Image description

কে হচ্ছেন পরবর্তী অ্যাটর্নি জেনারেল? এ প্রশ্নটি আইনাঙ্গনের বাতাসে ঘুরছে বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন-এমন ঘোষণার পর থেকে। সামনে নাম আসছে অনেকের। বিদ্যমান অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলদের মধ্য থেকে কাউকে এ পদে উন্নীত করা হবে, নাকি নতুন কাউকে নিয়োগ দেয়া হবে? এমন প্রশ্ন এখন সবার মনে।

অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে রয়েছেন, মুহাম্মদ আব্দুল জব্বার ভুঁঞা, মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ, মোহাম্মদ অনীক রূশদ হক। অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়েই কর্মরত রয়েছেন তারা। সুপ্রিম কোর্ট বার থেকে নিয়োগ দেয়ার মতো নাম শোনা যাচ্ছে অনেকের। এর মধ্যে রয়েছেন, ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন, সিনিয়র অ্যাডভোকেট সালাহউদ্দিন দোলন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, অ্যাডভোকেট বিএম ইলিয়াস কচি এবং ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।

অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলদের মধ্য থেকে পরবর্তী অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিয়োগ-সম্ভাবনা প্রশ্নে আলোচনায় রয়েছেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ। একজন বিচক্ষণ আইনজীবী হিসেবে সুপ্রিম কোর্ট বারে আগে থেকেই তার সুনাম রয়েছে। তিনি সাবেক বিচারপতি ও সাবেক সফল প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আব্দুর রউফের পুত্র।

সুপ্রিম কোর্ট বার সূত্র জানায়, ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন বারের সুপরিচিতি সুনামধন্য আইনজীবী। তিনি শেখ মুজিব হত্যা মামলায় আসামি পক্ষে আইনি লড়াই করেছেন। জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলায়ও তিনি ছিলেন আসামিদের আইনজীবী। সর্বশেষ, গ্রামীণ ফোন তথা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসেরও তিনি আইনজীবী। ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ এসব মামলা পরিচালনার কারণে তিনি দেশ-বিদেশে সুপরিচিত। তবে গতবছর ৫ আগস্ট হাসিনা সরকার পালিয়ে যাওয়ার পর ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুনকে একবার অ্যাটর্নি জেনারেল হওয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু তিনি সরকারি চাকরি করবেন না-মর্মে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন বলে জানা যায়। এর পরপরই মো. আসাদুজ্জামানকে অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ দেয় সরকার।
সিনিয়র অ্যাডভোকেট সালাহউদ্দিন দোলন ‘সার্ভিস ম্যাটার’র সংক্রান্ত মামলার জন্য খ্যাতি অর্জন করেছেন। বেশ কিছু মামলার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে তিনি আলোচনার জন্ম দেন। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, ১৭ বছর আগে অনুষ্ঠিত ২৭তম বিসিএস উত্তীর্ণদের নিয়োগবঞ্চিত এক হাজার ১৩৭ জনের চাকরি ফেরত দিতে আপিল বিভাগ থেকে রায় নিয়েছেন তিনি। চাকরিচ্যুত দুদক কর্মকর্তা মো. শরীফউদ্দিনের আইনজীবী তিনি।

সর্বশেষ ফেব্রুয়ারিতে বিএনপি’র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে প্রতীকী ক্ষতিপূরণ প্রদানের পক্ষে আইনি লড়াই চালাচ্ছেন। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সমালোচক সালাহউদ্দিন দোলন সুপ্রিম কোর্টকে বলেন, বিগত দিনে রাষ্ট্রের দুবৃত্তায়ন ও বিচার বিভাগের সীমাহীন অন্যায়-অবিচারের শিকার বেগম খালেদা জিয়াকে প্রতীকী ক্ষতিপূরণ দেয়া উচিৎ।

ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল বিএনপন্থি আইনজীবী হিসেবে পরিচিত। তিনি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম, সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের আহ্বায়ক। দলীয় আদর্শ থাকলেও সকল মত-পথের আইনজীবীদের কাছে তিনি জনপ্রিয়। এ কারণে আওয়ামী সরকারের আমলে ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক নির্বাচিত হন। এ ছাড়া তিনি রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ল’ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন (রুলা) কমিটির আহ্বায়ক। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল রিটের তিনি অন্যতম আইনজীবী। তার গ্রামের বাড়ি জামালপুর মেলান্দহে।
সুপ্রিম কোর্ট বারের সুপরিচিত মুখ অ্যাডভোকেট বিএম ইলিয়াস কচি। তিনি সরাসরি দলীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। তবে ২০১৭-২০১৮ মেয়াদে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলা তিনি পরিচালনা করেছেন। সর্বশেষ তিনি পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর পদে নিয়োগ সংক্রান্ত একটি মামলায় তিনি আলোচনায় আসেন। এ ছাড়া মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’-এ প্রশাসন নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়েরকৃত রিটের আইনজীবী তিনি।

প্রসঙ্গত, গত ৫ নভেম্বর অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে এমপি পড়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন-মর্মে ঘোষণা দেন। জানা গেছে, ঝিনাইদহ-১ আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী তিনি। সম্প্রতি বিএনপি ২৩৭টি আসনে যে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতে ঝিনাইদহ-১ আসনের জন্য কারো নাম প্রকাশ করা হয়নি।

প্রসঙ্গত, মো. আসাদুজ্জামান বাংলাদেশের ১৭তম অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার আমলে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্বপালনকারী (বর্তমানে পলাতক) এএম আমিনউদ্দিনের উত্তরসূরী। ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার শপথ গ্রহণের দিন তাকে বাংলাদেশের প্রধান আইন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।