নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালসহ চট্টগ্রাম বন্দরের স্থাপনা বিদেশি কোম্পানির কাছে হস্তান্তর বন্ধে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ), চট্টগ্রাম। সংগঠনের নেতারা বলেছেন, সিদ্ধান্ত না পাল্টালে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি ঘোষণা করবেন তাঁরা।
আজ শনিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরের নতুন বাজার মোড় এলাকায় স্কপের মশালমিছিলের আগে অনুষ্ঠিত সমাবেশে এ কথা বলেন বক্তারা। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন স্কপের যুগ্ম সমন্বয়ক কাজী শেখ নুরুল্লা বাহার।
কাজী শেখ নুরুল্লা বাহার অভিযোগ করেন, চট্টগ্রাম বন্দর সরকারের রাজস্ব আয়ে লাভজনক অবদান রাখা সত্ত্বেও নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ও লালদিয়ায়র চর বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে তুলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। বিনা দরপত্রে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ডকে নিউমুরিং টার্মিনাল হস্তান্তরের উদ্যোগ পতিত আওয়ামী লীগ সরকারই নিয়েছিল। জুলাই বিপ্লবের পর বর্তমান সরকার কেন একই পথে হাঁটছে এর জবাব সরকারকে দিতে হবে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস কে খোদা তোতন, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের (টিইউসি) চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি ও শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য তপন দত্ত, বাংলাদেশ লেবার ফেডারেশন চট্টগ্রাম নগরের সভাপতি তৌহিদ আলম প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে সহস্রাধিক শ্রমিক-কর্মচারী মশালমিছিলে অংশ নেন। নতুন বাজার মোড় থেকে বড়পোল মোড় পর্যন্ত মিছিলটি প্রদক্ষিণ করে। স্কপ নেতারা জানান, ২২ নভেম্বর সকাল ১০টায় চট্টগ্রামে শ্রমিক কনভেনশন অনুষ্ঠিত হবে।
বিদেশিদের হাতে একের পর এক টার্মিনাল ছেড়ে দেওয়া নিয়ে এ বছরের শুরু থেকে নানা সংগঠন আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে আসছে। শুরুতে এনসিটি বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে মাঠে নামে বন্দর জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল। এরপর পেশাজীবী ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো এই উদ্যোগের আপত্তি জানায়। এ ছাড়া বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার জন্য বন্দর মাশুল বাড়ানোর অভিযোগ তুলে চট্টগ্রাম পোর্ট ইউজার্স ফোরামও কর্মসূচি পালন করে।
আন্দোলনের মধ্যেই চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্ব ৩৩ বছরের জন্য বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এই দায়িত্ব পাচ্ছে ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনালস। শিগগির প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার চুক্তি হবে।
গত বুধবার অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভায় টার্মিনালটি নির্মাণ ও পরিচালনায় ৩৩ বছরের জন্য বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়া-সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। এই মেয়াদ আরও ১৫ বছর বাড়ানোর সুযোগ রাখা হয়েছে। ১৭ নভেম্বর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও এপিএম টার্মিনালসের মধ্যে এই চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে।
লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল ছাড়াও ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জের পানগাঁও নৌ টার্মিনালও সুইজারল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান মেডলগ এসএর হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। এখন অপেক্ষা শুধু সরকারি অনুমোদনের। চালু থাকা টার্মিনালটি হস্তান্তরের চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে।
এ ছাড়া নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বা এনসিটি পরিচালনা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে দর-কষাকষি শুরু হয়েছে। আগামী মাসে (ডিসেম্বর) এই টার্মিনালও বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।