জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধ নির্দেশদাতার ভূমিকার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড রায় আজ সোমবার বিকালে ঘোষণা করা হয়েছে।
এর কিছুক্ষণ পর কয়েকটি ওয়েবাসইটে খবর প্রকাশিত হয়, “শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায়ের প্রতিবাদ জানিয়েছেন ১০০১ জন শিক্ষক’। ‘বাংলাদেশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষকবৃন্দ’ নাম ব্যবহার করে বিবৃতিটি মিডিয়ায় পাঠানো হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মাহবুব আলম প্ৰদীপ স্বাক্ষরিত এই বিবৃতিতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০১ জন স্বাক্ষর করেছেন বলে উল্লেখ করা হলেও মোট ৬৫৯ জন শিক্ষকের নাম যুক্ত করা হয়েছে।
উক্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘আমরা গভীর ক্ষোভ ও দুঃখের সাথে লক্ষ্য করছি যে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাংলাদেশের সফল প্রধানমন্ত্রী এবং মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে রায় ঘোষণা করেছে তা প্রহসনমূলক ও অগ্রহণযোগ্য। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বর্তমানে ক্যাঙারু কোর্টের রুপ পরিগ্রহ করেছে এর স্বৈরাচারী, পক্ষপাতদুষ্ট এবং ন্যায়বিচার পরিপন্থী কার্যকলাপ তথা মিথ্যা সাক্ষাৎ প্রামাণের মাধ্যমে।”
“বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত এ দেশের কোটি জনতা আধুনিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রূপকার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এ ধরনের বিদ্বেষ ও ষড়যন্ত্রমূলক এবং পূর্বনির্ধারিত রায়কে প্রত্যাখ্যান করেছে। আমরা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের সাথে সংহতি প্রকাশ করছি এবং ক্যাঙারু কোর্টের প্রহসনমূলক রায়কে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।’’
অধ্যাপক ড. মাহবুব আলম প্ৰদীপের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে মোবাইলে পাওয়া যায়নি। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে লোক প্রশাসন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মরজিনা বেগমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মাহবুব আলম প্রদীপ দীর্ঘদিন ধরে ছুটিতে অস্ট্রেলিয়াতে আছেন।
এদিকে বিবৃতিতে নাম রয়েছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন ১৫ জন শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করে বিবৃতির বিষয়ে জানতে চায় দ্য ডিসেন্ট। তাদের সবাই বলেছেন তারা এই বিবৃতির বিষয়ে কিছুই জানেন না।
যাদের সাথে দ্য ডিসেন্ট যোগাযোগ করেছে তাদের মধ্যে কয়েকজন হলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের নঈম উদ্দিন হাসান আওরঙ্গজেব, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক বশির আহমেদ, সমাজতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক এসএম মনিরুল হাসান, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন নিজামী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক হাবিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. ওমর ফারুক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক সায়েদুর রহমান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ কাফি প্রমুখ রয়েছেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক হাবিবুর রহমান দ্য ডিসেন্টকে বলেছেন, “আমি এই বিবৃতির কিছুই জানি না।”
‘‘অন্য কোনো শিক্ষক এ ধরণের বিবৃতি দিয়েছেন বলেও আমার জানা নেই। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ষড়যন্ত্র বলেই আমি মনে করছি’’, বলেন অধ্যাপক হাবিবুর রহমান।
বেশ কয়েকজন শিক্ষক ইতোমধ্যে ফেসবুকে নিজেদের প্রোফাইলে পোস্ট করে এই বিবৃতির সাথে তাদের সম্পর্ক নেই বলেও জানিয়েছেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফজলুল হালিম
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাবেক প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার অবশ্য স্বীকার করেছেন যে, তিনি এই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন।