জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত ডামি নির্বাচনের প্রধানমন্ত্রী খুনি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সোমবার দুপুরে বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
এ ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
এ ঐতিহাসিক রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ আবু সাঈদের পরিবার। তবে তারা দাবি করেছেন, রায় কেবল ঘোষণায় সীমাবদ্ধ যেন না থাকে। অপরাধীদের ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে এনে দ্রুত মামলায় কার্যকর কারার দাবি জানিয়েছেন তারা।
রায় ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে শহীদ আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী বলেন, আমরা শহীদ পরিবারের সদস্য হিসেবে এ রায়ে খুশি হয়েছি; কিন্তু এটি কেবল কাগজে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, রায় দ্রুত কার্যকর করুন, যাতে বিচারের ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
এ রায় গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের রক্তের প্রতি প্রতিদান বলে আখ্যায়িত করে তিনি আরও বলেন, ন্যায়বিচারের জন্য অপরাধীদের গ্রেফতার অপরিহার্য।
আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন শোকার্ত কণ্ঠে এই রায় দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, শুধু রায় ঘোষণা করে যেন শেষ না হয়। দণ্ডপ্রাপ্তদের দেশে ফিরিয়ে এনে দ্রুত ফাঁসি দিন। আমার ছেলের মতো হাজার হাজার পরিবারের ক্ষত এভাবেই পূরণ হবে। আমি মনে করি এ রায়ের মধ্য দিয়ে জুলাই শহীদ পরিবারদের স্বস্তি ফিরেছে।
আবু সাঈদের মা মনোয়ারা বেগম প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ছেলেকে হারিয়ে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তা কোনোদিন পূরণ হবে না। আর যেন কোনো মায়ের বুক এভাবে খালি না হয়। দৃষ্টান্তমূলক যে রায় হয়েছে তার বাস্তবায়ন চাই। শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এমন অত্যাচার না ঘটে।
শহীদ আবু সাঈদের সহযোদ্ধাদের সন্তুষ্টি
মামলার রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে রংপুরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদ আবু সাঈদের সহযোদ্ধারা। তারা দাবি করেছেন পলাতক অপরাধীদের অবিলম্বে ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করতে হবে, যাতে গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের রক্ত বৃথা না যায় এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
এ রায়কে তারা বিচারের প্রথম পদক্ষেপ বলে অভিহিত করলেও পূর্ণ ন্যায়বিচারের জন্য সরকারের দ্রুত রায় বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক ছিলেন আবু সাঈদ, যার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে জুলাই আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে ওঠেছিল। তারই ফলশ্রুতিতে বিগত সরকারের পতন নিশ্চিত হয়েছিল। তার সহযোদ্ধারা রায়ের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
আন্দোলনের একজন সক্রিয় সদস্য এবং মামলার সাক্ষী রিমু মুরমু বলেন, আবু সাঈদের রক্তের প্রতি এ রায় একটি উত্তর। আমরা সাক্ষ্য দিয়ে বিচারের পথ দেখিয়েছি, কিন্তু এখন সরকারের দায়িত্ব অপরাধীদের ফিরিয়ে আনা। দেরি হলে শহীদদের স্বপ্ন অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। রিমু মুরমু মামলায় শেখ হাসিনা ও কামালের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, যা রায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আরেক সহযোদ্ধা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সমন্বয়ক শাহরিয়ার সোহাগ বলেন, আমরা সন্তুষ্ট, কারণ আবু সাঈদের হত্যার নির্দেশকারীদের ফাঁসির রায় হয়েছে। কিন্তু পলাতকদের গ্রেফতার ছাড়া এটি অসম্পূর্ণ। সরকারকে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। এটি না হলে জুলাইয়ের অপরাধ বিচারের রায় অনিশ্চিত হবে।