Image description

দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক দেখার প্রত্যাশায় সরব ছিল পশ্চিমা অনেক দেশ। পরিবর্তিত বাস্তবতায় ওই দেশগুলো এখন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখার প্রত্যাশার কথা বললেও ‘অংশগ্রহণমূলক’ শব্দটি এড়িয়ে চলছে। অন্যদিকে ভারত এবার বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠুর পাশাপাশি ‘অংশগ্রহণমূলক’ এবং ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা বলছে। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ভারত এবং পশ্চিমা দেশগুলোর এই অবস্থানে দৃশ্যত দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তাদের বক্তব্যের সঙ্গে ভিন্নতা প্রকাশ পাচ্ছে।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা হিসেবে দেখেছিল ভারত। বিএনপির বর্জনের মুখে সেই নির্বাচন পশ্চিমাদের মূল্যায়নে অবাধ ও সুষ্ঠু ছিল না। পরে একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও পূর্ব ও পশ্চিমের দেশগুলোর মন্তব্যের ভিন্নতা ছিল স্পষ্ট।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমাদের ব্যাপক সমালোচনার মধ্যেই সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর সরকারকে পাঠানো বিভিন্ন দেশের শুভেচ্ছা বার্তা পাওয়ার তথ্য প্রচার করেছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

‘নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়’, ‘অনেক দেশেই সব দল নির্বাচনে অংশ নেয় না’, ‘কোনো দলের নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা না নেওয়া ওই দলের নিজস্ব সিদ্ধান্ত’—এমন অনেক যুক্তি তুলে ধরেছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রীরা। অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাহী আদেশে এখন সেই আওয়ামী লীগের কার্যক্রমই নিষিদ্ধ।

আওয়ামী লীগের প্রসঙ্গ এড়াতেই অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের কথা বলা থেকে বিরত থাকছেন কি না—এমন প্রশ্নের আনুষ্ঠানিক জবাব মেলেনি কূটনীতিকদের কাছ থেকে। বিষয়টি স্পর্শকাতর বলেও তাঁরা ইঙ্গিত দিয়েছেন।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গত ২৪ অক্টোবর সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আনতে দেশের ভেতরের বা বাইরের কোনো চাপ নেই।

পশ্চিমা দেশগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া সংস্কার উদ্যোগে জোরালো সমর্থন দিচ্ছে। পাশাপাশি গত বছর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জবাবদিহি নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়ে আসছে।

কূটনীতিকদের সঙ্গে কথা বলে ধারণা পাওয়া গেছে, তাঁদের মৌলিক অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। বাংলাদেশ একটি পরিবর্তন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

কূটনৈতিক মিশনগুলো তাদের দৈনন্দিন কাজের অংশ হিসেবে এ দেশের পরিস্থিতি, সংস্কার উদ্যোগ পর্যবেক্ষণ করছে।

গত বছরের ৫ আগস্ট প্রবল গণ-আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেন। এর পর থেকে তিনি সেখানেই আছেন। শেখ হাসিনার ভারতে উপস্থিতি ও বক্তব্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে ক্ষুব্ধ করলেও নয়াদিল্লির অবস্থান বদলায়নি। শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশ চিঠি পাঠালেও ভারত এখনো কোনো জবাব দেয়নি।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল গত বৃহস্পতিবারও নয়াদিল্লিতে ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ভারত বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়।

গত মাসের শুরুর দিকে নয়াদিল্লি সফরকারী বাংলাদেশি সাংবাদিক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের ম্যান্ডেটে গঠিত যেকোনো সরকারের সঙ্গে ভারত কাজ করতে প্রস্তুত।

বার্তা সংস্থা ইউএনবির প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বড় একটি রাজনৈতিক দল’ ছাড়া নির্বাচনের সম্ভাবনার বিষয়ে জানতে চাইলে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘আমি নিশ্চয়ই বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার মধ্যে ঢুকতে চাই না। এই নির্বাচনগুলোকে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিকভাবে কিভাবে দেখা হচ্ছে সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষ, জনগণ, নাগরিক সমাজ তাদের নিজস্ব মূল্যায়ন করবে।’

বিক্রম মিশ্রির মতে, এটি কেবল অভ্যন্তরীণ বৈধতা নয়, বাইরের ধারণারও বিষয়। এসব সিদ্ধান্তের প্রভাব শুধু বর্তমান নয়, মধ্য থেকে দীর্ঘ মেয়াদে থাকবে। শেষ পর্যন্ত এটি বাংলাদেশের জনগণেরই সিদ্ধান্ত।

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সংস্কার উদ্যোগের জোরালো সমর্থক। ১/১১ পরবর্তী সময়ে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর তার বিবৃতিতে আশা প্রকাশ করেছিল, সংস্কার অব্যাহত থাকবে।

রাষ্ট্রদূত পিটার হাস গত বছর জুলাইয়ে ঢাকা ছাড়ার পর ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের নেতৃত্বে চলছে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত) ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন গত ২ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে বক্তব্যে বলেন, গত বছর ছাত্রদের নেতৃত্বে আন্দোলন বাংলাদেশ রাষ্ট্র পুনর্নির্মাণ ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ভিত্তি গড়ে দিয়েছে। আগামী বছরের শুরুর দিকে বাংলাদেশে ‘অবাধ ও সুষ্ঠু’ নির্বাচনের পথ সৃষ্টিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশে ঐকমত্য সৃষ্টি ও সংস্কার উদ্যোগের প্রচেষ্টাকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে।

গত ২৩ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপকমিটির শুনানিতে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের মনোনীত রাষ্ট্রদূত ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বলেছেন, বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে রয়েছে। ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের ফলে ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা একটি সরকারের পতন ঘটে। বাংলাদেশের জনগণ একটি নতুন সরকার ও একটি নতুন পথ বেছে নিতে আগামী বছরের শুরুতে নির্বাচনে যাবে।

ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন আগামী নির্বাচনকে বাংলাদেশের ‘কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে একটি উজ্জ্বল ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের দিকে যাত্রায় সমর্থন করে। রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনয়ন নিশ্চিত হলে তিনি বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে অন্তর্বর্তী সরকার এবং গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত তার উত্তরসূরি উভয়ের সঙ্গেই দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তুলতে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) দীর্ঘ ১৭ বছর পর বাংলাদেশে পূর্ণমাত্রার নির্বাচন পর্যবেক্ষক মিশন পাঠানোর পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। বিগত নির্বাচনগুলোতে পর্যবেক্ষক না পাঠানোর বিষয়ে ঢাকায় ইইউ দূতাবাস বলেছিল, প্রতিবছর বিশ্বের অনেক দেশেই নির্বাচন হয়। সব নির্বাচনে তারা পর্যবেক্ষক পাঠায় না। পর্যবেক্ষক পাঠালে নির্বাচনে কী প্রভাব পড়তে পারে তা বিবেচনায় নেওয়া হয়।

ইইউ দূতাবাস জানিয়েছে, গত সপ্তাহে ঢাকায় ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতে গণতান্ত্রিক রূপান্তর, নির্বাচন প্রস্তুতি, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে ইইউর সহযোগিতা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, অভিবাসন ও বহুপক্ষীয়তা বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

ইইউ দূতাবাস গতকাল রবিবার ফেসবুক বার্তায় বলেছে, চলমান রাজনৈতিক রূপান্তরের গুরুত্ব এবং সংস্কার, নির্বাচন, বিনিয়োগ ও বহুপক্ষীয়তার মতো বিষয়ে কিভাবে বাংলাদেশে ইইউ ও জাপানের মতো সমমনা অংশীদাররা একসঙ্গে কাজ করতে পারে সে বিষয়ে চমৎকার আলোচনা হয়েছে।

কানাডা অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ রূপান্তরের কথা বলছে। একই সঙ্গে গণতান্ত্রিক সংস্কারের ওপরও জোর দিচ্ছে দেশটি।

কমনওয়েলথ প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক মিশনের সফর নিয়ে গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশন এক্স বার্তায় বলেছে, ‘যুক্তরাজ্য বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে উৎসাহিত করে।’

ফ্রান্স সত্যিকারের গণতান্ত্রিক নির্বাচনের প্রত্যাশা জানিয়েছে। ঢাকায় জার্মান রাষ্ট্রদূত রুডিগার লত্জ গত ২৩ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, বহুদল অংশগ্রহণ করতে পারে বাংলাদেশে এমন একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন দরকার। অস্ট্রেলিয়া অবাধ, সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকারকে সমর্থন করে।

বাংলাদেশে স্থিতিশীলতার ওপর গুরুত্বারোপ করছে চীন। গত ২৭ অক্টোবর চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের সঙ্গে বৈঠকের পর এবি পার্টির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বিশ্বাস করেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন ছাড়া দেশ তার স্থিতিশীলতা হারাবে এবং ফ্যাসিবাদী শাসনের পরে অন্তর্বর্তী সরকার যে অর্থনৈতিক ভিত্তি পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে তা বিঘ্নিত হতে পারে।

এবি পার্টির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন আশা করেন, ফেব্রুয়ারিতে ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তর এবং সেখানে জনগণের ইচ্ছা কার্যকরভাবে প্রতিফলিত হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় চীন পাশে থাকতে অঙ্গীকারবদ্ধ।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে সংঘটিত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো তদন্ত করেছে জাতিসংঘ। ঘটনাগুলোর বিষয়ে জবাবদিহি নিশ্চিত করতেও জাতিসংঘের তাগিদ রয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলোও একে সমর্থন করছে।

সিভিকাস, কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে), ফর্টিফাই রাইটস, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ), রবার্ট এফ. কেনেডি হিউম্যান রাইটস এবং টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট নামের ছয়টি মানবাধিকার সংগঠন গত ১৯ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে লেখা একটি চিঠি প্রকাশ করে। ওই চিঠিতে বলা হয়, গত ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘ প্রকাশিত প্রতিবেদনে শীর্ষস্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য উঠে এসেছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধকরণ প্রসঙ্গে সুপারিশে বলা হয়েছে, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত, রাজনৈতিক দলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ থেকে বিরত থাকা। এটি (রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা) প্রকৃত বহুদলীয় গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনকে ক্ষতিগ্রস্ত এবং কার্যকরভাবে বাংলাদেশি ভোটারদের একটি বৃহৎ অংশকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করবে।’

সেই সুপারিশের কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহবান জানিয়েছে ওই ছয় মানবাধিকার সংস্থা। তবে ওই আহবানসংবলিত চিঠির বিষয়ে কোনো ধরনের প্রতিবাদ বা সরকারি বিবৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। গত ২১ অক্টোবর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, প্রত্যেকেই তাদের নিজ নিজ কাজ করে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো তাদের দায়িত্ববোধ থেকে কথা বলছে। সরকারের পক্ষে সবকিছু মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। তবে যদি কোনো মানবাধিকার সংস্থা উদ্বেগ প্রকাশ করে, সরকার সেটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে এবং সম্ভব হলে পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

তিনি আরো বলেন, সব পক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি এক নয়। তাই তাদের মতামতের ভিত্তিতে সরকার কাজ করবে কি না, সেটি প্রাসঙ্গিকতা অনুযায়ী বিবেচিত হবে।

অতীতের তুলনায় এবার বিদেশিদের অবস্থানে কিছুটা পার্থক্য আছে বলে মনে করেন সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, পার্থক্যটা সূক্ষ্ম। যেমন—পাশ্চাত্য জগৎ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া—তারা জনগণের অংশগ্রহণকেই প্রাধান্যের তালিকায় রেখেছে। তারা চায় জনগণ অংশগ্রহণ করলেই সেটি গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন হবে। এ কথা ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কও বলেছেন।

হুমায়ুন কবির বলেন, ভারতের দিক থেকে দেখলে, ভারত ‘ইনক্লুসিভ’ বা অন্তর্ভুক্তিমূলক বলতে হয়তো আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের কথা বলছে। এখনকার বাস্তবতায় সেটা কতটা সম্ভব বলা মুশকিল!

হুমায়ুন কবির আরো বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ধরলে আমার ধারণা, পাশ্চাত্য জগৎ, চীন, রাশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, অর্থাৎ ভারত ছাড়া প্রায় সবাই জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে ভয়ভীতিমুক্ত, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তা তারা গ্রহণ করবে।