন, ‘সবাই শুধু অন্যের ওপর দায় চাপাতে পছন্দ করে। জনগণের কি কোনো দায়িত্ব নেই। ব্যবহারকারীদের সেই সিবিক সেন্স কি রয়েছে। পরবর্তী লোক টয়লেট পরিষ্কার অবস্থায় পাবে সেটার দায়িত্ব কেউ নিচ্ছে না।’
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ সেহাব উদ্দিন, ‘হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও ওয়ার্ডবয়ের সংকট রয়েছে। অনুমদোন পেয়েছি। সামনে আমরা আবার লোকবল চাইব, আশা করি পাবো।’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘হাসপাতালে মল-মূত্রের সঙ্গে যে জীবাণু থাকে, সেগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে কিন্তু অনেকগুলো অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়। তাই হাসপাতালের টয়লেট সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার বিকল্প নেই।’