শ্রীলংকার খাদ্য মূল্যস্ফীতি ডিসেম্বর মাসে মাইনাস দুইয়ে নেমে এসেছে, যা নভেম্বরে মাইনাস ১ দশমিক ৭ ছিল। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশটি সম্প্রতি তার ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে পুনরুদ্ধারের একটি শক্তিশালী ধারা প্রদর্শন করছে।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
দেশটির ন্যাশনাল কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (এনসিপিআই) খুচরা মূল্যস্ফীতির বিস্তৃত চিত্র তুলে ধরে, যা প্রতি মাসে ২১ দিনের ব্যবধানে প্রকাশিত হয়।
খাদ্য ও অন্যান্য খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্য পরিবর্তন
ডিসেম্বর মাসে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি মাইনাস ১ দশমিকে নেমেছে, যা নভেম্বরে শূন্য শতাংশে স্থির ছিল। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যেও মূল্যস্ফীতি সামান্য উন্নতি দেখা গেছে, যেখানে নভেম্বরে মাইনাস ৩ দশমিক ছিল, তা ডিসেম্বর মাসে মাইনাস ২ দশমিক ৯-এ পৌঁছেছে।
বিদ্যুৎ খরচ কমানোর ফলে মূল্যস্ফীতি আগামী ছয় মাসে কম থাকতে পারে। এ মাসের শুরুতে শ্রীলংকা তার গৃহস্থালী বিদ্যুৎ শুল্ক ২০% কমিয়েছে। শিল্প খাতে এই শুল্ক ৩০% এবং পর্যটন খাতে ৩১% পর্যন্ত কমানো হয়েছে, যা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ভবিষ্যতের মূল্যস্ফীতির প্রক্ষেপণ
অ্যাকুইটি স্টকব্রোকার্সের গবেষণা প্রধান শেহান কোরে আশা করছেন, বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ইতিবাচক অঞ্চলে ২ থেকে ৩ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। শ্রীলংকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকও আশা করছে, ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে তারা তাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশে পৌছাতে সক্ষম হবে।
আর্থিক সংকট থেকে পুনরুদ্ধার
২০২২ সালে ডলারের রিজার্ভ সংকটের কারণে শ্রীলংকা ইতিহাসের ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দায় পড়েছিল, যা রেকর্ড মূল্যস্ফীতির দিকে নিয়ে যায়। তবে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ২.৯ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা কর্মসূচি এবং পুনর্গঠনের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে দেশটি উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জন করেছে। ২০২৩ সালে শ্রীলংকার প্রবৃদ্ধি প্রায় ৫ শতাংশে পৌঁছাতে পারে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান জানিয়েছে।
এই পুনরুদ্ধার এবং মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী ধারা দেশের অর্থনীতিকে আরও স্থিতিশীল করার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
দুই অঙ্কের ঘরে বাংলাদেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার
অন্যদিকে ২০২৪ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতির হার বাংলাদেশে এখনো দুই অঙ্কের ঘরেই। এ নিয়ে টানা তিন মাস দুই অঙ্কের মূল্যস্ফীতি হলো। সবমিলিয়ে সাধারণ মানুষ নিত্যপণ্যের বাজারে হিমশিম খাচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব মতে, গত ডিসেম্বর মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এর আগের মাস নভেম্বরে যা ছিল ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। অক্টোবরে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এটা ১২ মাসের গড় হিসাবের ভিত্তিতে তৈরি হয় বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতির তথ্য-উপাত্ত।
আর ডিসেম্বরে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ। আগের মাস নভেম্বরে যা ছিল ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশ। ডিসেম্বরে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে ৯ দশমিক ২৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে। গত নভেম্বরে যা ছিল ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ।