ঢাকার মোহাম্মদপুরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউল্যাব-এর ছাত্রী তানহা বিনতে বাশারের আত্মহত্যার ঘটনায় প্ররোচনার অভিযোগ তাঁর বন্ধু আনিল ফয়সাল সায়মনের বিরুদ্ধে। পরিবার ও বন্ধুদের অভিযোগ, সায়মনের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনের কারণেই সম্ভাবনাময় তানহাকে অকালে চলে যেতে হয়েছে। তাই এই ঘটনায় অভিযুক্ত সায়মন পালিয়ে যাওয়ার আগে তাঁকে গ্রেপ্তারের দাবি স্বজনদের।
নিহত তানহা বিনতে বাশার কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার কুসুমপুর গ্রামের আবুল বাশার ভূঁইয়ার মেয়ে। অভিযুক্ত বন্ধু সায়মন কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার বনকরা গ্রামের মৃত হেলাল উদ্দিনের ছেলে। তাঁরা দুজনই ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)-এর শিক্ষার্থী।
পরিবার ও তানহার বন্ধুদের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে, প্রথমে অস্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে মামলা হলেও আগামীকাল তানহার পরিবার অভিযুক্ত সায়মনকে দায়ী করে একটি হত্যা মামলা করতে পারে।
“বাবা আমার মন ভালো নেই, তুমি ঢাকায় আসো, আমাকে নিয়ে যাও”—মৃত্যুর আগে শেষবারের মতো এমনই কথা হয় ব্যবসায়ী বাবা আবুল বাশারের সঙ্গে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানহার।
প্রিয় সন্তানের এমন মৃত্যুতে বিমর্ষ আবুল বাশার যেন হারিয়ে ফেলেছেন মুখের ভাষা। তিনি বলেন, “উচ্চ শিক্ষার জন্য মেয়েকে ঢাকায় পাঠাই। কিন্তু বাবার কাঁধে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বোঝা মেয়ের লাশ বইতে হচ্ছে আমার।” তাঁর অভিযোগ, সায়মন নামে এক ছেলে তাঁর মেয়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী।
নিহত তানহার বাবা আবুল বাশার ভূঁইয়া বলেন, “সায়মন বেশ কিছুদিন ধরে আমার মেয়েকে মানসিকভাবে কষ্ট দিচ্ছিল। তার মানসিক নির্যাতন সইতে না পেরে সোমবার দুপুরে তানহা আমাকে ফোন করে জানায় সে শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং তার মন ভালো নেই, তাকে ঢাকা থেকে নিয়ে যেতে। বিকেল সাড়ে ৩টায় সে ফোন করে কান্নাকাটি শুরু করে এবং আমাকে বলছিল সায়মন আমার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করেছে, এটি মেনে নেওয়া আমার পক্ষে কষ্টকর। বাবা, আমার ভুল হলে ক্ষমা করে দিও। এরপর বিকেল সাড়ে ৫টায় বাসায় পৌঁছে দেখি মেয়ের গলায় ফাঁস লাগানো। সে আত্মহত্যা করেছে। আমি প্রশাসনের কাছে মেয়ে হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই। অবিলম্বে সায়মনকে গ্রেপ্তারের দাবি জানাই। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি, তাকে যেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয় এবং আইনের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তার প্ররোচনায়ই আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে।”
আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে আগামী বৃহস্পতিবার সকালে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তানহার বাবা।
নিহতের বড় বোন নুসরাত জাহান বলেন, সায়মন ও তানহার প্রেমের বিষয়টি তাঁরা জানতেন। সর্বশেষ গত ৩ নভেম্বর সকালে সায়মন ও তানহার কথা হয়। ওই সময়েও তানহা বিয়ের বিষয় নিয়ে কথা বলেন। এরই মধ্যে তানহা কেন আত্মহত্যা করেছে এটি তাঁদের জানা নেই।
তানহার সহপাঠীরা জানান, সায়মন ও তানহার বাড়ি কুমিল্লায় হওয়ার সুবাদে কলেজ জীবনেই প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। পরে সায়মন ঢাকার ইউল্যাবে ভর্তি হলে প্রেমিকা তানহাকেও তার সঙ্গে ইউল্যাবে ভর্তি হওয়ার প্রস্তাব দেন। সেই ধারাবাহিকতায় দুজনে ইউল্যাব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন।
অভিযুক্ত সায়মনের বিষয়ে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এমদাদ হাসান ইয়ামিন বলেন, “যেদিন তানহা আত্মহত্যা করে, ওইদিন বিকেলে সায়মন আমাকে কল দিয়ে জানতে চায় তানহার কিছু হয়েছে কিনা। তখন আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি তানহা আত্মহত্যা করেছে। এটা সায়মনকে জানাতেই ও ফোন কেটে দেয়। তারপর থেকে ওর ফোন বন্ধ। লাস্ট আমাকে ও যেটা বলে যে ও ওর কাকার বাসায় চলে গেছে। কিন্তু আমরা কেউ ওর কাকার বাসা চিনি না।”
তানহার মৃত্যুর জন্য সায়মনকে অভিযুক্ত করে ফেসবুক লাইভ করেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং তানহার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী তাসমিম আলম নাগর।
তিনি জানান, সায়মনের সঙ্গে তানহার কয়েক বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্প্রতি সায়মন অন্য মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ালে এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। তানহা সায়মনকে বিয়ে করার চাপ দিলে সে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর তানহা আত্মহত্যা করে। “আমরা এর জন্য সায়মনকে দায়ী করছি। একে গ্রেপ্তার করে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।”
এ বিষয়ে জানতে সায়মনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তার ব্যবহৃত নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী রফিক জানান, “সোমবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিংয়ে স্বপ্নচূড়া ভবনের একটি ফ্ল্যাট থেকে তানহার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, প্রেমঘটিত কারণে তানহা আত্মহত্যা করতে পারেন। ফরেনসিক রিপোর্ট আসার পর বাকি আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হবে।”