Image description

প্রতারক ও পেশাদার অপরাধীরা অন্যের নামে রেজিস্ট্রেশন করা সিম দিয়ে মোবাইল ব্যবহার করেও গ্রেপ্তার এড়াতে পারছে না। তাই গ্রেপ্তার এড়াতে তারা প্রযুক্তিমুক্ত নেটওয়ার্ক গড়ে তুলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী রাহিনীকে বোকা বানাচ্ছে!

অপরাধীদের বিশ্বাস, মোবাইল না থাকলে তাদের গ্রেপ্তার হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। এজন্য পেশাদার চোর ও আন্তজেলা ডাকাতচক্র নিজেদের মধ্যে প্রযুক্তিমুক্ত নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছে। যেখানে রেকি করা সদস্যরা মৌখিকভাবে টার্গেট লোকেশন বলে আসছে। আর যারা চুরি ও ডাকাতির অপারেশনে অংশ নিচ্ছে তারা ইলেকট্রনিক ডিভাইস বা প্রযুক্তিমুক্ত থাকছে। এ ছাড়া অনেকে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে মোবাইল বন্ধ করে দিচ্ছে। এতে অপরাধী গ্রেপ্তারে রীতিমতো বেগ পেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।

গোয়েন্দা সূত্র বলছেন, রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ ও মাদারীপুরের ডাকাতরা নিজেদের মধ্যে জোট গড়ে তুলেছে। এ চক্রের সদস্যের সংখ্যা ৩০-এর মতো। যারা প্রত্যেকেই একাধিক চুরি ও ডাকাতি মামলার আসামি। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রেকি করার পর চক্রের সদস্যরা টার্গেট করা দোকান বা বাসার নিকটস্থ কোনো এক জায়গায় মিলিত হন। যে জেলার দলনেতা লোকেশন ঠিক করতেন, তার বিশ্বস্ত একজন লোক ঘটনাস্থলে গিয়ে নিশ্চিত হন সেখানে চক্রের সদস্য ছাড়া আর কেউ আছে কি না। এরপর দলনেতারা গিয়ে যুক্ত হন। কোনো কারণে রেকি করা বাসা বা দোকানে ডাকাতি করতে ব্যর্থ হলে মহাসড়কে ডাকাতি করে পালিয়ে যান চক্রের সদস্যরা। আর কেউ গ্রেপ্তার হলে তার জামিনেও ভূমিকা রাখেন সংশ্লিষ্ট জেলার দলনেতা। সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরা থেকে আন্তজেলা ডাকাতদলের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ডিবি ওয়ারী বিভাগ। ডাকাতরা হলেন আবদুল জব্বার, মামুন হোসেন, সোহাগ, আবু বক্কর ও রুহুল আমিন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে ২০ সদস্যের ডাকাতদল গঠনের কথা জানতে পারে ডিবি পুলিশ। যারা গ্রেপ্তার এড়াতে ডাকাতিতে নেমে মোবাইল ব্যবহার এড়িয়ে চলেন।

এদিকে ৮ অক্টোবর রাজধানীর মৌচাকের ফরচুন শপিং মলের শম্পা জুয়েলার্স থেকে ৫০০ ভরি সোনা চুরি করেন বোরকা পরা দুই চোর। এ ঘটনার পর চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার করা হয় ১৯০ ভরি সোনা। গ্রেপ্তারদের মধ্যে শাহিন মাতবর ও পলাতক থাকা শৈশব রায় বোরকা পরে চুরি করেন। আর দোকানটি রেকি করেন মো. নূরুল ইসলাম ওরফে নুরুদ্দিন। রেকি করার খরচ বহন করেন উত্তম চন্দ্র সুর ওরফে কানা উত্তম। তিন মাস ধরে ৩১ বার সরেজমিন ওই দোকান রেকি করে চোরচক্রটি। রেকি থেকে চুরি পর্যন্ত কোনো বিষয়েই মোবাইল ফোন ব্যবহার করেননি তারা। চুরির মালামাল ভাগাভাগি করার পর নতুন মোবাইল ও সিমকার্ড কিনেছিলেন। এমনকি শাহিন মাতবর তার বিরুদ্ধে থাকা পাঁচটি মামলার তথ্য গোপন করে সাহিদ মাতবর নামে ভুয়া এনআইডি কার্ডও তৈরি করেছিলেন। তার মতো অনেক অপরাধীই মামলার তথ্য গোপন রাখতে ভুয়া এনআইডি তৈরি করছেন বলে জানা গেছে। অন্যদিকে চোরচত্রু মোবাইল ব্যবহার না করায় অনেক আসামি শনাক্তের পরেও অধরা থেকে যাচ্ছেন।

৫ অক্টোবর রাতে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় রায়হান সুপার মার্কেটের দ্বিতীয় তলার ‘লিলি গোল্ড হাউজ’ থেকে ১২৫ ভরি সোনা চুরি করা হয়। এ ঘটনার মূলহোতা রাসেল মিয়া মোবাইল ব্যবহার শুরু করে গ্রেপ্তার হন। পরে নিজেদের মোবাইল বন্ধ করে তার দুই সহযোগী লাপাত্তা হয়ে যান। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন, চোরেরা অন্যের নম্বর দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ খুলে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতেন। ঘটনার দিন তাদের সবার মোবাইল বন্ধ রেখেছিলেন। অপরাধীদের প্রযুক্তিমুক্ত থাকার বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অপরাধী প্রযুক্তি ব্যবহার না করলে তাকে আইনের আওতায় আনতে কিছুটা চ্যালেঞ্জ থাকলেও তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কারণ অপরাধ সংঘটনের সময় এমন কিছু ক্লু রেখে যায়, যার মাধ্যমে আমরা রহস্য উদ্ঘাপন ও জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে পারি। ২০-২২ বছর আগে যখন মোবাইলের প্রচলন তেমন ছিল না, তখনো কিন্তু অপরাধীরা আইনের আওতায় এসেছে। আর বর্তমানে ডিভাইস ছাড়াও সিসি ক্যামেরার ফুটেজের সহায়তাও পাওয়া যাচ্ছে।’