প্রথমবারের আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিংয়ের জন্য নিবন্ধন অ্যাপ চালু করছে নির্বাচন কমিশন। এজন্য আজ মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য ‘Postal Vote BD’ অ্যাপটি উদ্বোধন করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এদিন বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টায় নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে মোবাইল অ্যাপটি উদ্বোধনের জন্য এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ইসি।
এই অ্যাপ উদ্বোধনের ফলে এবারের আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশি ভোটার, নির্বাচনি দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরা, নিজ ভোটার এলাকার বাইরে কর্মরত সরকারি চাকরিজীবী এবং আইনি হেফাজতে কারাগারে থাকা ভোটাররা আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেবেন।
নির্বাচন কমিশন ৫০ লাখ প্রবাসীকে টার্গেট ধরে পোস্টাল ভোটিং এগোচ্ছে। এ বিষয়ে প্রকল্পের টিম লিডার সালীম আহমাদ খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেড় কোটি প্রবাসীর মধ্যে এনআইডিধারী কারা, সেই হিসাব যেহেতু নেই, সেহেতু এই অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধনের মাধ্যমে একটা সংখ্যা জানা যাবে। আমরা আপাতত ৫০ লাখ ভোটারের টার্গেট নিয়ে এগোচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিবন্ধনের আওতায় আনতে আনুমানিক চার সপ্তাহের পরিকল্পনা রয়েছে। আর নিবন্ধনের জন্য পাঁচদিন করে সময় বেঁধে দেওয়া হবে। নিবন্ধনের জন্য বিভিন্ন দেশ ও রিজিওনকে ভাগ করব। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, প্রথমে দক্ষিণ আমেরিকা, এশিয়ার কিছু অঞ্চল- এভাবে ভাগ করা। পুরা বিশ্বের যেখানে যেখানে বাংলাদেশিরা আছেন, সেই হিসাব অনুযায়ী স্লট ভাগ করে দেওয়া হবে। নিবন্ধনের কাজ শেষ হলে ব্যক্তির (অ্যাপে নিবন্ধিত) ঠিকানা ধরে পোস্টাল ব্যালট পাঠানোর কাজ শুরু হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশে যারা আছেন উনারা প্রতীক বরাদ্দের সময় আগে-পিছে মিলিয়ে পেয়ে যাবেন। কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় হয়ে গেছে। দেশে ৭১টি কারাগার আছে। এসব কারাগারে আমাদের টিম যাবে, ওনাদের টিমও থাকবে। সমন্বয় করে কারাগারগুলোতে একটা করে বুথ করা হবে। সেখানে এসে স্ব স্ব জেলের কয়েদিরা তাদের নিবন্ধন করবেন।’ অঞ্চলিভিত্তিক সহায়তা দিয়ে হেল্পলাইন ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ করারও পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে সহকারী করা মহাপরিদর্শক জান্নাত উল ফরহাদ সারাবাংলাকে জানান, তারা প্রস্তুত আছেন। নির্বাচন কমিশনকে সবধরণের সহযোগিতা করা হবে। ইসির সঙ্গে কয়েকদফা আলোচনাও শেষ হয়েছে। আরও কিছু বিষয়ে আলোচনা চলছে। তার প্রত্যাশা, প্রকল্প সফল হবে।
উল্লেখ্য, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটগ্রহণের লক্ষ্যে চলতি বছরের ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি চলছে।
যেভাবে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে
ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী, নিবন্ধনের জন্য প্রবাসীদের গুগল প্লে স্টোর বা আইফোনের অ্যাপ স্টোর থেকে ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপ ডাউনলোড করতে হবে। এরপর লগইন করে অ্যাকাউন্ট তৈরির সময় মোবাইল নম্বর দিতে হবে। মোবাইল নম্বরে আসা ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) দিয়ে নম্বর নিশ্চিত করতে হবে। এরপর জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) হাতে নিয়ে সেলফি তোলা এবং আলাদাভাবে এনআইডির ছবি জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি পাসপোর্ট থাকলে তার ছবিও দিতে হবে। সবশেষে বিদেশে বর্তমান ঠিকানার তথ্য দিলে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। সিস্টেম থেকে তথ্য যাচাই শেষে অ্যাপে ‘আপনি এখন নিবন্ধিত’ বার্তা দেখা যাবে। এরপর অপেক্ষা থাকবে কেবল ব্যালট পেপারের জন্য।
ইসির নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, নিবন্ধন শেষ হলে সেই তথ্য সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে চলে যাবে। তাদের মাধ্যমে পৃথক ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা হবে। এর পর নির্ধারিত সময়ে ভোটারের ঠিকানায় তিন খামের ভেতর ব্যালট পাঠানো হবে। একটি খামের ভেতরে থাকবে ব্যালট পেপার, আরেকটিতে আসন নম্বর ও রিটার্নিং কর্মকর্তার ঠিকানা উল্লেখ থাকবে। ভোটার ব্যালট পেপারে ভোট দিয়ে দ্বিতীয় খামে ভরে নিকটস্থ পোস্ট বক্সে জমা দিলেই ভোটের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
আরেক ধাপে বলা হয়েছে, খাম পাওয়ার পর ভোটারকে তার অ্যাপে লগইন করে মোবাইল নম্বর নিশ্চিত করতে হবে, নিজের ছবি তুলতে হবে এবং খামের ওপর থাকা কিউআর কোড স্ক্যান করতে হবে। এতে প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর আসনের সব প্রার্থীর নাম দেখা যাবে। এরপর খাম খুলে ব্যালটে ভোট দিয়ে একটি ঘোষণাপত্রে সই করতে হবে। ব্যালট খামে ভরে তা নিকটস্থ পোস্ট অফিসে জমা দিলেই ভোট সম্পন্ন হবে।
নিবন্ধন প্রক্রিয়ার নির্দেশিকা দেখতে ক্লিক করুন
https://www.ecs.gov.bd/page/process-of-postal-voting-it-supported