Image description
 

অপরাধ দমনে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে পুলিশ। এরপরও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে না। বিশেষ করে সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে আতঙ্কের নগরীতে পরিণত হচ্ছে খুলনা। ঘটছে কোপাকুপি ও গোলাগুলির ঘটনা। এতে চরমভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে নগরবাসী। তবে অপরাধ দমনে পুলিশের জোরালো তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষ।টিসিবির পণ্য কেনার লাইনে দাঁড়ানোকে কেন্দ্র করে গত সোমবার বেলা ১১টায় সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে নগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সহসভাপতি মানিক হাওলাদার নিহত হন। একই দিন সন্ধ্যায় নগরীর সরকারি আযম খান কমার্স কলেজের পাশের সড়কে নওফেল নামে এক ছাত্রদল কর্মীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে রাত সাড়ে ৯টার দিকে প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে সজীব শিকদার নামে আরেক যুবক গুরুতর আহত করা হয়।

 

এর আগে গত শনিবার রাতে নগরীর মিস্ত্রিপাড়ার রসুলবাগ মসজিদের সামনে ২৭ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহীনকে হত্যার উদ্দেশে পরপর কয়েকটি গুলি ছোড়ে সন্ত্রাসীরা। একটি গুলি তার কানে বিদ্ধ হয়ে বের হয়ে গেলেও ডান বুকে বিদ্ধ হওয়া গুলিটি বের করতে পারেননি চিকিৎসকরা। তিনি ঢাকায় চিকিৎসাধীন।গত ২ নভেম্বর রাতে নগরীর শেরে বাংলা রোডের আলকাতরা মিলের পাশে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় রাসেল ওরফে পঙ্গু রাসেলকে। একই রাতে বাড়িতে যাওয়ার পথে কমার্স কলেজের সামনে সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হয় জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান বেলাল।

 

৩০ নভেম্বর রাতে সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি কোপে আহত হন ৩০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য সচিব আমিন হোসেন বোয়িং মোল্লা। চার দিন খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর তার মৃত্যু হয়। ১২ ডিসেম্বর রাতে নগরীর লবণচরা থানা এলাকার একটি ফিলিং স্টেশনের সামনে কুপিয়ে জখম করা হয় রেজা শেখ নামে এক যুবককে। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে শরীর থেকে তার পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ১৩ ডিসেম্বর রাতে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার সময় নগরীর পূর্ব বানিয়াখামার এলাকায় আকাশ নামে এক যুবককে লক্ষ্য করে সন্ত্রাসীরা পরপর কয়েক রাউন্ড গুলি করে। একটি গুলি তার কোমরে বিদ্ধ হয়। এভাবে প্রায় প্রতি রাতেই নগরীর কোথাও না কোথাও ঘটছে কোপাকুপি ও গোলাগুলির ঘটনাসহ চুরি, ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ।

 

নগরীতে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে আজ বুধবার বেলা ১১টায় নগরীর কেডি ঘোষ রোডের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের ডাক দিয়েছে বিএনপি। গত সোমবার সন্ধ্যায় নগরী কেডি ঘোষ রোডের দলীয় কার্যালয়ে এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই সভায় মহানগরীর আইনশৃঙ্খলার অবনতিতে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তারা বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদাসীনতায় নগর জুড়ে সন্ত্রাসীদের রামরাজত্ব কায়েম হয়েছে। গত তিন মাসে নগরীতে ৯টি খুনসহ অসংখ্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটেছেÑ কিন্তু বরাবরই সন্ত্রাসীরা থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

 

নগরীর আইনশৃঙ্খলার অবনতি সম্পর্কে খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মো. বাবুল হাওলাদার বলেন, ৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখনো ঠিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি পুলিশ। এজন্য হয়তো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে।তবে এ খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শেখ মনিরুজ্জামান মিঠু বলেন, মাদক বেচাকেনা-সংক্রান্ত্র বিরোধ এবং এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কিছু কিছু ঘটনা ঘটছে। তবে সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতা দমনে পুলিশের জোরদার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি পুলিশ নিয়মিত চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে।