Image description
আন্তর্জাতিক আদালতে রায়ে হাসিনার মৃত্যুদণ্ড

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় ঘিরে বন্দরনগরী থেকে জেলা শহর সর্বত্র উচ্ছ্বাস, দ্রুত রায় কার্যকরের দাবি ।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদ-ের রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে খুশির জোয়া ছড়িয়ে পড়েছে। রায় ঘোষণার সাথে সাথে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, গাজীপুর, রংপুর, ফরিদপুর ও পটুয়াখালীতে ছাত্র জনতা, শহীদ পরিবারের সদস্য ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা রাস্তায় নেমে মিষ্টি বিতরণ, শোকরিয়া আদায় ও আনন্দ মিছিল বের করেন। সর্বত্রই একটি দাবি শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে দ্রুত রায় কার্যকর করতে হবে। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যে’র প্রতিবেদনে ।

রফিকুল ইসলাম সেলিম, চট্টগ্রাম থেকে জানান, রায় ঘোষণার মুহূর্তেই উল্লাসে ফেটে পড়ে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। ষোলশহরের বিপ্লব উদ্যান থেকে শুরু করে নগরের বিভিন্ন এলাকায় ছাত্র জনতা সেজদায় লুটিয়ে আল্লাহর দরবারে শোকরিয়া আদায় করেন। রায় ঘোষণার পরই চলে মিষ্টি বিতরণ, কোলাকুলি ও সেøাগানধ্বনি। জুলাই আন্দোলনের সময় চট্টগ্রামে ১৪ জন শহীদের পরিবারের সদস্যরা রায় ঘোষণার পর আনন্দ অশ্রুতে ভেঙে পড়েন। শহীদ ওয়াসিম আকরামের পিতা শফি আলম বলেন, এ রায়ে শান্তি পেলাম। কিন্তু শুধু হাসিনা নয়, সব হত্যাকারীর সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। শহীদ ফয়সাল আহমেদ শান্তর মা কহিনূর আক্তার বলেন, আমার সন্তান ফিরে পাবো না, কিন্তু এই রায় একটু স্বস্তি দিয়েছে। রায় দ্রুত কার্যকর হোক। চট্টগ্রামে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি ও স্বৈরাচারী শাসনের সকল দায়ীদের বিচার নিশ্চিত করারও দাবি জানান শহীদ পরিবারের সদস্যরা। এদিকে আওয়ামী লীগ রায়ের প্রতিবাদে শাটডাউন কর্মসূচি দিলেও শহরে কোনো বড় ধরনের তৎপরতা দেখা যায়নি। বন্দর, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জসহ সব এলাকায় স্বাভাবিক কর্মব্যস্ততা চলে।

স্টাফ রিপোর্টার, রংপুর থেকে জানান, সন্তোষ প্রকাশ করে রংপুরের পীরগঞ্জের বাবনপুর গ্রামের শহীদ আবু সাঈদের পরিবার বাড়িতে মিষ্টি বিতরণ করেছে। সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন বলেন, রায়ে খুশি, কিন্তু কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত শান্তি পাবো না। যারা গুলি করেছে তাদেরও ফাঁসি চাই। আবু সাঈদের মা মনোয়ারা বেগম বলেন, শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের দেশে এনে শাস্তি দিতে হবে। আমার সন্তানের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। সাঈদের ভাইরা জানান, জুলাই অভ্যুত্থানে যেসব যুবক জীবন দিয়েছে তাদের আত্মার শান্তির জন্যও দ্রুত বিচার সম্পন্ন করতে হবে। জুলাই আন্দোলনের সময় প্রকাশ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে আবু সাঈদের মৃত্যুর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর আন্দোলনের দাবানল দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, যা শেষ পর্যন্ত সরকার পতনের দিকে গড়ায় এ কথাও স্মরণ করিয়ে দেন স্বজনরা।

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহী নগরের সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মিষ্টি বিতরণ করে। এসময় উপস্থিত ছিলেন এনসিপির মহানগর আহ্বায়ক মো. মোবাশ্বের আলী, সদস্য সচিব মো. আতিকুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ারুল হক রবিন প্রমুখ। তারা শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে এনে দ্রুত রায় কার্যকর করার দাবি জানান। এ ছাড়া রাজশাহী ৫ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম ও তার সমর্থকরা পুঠিয়া পৌরসভা থেকে আনন্দ মিছিল বের করেন। একদিনে একই ইস্যুতে দুটি দলের পৃথক উচ্ছ্বাসমূলক কর্মসূচি রাজশাহীতে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

গাজীপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, বিএনপি নেতাকর্মীরা আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেন। শ্রীপুরে আওয়ামী লীগের অগ্নিসন্ত্রাসের প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচিও অনুষ্ঠিত হয়। মাওনা চৌরাস্তা এলাকায় আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য দেন গাজীপুর জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন সবুজ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আক্তারুল আলম মাস্টারসহ অন্যান্য নেতারা।

ফরিদপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, দিনব্যাপী শহরে মিষ্টি বিতরণ, সেøাগানধ্বনি ও আনন্দ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। প্রেসক্লাবের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা সমবেত হয়ে রায়কে ন্যায়বিচারের প্রতিফল বলে অভিহিত করেন। আহ্বায়ক কাজী রিয়াজ, সংগঠক আনিসুর রহমান সজল ও অন্যান্য নেতারা বলেন, জুলাই গণহত্যার ন্যায়বিচারের প্রথম ধাপ এটি। সব মামলার বিচার দ্রুত করতে হবে। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকেও মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা বের করা হয়।

পটুয়াখালী জেলা সংবাদদাতা জানান, পটুয়াখালীর শহীদ হৃদয় তরুয়া চত্বরে বিএনপি নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে উল্লাস প্রকাশ করেন। এরপর ঝাউতলা চত্বর ঘুরে আনন্দ মিছিল পুনরায় শহীদ হৃদয় তরুয়া চত্বরে এসে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমাবেশে জেলা বিএনপির সভাপতি স্নেহাংশু সরকার কুট্রি, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. মজিবুর রহমান টোটন প্রমুখ বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গণহত্যার ন্যায়বিচার শুরু হয়েছে। রায় দ্রুত কার্যকর করতে হবে।

নীলফামারী জেলা সংবাদদাতা জানান, মৃত্যুদ-ের রায়ে নীলফামারীতে মিষ্টি বিতরণ করেছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতৃবৃন্দরা। গতকাল সোমবার দুপুরে ৩টায় রায় ঘোষণার পরপরই জেলা জজ আদালত চত্ত্বরে সাধারণ মানুষের মাঝে মিষ্টি বিতরণ করেন তারা। এ সময় জেলা আইনজীবী ফোরামের আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান খান রিনো বলেন, জুলাই গণহত্যার ন্যায়বিচারের জন্য দেশের মানুষ অপেক্ষা করেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এই রায় অত্যন্ত বহুল প্রত্যাশিত। আমরা বিশ্বাস করি শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রায় দ্রুত কার্যকর হলে জনগণের ন্যায়বিচারের আকাক্সক্ষা পূরণ হবে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ আইনের শাসনের রাষ্ট্র এ রায়ের মাধ্যমে তা আবারও প্রমাণিত হলো। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ফোরামের সদস্য সচিব গোলাম মোস্তফা সজীব, সদস্য নুর মোহাম্মদ মিশন, মোহাম্মদ হুজুর আলি, মুরছালিন রায়হান, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্র নেতা আব্দুস সালাম বাবলাসহ অন্যান্য আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।