সামনে রমজান। ওই সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের বাড়তি চাহিদা মেটাতে এখনই আমদানি ঋণপত্র খুলতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে ডলারের চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে। যার প্রভাবে দরও কিছুটা বাড়তি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ঋণপত্র (এলসি) খোলার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬.৩০ বিলিয়ন ডলার, যা আগস্টের ৫.৩৮ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় ১৭.২৯ শতাংশ বেশি। আমদানি চাপ বাড়ার সঙ্গে ডলারের দামও বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র বলেন, ‘রমজানকে কেন্দ্র করে এলসি খোলা বাড়ায় ডলার চাহিদা বেড়েছে। তাই বাজার থেকে ডলার কেনা আমরা আপাতত বন্ধ রেখেছি, যাতে ব্যাংকগুলো আন্ত ব্যাংক লেনদেনের মাধ্যমে চাহিদা মেটাতে পারে।’ তিনি আরো বলেন, ডলারের দাম এখন বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি মূলত জোগান বৃদ্ধির কারণে হলেও বিনিয়োগ স্থবির থাকায় এই প্রবৃদ্ধি দীর্ঘ মেয়াদে স্থায়ী নাও হতে পারে। বর্তমান রিজার্ভ বৃদ্ধি চাহিদা কমে যাওয়ার প্রতিফলন, যা অর্থনীতির প্রাণশক্তি বৃদ্ধি নয়।
ড. জাহিদ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার গুরুত্ব তুলে ধরে আরো বলেন, এখন সবচেয়ে বড় ঝুঁকি রাজনৈতিক অস্থিরতা। বিনিয়োগকারীরা সব সময় স্থিতিশীলতা চান। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সহিংসতা দেখলেই পিছিয়ে যাবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এলসি খোলার তথ্য দেখায় যে আমদানির চাপ বাড়তে শুরু করেছে। ২০২৫ সালের জুলাইয়ে এলসি খোলা হয় ৫.৯২ বিলিয়ন ডলার, যা আগস্টে কিছুটা কমে ৫.৫৫ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। তবে সেপ্টেম্বরে নতুনভাবে বৃদ্ধি পেয়ে এলসি খোলার পরিমাণ দাঁড়ায় ৬.৩০ বিলিয়ন ডলারে। এই প্রবণতা আগামী মাসগুলোতে পণ্য আমদানি আরো বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত দিচ্ছে।
আমদানির চাপ মোকাবেলা করার প্রধান হাতিয়ার রপ্তানি আয় এবং রেমিট্যান্স। রপ্তানি খাতে জুলাইয়ের তুলনায় পরবর্তী মাসগুলোতে নিম্নগতি লক্ষ করা গেছে। জুলাই মাসে রপ্তানি আয় ছিল ৪.৭৭ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু আগস্টে তা কমে ৩.৮৮ বিলিয়ন ডলার এবং সেপ্টেম্বরে আরো কমে ৩.৬০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়। রপ্তানির এই পতন বৈদেশিক আয়ে চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং নীতিনির্ধারকদের জন্য উদ্বেগের বিষয়।
তবে রেমিট্যান্সের তথ্য তুলনামূলকভাবে ইতিবাচক। ২০২৫ সালের জুলাইয়ে রেমিট্যান্স ছিল ২.৪৭ বিলিয়ন ডলার, আগস্টে সামান্য কমে ২.৪২ বিলিয়ন ডলারে নামলেও সেপ্টেম্বরে আবার বৃদ্ধি পেয়ে ২.৬৮ বিলিয়ন ডলার হয় এবং অক্টোবরেও শক্তিশালী অবস্থানে থেকে ২.৫১ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসে। রেমিট্যান্সের এই ধারাবাহিকতা রিজার্ভ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি (বিপিএম-৬)। এটা দিয়ে পাঁচ মাসেরও বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। তবে চাপ বাড়লে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিকল্পনা রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৫ সালে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। জুলাই মাসে দেশের গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৯.৭৯ বিলিয়ন ডলার, যা আগস্টে বেড়ে দাঁড়ায় ৩১.১৬ বিলিয়ন ডলারে। সেপ্টেম্বর মাসে রিজার্ভ আরো বৃদ্ধি পেয়ে ৩১.৪২ বিলিয়ন ডলার এবং অক্টোবর মাসে ৩২.১৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। তুলনামূলকভাবে ২০২৪ সালে একই সময়ের রিজার্ভ ছিল উল্লেখযোগ্যভাবে কম—জুলাইয়ে ২৫.৮২, আগস্টে ২৫.৫৮, সেপ্টেম্বরে ২৪.৮৬ ও অক্টোবরে ২৫.৪৮ বিলিয়ন ডলার। এতে প্রমাণ হয়, এক বছরে রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় উন্নতি এসেছে এবং বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী হয়েছে।