Image description

মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য সম্ভাব্য আসন রেখে আজ চূড়ান্ত হতে পারে বিএনপির একক প্রার্থী তালিকা। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের হাতে তুলে দেওয়া হতে পারে এ তালিকা; আসতে পারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও। এ জন্য আজ সোমবার গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে এ বৈঠক শুরু হবে। এরপর সাংগঠনিক টিমের সদস্যদের নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। উভয় বৈঠকেই দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি অংশ নেবেন। যদিও কী কারণে এ বৈঠকÑ স্থায়ী কমিটি বা সাংগঠনিক টিমের সদস্যদের তা জানানো হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

বিএনপির অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক মাস ধরে দলের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে তিনশ আসনে অন্তত ৫টি জরিপ চালান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এরপর তিনি সাংগঠনিক টিমের মতামত নেন। যেখানে বেশি সংকট মনে হয়েছে, সেখানে নিজে অথবা স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মাধ্যমে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করার চেষ্টা করেন। সর্বশেষ, গত ২৬ ও ২৭ অক্টোবর বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে তিনশ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠক করেন তারেক রহমান।

এই বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী জানান, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা বলেছেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হবে। যাকে দল মনোনয়ন দেবে, তার পক্ষে কাজ করার জন্যও সবাইকে নির্দেশনা দেন তারেক রহমান।

গত অক্টোবর মাসেই কমবেশি ২শ আসনে একক প্রার্থী ঘোষণা দেওয়ার কথা ছিল বিএনপির। দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদও এমন কথা বলেছিলেন। কিন্তু গতকাল ২ নভেম্বর পর্যন্ত একক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২৮ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ বাস্তবায়নের জন্য তাদের সুপারিশ সরকারের হাতে তুলে দেয়। কিন্তু বিএনপিসহ ২৫টি রাজনৈতিক দল যে সনদে স্বাক্ষর করেছে, জমা দেওয়া সনদের সঙ্গে এর অনেক গরমিল ছিল। এ কারণে চরম ক্ষুব্ধ হয় বিএনপি। গত মঙ্গল ও বুধবার দুই দফা স্থায়ী কমিটির নেতাদের নিয়ে তারেক রহমান বৈঠক করেন। সেখানে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি।

দলের স্থায়ী কমিটির নেতারা মনে করেন, এ নিয়ে রাজপথে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালে তৃতীয় কোনো পক্ষ সুযোগ নিয়ে নির্বাচন বানচাল করতে পারে। এ কারণে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দলের অবস্থান জানানো হয়। বিএনপি নেতারা মনে করেন, এসব কারণে গত মাসে একক প্রার্থী ঘোষণার কথা থাকলেও সেটা সম্ভব হয়নি। এই অবস্থায় আজ সোমবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক আহ্বান করেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। বৈঠকে দেশের চলমান পরিস্থিতি পর্যালোচনাসহ একক প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে বলে জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য। এর বেশি কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।

স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর দলের সাংগঠনিক টিমের বৈঠক ডাকা হয়েছে। এ বৈঠকে ডাক পাওয়া চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহেবুবুর রহমান শামীম এবং বরিশাল বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান জানান, আজ সোমবার বেলা আড়াইটায় গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে তাদের থাকতে বলা হয়েছে।

জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, একক প্রার্থী তালিকা দ্রুতই ঘোষণা হতে পারে। তবে সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়নি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জরুরি ভিত্তিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে লন্ডনে ডেকেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। যদিও কী কারণে তাকে সেখানে ডাকা হয়েছে, তা জানা যায়নি।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ কেউ মনে করছেন, জুলাই সনদ নিয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হতে পারে তারেক রহমানের। দলের গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা বলেন, ৫ আগস্টের পর সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে জামায়াত-সমর্থিত ব্যক্তিরা বসে গেছেন। এ অবস্থায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলে জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে বিএনপিরই সরকার গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে চিহ্নিত জামায়াতপন্থিরা প্রশাসন থেকে বাদ পড়া স্বাভাবিক। নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়া মানে প্রশাসনে জামায়াতের শক্ত অবস্থান ধরে রাখা। এ অবস্থায় বাংলাদেশে সংবিধান সংস্কারসহ ৪৮ দফা প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যেসব সুপারিশ করেছে, এতে বিএনপি কিছুটা বিপাকে পড়লেও মাথা ঠাণ্ডা রেখে পথ চলতে চাইছে যেন কোনো অবস্থাতেই নির্বাচন পিছিয়ে না যায়। এ নিয়েও সালাহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ঐকমত্য কমিশন যা করেছে তা বিএনপিকে নয়, পুরো জাতিকেই বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে। তার মতে, সরকারের উচিত কমিশনের সুপারিশে সংশোধনী এনে এর ফয়সালা করা। কিন্তু সরকার বা কমিশনের এ কৌশলে বিএনপি চাপে পড়েছে কি-না কিংবা রাজনৈতিকভাবে কিছুটা বেকায়দায় পড়েছে কি-না সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।

বিএনপির সমমনা রাজনৈতিক দল বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, কমিশনের সুপারিশ নিয়ে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর মধ্যে অস্বস্তি ও রাজনৈতিক দুশ্চিন্তা আছে যে, কাদের জন্য এমনটা করেছে কমিশন। তবে এটা হচ্ছে সুপারিশ মাত্র। সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। সরকারের সিদ্ধান্ত দেখার পর বিএনপিসহ আমরা পরবর্তী করণীয় ঠিক করব।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, এতে বিএনপির বেকায়দায় বা বিপাকে পড়ার কিছু নেই। কারণ জুলাই সনদের বিষয়ে দলটি তার অবস্থান আগেই পরিষ্কার করেছে। গত শনিবার এক অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের কথা খুব পরিষ্কার, আমরা যেটা সই (জুলাই জাতীয় সনদ) করেছি, আমরা সেটার দায়দায়িত্ব গ্রহণ করব। কিন্তু যেটা আমরা সই করিনি, সেটার দায়দায়িত্ব আমরা গ্রহণ করব না। আমরা চাই, এসব বিষয় আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হোক।’