দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনরত সহকারী শিক্ষকদের ওপর ‘পুলিশি হামলার’ প্রতিবাদে দেশজুড়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি চলছে।
রোববার সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্কুলে কর্মবিরতির খবর যেমন আসছে, তেমনই অনেক স্কুলে পাঠদানের খবরও মিলছে।
এদিকে তিন দাবিতে আন্দোলনরত সহকারী শিক্ষকরা ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা ‘পুলিশি হামলার’ প্রতিবাদে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দারের পদত্যাগের দাবি তুলেছেন।
আন্দোলনকারীদের প্লাটফর্ম প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ রোববার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আটককৃত শিক্ষকরা এখন শাহবাগ থানায়, তারা ফেরেননি। আমরা অবস্থান কর্মসূচিতে অনড়। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি চালাব।
“তিন দফা দাবি বাস্তবায়ন না করা, শাহবাগে নিরীহ শিক্ষকদের উপর অতর্কিত হামলা, রাবার বুলেট, জলকামান, টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে শত শত শিক্ষককে আহত করার দায় হিসেবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করছি।”
দশম গ্রেডে বেতন ছাড়াও প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের বাকি দুইটি দাবি হচ্ছে—চাকরির ১০ ও ১৬ বছরে উচ্চতর গ্রেড পাওয়া নিয়ে জটিলতা নিরসন এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা।
মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার ওমর ব্যাপারীকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি চলছে বলে জানিয়েছেন স্কুলটির শিক্ষক রেজাউল করিম।
তিনি বলেন, “দাবি আদায় বা কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত লাগাতার ক্লাস বর্জন করে কর্মবিরতি পালন করা হবে। শিক্ষকদের ওপর হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
“তবে শিবচরে সব স্কুলে কর্মবিরতি চলছে না। উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে বারবার খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে কে কে কর্ম বিরতি পালন করছেন, সে বিষয়ে।”
বরিশালের হিজলা উপজেলার পশ্চিম চর বাউশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি চলছে বলে জানিয়েছেন স্কুলটির শিক্ষক মোহাম্মদ হাসান মাহমুদ।
ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার দক্ষিণ তিমিরকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একই উপজেলার বৈদারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করছেন বলে জানিয়েছেন।
এদিকে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের আরেকাংশ ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের’ ব্যানারে একাদশ গ্রেডে বেতন, উচ্চতর গ্রেড নিয়ে জটিলতা নিরসন ও শতভাগ পদোন্নতি নিশ্চিত করতে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারকে সময় বেঁধে দিয়েছেন। এ মোর্চাভুক্ত সংগঠনগুলোর শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করছেন না।
ঢাকার কেরাণীগঞ্জের চারিগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি চলছে না বলে জানিয়েছেন স্কুলটি সহকারী শিক্ষক ও ঐক্য পরিষদের নেতা শাহিনুর আল আমিন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিক্ষকদের উপর ন্যাক্কারজনক হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছি। আহতদের সঙ্গে হাসপাতালে যেয়ে দেখা করেছি ও কথা বলেছি। তবে আমরা কর্মবিরতি পালন করছি না।
“একাদশ গ্রেডে বেতন, পদন্নোতি ও উচ্চতর গ্রেডের জটিলতা নিরসনে ঐক্য পরিষদের আন্দোলন চলমান। ১৫ নভেম্বরের দাবি পূরণ না হলে আমরা ঘোষণা অনুযায়ী ২৩ ও ২৪ নভেম্বর অর্ধদিবস কর্মবিরতি, ২৫ ও ২৬ নভেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং ২৭ নভেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবো। এই সময়ের মধ্যে দাবি আদায়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি বা ঘোষণা না আসলে পরীক্ষা বর্জন এবং ১১ ডিসেম্বর থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করব।”
আন্দোলনরত ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ মোর্চায় রয়েছে—বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (কাশেম-শাহিন), বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (শাহিন-লিপি), বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি ও সহকারী শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ।
এসময় পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড, জলকামান, লাঠি চার্জ, কাঁদুনে গ্যাসে ওই কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায়। দেড় শতাধিক শিক্ষক আহত হওয়ার পাশাপাশি পাঁচজনকে পুলিশ আটক করেছে বলে দাবি শিক্ষক নেতাদের।
যদিও ঢাকা মহানগর পুলিশের ভাষ্য, “আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে একটা দল ব্যারিকেড ভেঙে শাহবাগ মোড় পার হয়ে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করলে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ কয়েক রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান নিক্ষেপ করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।”
পুলিশের বাধার মুখে শহীদ মিনারে ফিরে এসে রোববার থেকে কর্মবিরতির কর্মসূচি ঘোষণা করেন শিক্ষকরা। শনিবার গভীররাতে মোমবাতি প্রজ্বালন করে ‘পুলিশের হামলার’ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।


